জেনে নিন-সিজারের পর কোমর ব্যাথার কারণ ও সমাধান

সিজারের পর কোমর ব্যাথার কারণ ও সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-

             
সিজারের পর কোমর ব্যাথার কারণ ও সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
সিজারের পর কোমর ব্যাথার কারণ ও সমাধান

গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারণে গর্ভের সন্তানের সুরক্ষার জন্য চিকিৎসকরা সিজার বা অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে ডেলিভারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সিজারিয়ান অপারেশনের পর সন্তান সুস্থ থাকলে অনেক সময় অধিকাংশ নারীদেরই কোমরে ব্যাথা, তলপেটে ব্যাথা, পিঠে ব্যাথা সমস্যা ঘটতে দেখা যায় সি-সেকশনের পর ধরণের সমস্যা ঘটাটা স্বাভাবিক। অপারেশনের পর কোমরে ব্যথা, পিঠে ব্যাথা হওয়ার স্পেসিফিক কোন কারণ নেই, বিভিন্ন কারণে এই ব্যথা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শারীরিক পরিবর্তনের কারণে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। অধিকাংশ নারীর কাছে এই ব্যথার আসল কারণ প্রতিকারের উপায় গুলো অজানা রয়েছে যার ফলে তাদের শরীরে এই সমস্যা বাড়তে থাকে এবং আস্তে আস্তে দীর্ঘস্থায়ী ব্যধিতে পরিণত হয়। প্রসব পরবর্তী ব্যথার কারণ প্রতিকারের উপায় সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। 

এখন আসুন আমরা সিজারের পর কোমর বা পিঠে  ব্যথা হওয়ার কারণ এবং প্রতিকারের উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নেই,

সিজারের পর কোমর ব্যথা বা পিঠে ব্যথার কারণ

সি-সেকশনের পর আপনার কোমর ব্যথা বা পিঠে ব্যথা কয়েকটি কারণে হতে পারে। কারণ গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো


                             কী কারণে সিজারের পর কোমর ব্যথা বা পিঠে ব্যথা হতে পারে ?



হরমোনাল পরিবর্তন :

গর্ভাবস্থা চলাকালীন সময়ে পেট বড় হওয়ার সাথে সাথে আরো অনেক শারীরিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। সময় বিশেষ করে মাংসপেশিতে একটা বড় পরিবর্তন হয়ে থাকে। মূলত হরমোনাল পরিবর্তনের কারণেই মাংসপেশিতে এই সমস্যা ঘটে থাকে। গর্ভাবস্থার সময় সন্তান প্রসব করানোর জন্য এক ধরনের প্রেগন্যান্সি হরমোন রিলিজ হয়। যেটা আপনার লিগামেন্ট জয়েন্টকে নরম করতে সাহায্য করবে। এর ফলে সহজে সন্তান প্রসব হবে।

এই সময় মাসেল, লিগামেন্ট, জয়েন্ট নরম থাকার কারণে আপনার পেশিতে হালকা আঘাত বা টান পরলেই ব্যথা অনুভূত হতে পারে যার জন্য  সি-সেকশনের পরে আপনার কোমর এবং পিঠে ব্যথার সমস্যা হতে পারে।

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া :

অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন গেইন করেন বা স্থূলতার সমস্যায় ভুগেন তাহলে এই স্থূলতার কারণে আপনার শরীরের গঠনে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। যা সিজারের পরে আপনার কোমরে ব্যাথা, পিঠে ব্যাথা হওয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। ওজন বাড়ার ফলে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে? জেনে নিন, কীভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন

জরায়ু বড় হয়ে যাওয়া

গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে যদি আপনার জরায়ু বড় হয়ে যায় তাহলে তলপেটের কোমরের পেশিতে স্ট্রেস বা  চাপ পড়তে পারে। এর ফলে আপনার কোমর পিঠের মাসেল যন্ত্রণা বা ব্যথা করতে পারে।

সামনে ঝুঁকে শিশুকে দুধ খাওয়ালে :

সিজারিয়ান অপারেশনের পরে যখন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হয় তখন যদি আপনি দীর্ঘ সময় ধরে বসে শিশুকে দুধ খাওয়ান অথবা সামনের দিকে ঝুঁকে ঝুঁকে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান তাহলে সময় আপনার পিঠ এবং কোমরের পেশিতে স্ট্রেস বা চাপ পড়তে পারে। যার ফলে আপনার কোমর ব্যাথা বা পিঠে ব্যাথা হতে পারে।

পড়ুন :

 গর্ভাবস্থায় পেটে টান টান বা শক্ত অনুভূত হওয়ার কারণ ও করণীয়

           

বাচ্চা কোলে তুললে :

ডেলিভারির পরে বাচ্চা কোলে নেয়ার সময় যদি আপনি সামনের দিকে ঝুঁকে বার বার শিশুকে নিচ থেকে কোলে তুলেন তাহলে আপনার সেলাইয়ের জায়গায় অর্থাৎ কোমর এবং পিঠের মাসেলে বার বার স্ট্রেস বা টান পরতে পারে। যার ফলে আপনার মাসেল ইনজুরি হতে পারে। আর এই সব ছোটখাট ভুলের কারণেই সি-সেকশনের পরে আপনার  পিঠ এবং কোমরের পেশিতে ব্যাথা হতে পারে।

অ্যানেস্থেশিয়া :

অ্যানেস্থেশিয়ার কারণে সি-সেকশনের পরে আপনার পিঠ এবং কোমরের পেশিতে ব্যথা হতে পারে। সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য চিকিৎসক আপনার সুষুম্না কান্ডে এক ধরণের ইনজেকশন দিয়ে থাকেন যার নাম হল ইপিডুরাল। অপারেশনের জায়গা টুকুকে অবচেতন করার জন্যই ডাক্তাররা এই ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকেন। এই ইনজেকশনের প্রধান সমস্যা হল Muscle Spasm যার ফলে সিজারের পর আপনার পিঠে এবং কোমরে যন্ত্রণা বা ব্যথা হতে পারে।

কীভাবে  সিজারিয়ান ব্যথা প্রতিকার করবেন ?

ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি অল্প সময়ের মধ্যেই সিজারিয়ান ব্যথা প্রতিকার করা যায়। উপায় গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

ঊষ্ণ বা গরম পানিতে গোসল করা :

ডেলিভারীর পরে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা যাবে না। কারণ ঠান্ডায় পেশিগুলো শিথিল হয়ে পড়ে। এতে করে আপনার ব্যথার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। তাই সি-সেকশনের ব্যথা প্রতিকার করতে হলে নিয়মিত ঊষ্ণ বা গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন। এতে করে আপনার পেশিগুলো রিলাক্স থাকবে। যার ফলে আপনার সিজারিয়ান কোমর ব্যাথা, পিঠে ব্যাথার ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।

বডির পজিশন ঠিক রেখে কাজ করা :

অপারেশনের পরে সিজারিয়ান কোমর ব্যথা, পিঠে ব্যথার ঝুঁকি কমাতে হলে আপনাকে বডির পজিশন ঠিক রেখে কাজ করতে হবে। সময় সামনের দিকে ঝুঁকে কোন কাজ করা যাবে না। কারণ আপনি যদি সামনে ঝুঁকে বাঁকা হয়ে শিশুকে নিচ থেকে কোলে নেন কিংবা ভারী কিছু নিচ থেকে উপরে তোলেন তাহলে আপনার কোমরের উপর স্ট্রেস বা চাপ পড়তে পারে। এতে করে আরও বেশি সমস্যা হতে পারে। জন্য শিশুকে দুধ খাওয়াতে হলে সব সময় সোজা হয়ে বসে দুধ খাওয়াবেন এবং কোলে তুলার সময় হাঁটু ভাঁজ করে সোজা হয়ে বসে বাচ্চাকে কোলে তুলবেন। এর ফলে আপনার কোমরের উপর স্ট্রেস কম পড়বে। 

জেনে নিন- প্রথম সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কি না ?

ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা :

                             সিজারের পর ব্যায়াম করা
                                                                  ছবি :সংগৃহিত

সিজারিয়ান ডেলিভারির পরে যদি আপনি ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ না করে সারাদিন ঘরে বসে থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার পিঠ কোমরের পেশিগুলোতে ঠিকমত রক্ত চলাচল করতে পারে না। এরপর হঠাৎ উঠে যখন আপনি কোন কাজ করতে যান তখন পেশিগুলোতে টান খেলে আপনার ব্যথা লাগতে পারে। এজন্য গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে এবং সিজারের পরে আপনার মাংসপেশি গুলোকে সবল রাখার জন্য অবশ্যই প্রতিদিন সকালে হালকা শরীর চর্চা করতে হবে। ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা স্ট্রেচিং, কিগল এক্সারসাইজ প্রভৃতি শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন। 

বিশ্রাম নেয়া :

 অধিকাংশ নারীরাই ডেলিভারির পরে বাচ্চার যত্ন নেওয়ার জন্য নিজের যত্নের কথা ভুলে যান। যার জন্য মূলত ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। সি-সেকশনের পরে আপনার শরীরের রিকভারীর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এজন্য অপারেশনের পরে আপনাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। তাহলে আপনার সারাদিনের ক্লান্তি বা অবসাদ দূর হয়ে যাবে। এর ফলে কোমরের ব্যাথা বা পিঠে ব্যাথার প্রবণতা অনেক কমে যাবে।

প্রয়োজনে পড়তে পারেন :

শিশুর বয়স এক বৎসর পার না হলে কোন কোন খাবার দেওয়া যাবে না?

ঘুম থেকে ওঠার পর হঠাৎ মাথা ব্যথা কেন হয়? সাম্ভবব্য ৫ টি কারণ জেনে নিন

যে সব ‍বিষয় অবলম্বন করলে আপনি মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারেন ?

অবশেষে আমরা বলতে পারি যে,

সিজারিয়ান ডেলিভারির পর কোমর এবং পিঠে যন্রণা বা ব্যথা করা প্রতিটি নারীর কাছেই অত্যন্ত কষ্টকর অনূভুতি। আর এই ব্যথা পুষে রাখলে তা আপনার জন্য আরও ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ যখন এই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তখন ব্যথা থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ আপনাকে ঘিরে ধরতে পারে যা পরবর্তীতে মারণ ব্যাধিতে পর্যন্ত পরিণত হতে পারে। তবে আপনি সময় থাকতে যদি এই ব্যথার চিকিৎসা করান তাহলে দ্রুত এই ব্যথা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন। তাই সিজার পরবর্তী কোমর এবং পিঠে ব্যথা দ্রুত নিরাময় করতে হলে আপনাকে উপরিউক্ত ব্যথার কারণগুলো বিশেষ নজরে রাখতে হবে এবং সময় থাকতে উক্ত প্রতিকারের উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে গুরুতর ব্যথা হলে হেলাফেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


Post a Comment

Previous Next