গর্ভাবস্থায় পেট টান-টান বা শক্ত হলে করণীয় বিস্তারিত
গর্ভাবস্থায়
একজন নারী শারীরিক বিভিন্ন অস্থিরতা
অনুভব করে থাকেন। এটি
বিভিন্ন কারণেও
হতে পারে।গর্ভাবস্থা তার নিজের সাথে
করে একজন নারীর জন্য
প্রচুর পরিমাণে
অদ্ভুত উপসর্গ নিয়ে হাজির হয়–মাথা ব্যাথা, বমি,হাতে পায়ে ব্যাথা,
হাত পা ফোলা,মাথা
ঘোরা,খেতে না পারা
ইত্যাদি। এর
ভিতর প্রধান এবং অন্যতম হল
পেট চাঞ্চল্যকর
সংবেদন। যদি আপনি গর্ভবতী
হন, তবে অবশ্যই
কিছু দিন,আপনার পেটে
টানটান অনুভব করবেন যা কিনা আপনার
জন্য শুধু একটি ঝামেলার
অভিজ্ঞতা হবে মাত্র।
গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথা এবং যন্ত্রণা হওয়ার সাথে বিভিন্ন অনুভূতি হতে পারে।তার মাঝে এই পেট শক্ত বা পেট আঁটসাঁট হওয়া ।
সাধারণ কিছু কারণ রয়েছে যার ফলে গর্ভাবস্থায় একজন নারী পেট টান টান অনুভব করে-
১. পেটে চাপ
সাধারণত
শিশুটি বড় হতে থাকলে
জরায়ু পেটে চাপ সৃষ্টি
করে। তখনই পেট প্রসারিত
হতে থাকে,এবং শক্ত
হয়ে যায়।
২.পেট ফাঁপা ও
গ্যাস
গর্ভাবস্থায় প্রায়
প্রত্যেক নারীর গ্যাসের সমস্যা বা পেট ফাঁপা
দেখা দেয়।এসময় সুষম ও স্বাস্থ্যকর
ডায়েট না থাকার ফলেই
এই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াই এই সমস্যার মূল
কারন।
৩. প্ল্যাসেন্টা বিচ্ছিন্ন
ক্রমবর্ধমান ভ্রূণের জীবন সহায়ক কে
প্ল্যাসেন্টা বলে। এই প্ল্যাসেন্টার
মাধ্যমেই শিশু তার খাদ্য
ও পুষ্টিগুলি পেয়ে থাকে। কিছু কিছু
ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রসবের
আগে প্লাসেন্টা জরায়ুর প্রাচীর হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে
যায় । এই সময়ে
জরায়ু স্বাভাবিকের থেকে আরও বেশি শক্ত হতে
থাকে। এতে পেট শক্ত, তীব্র
ব্যথা এবং পেট টান
টান ভাব সৃষ্টি হয়।
৪.শিশুর আন্দোলন
গর্ভাবস্থার
সময়সীমা বাড়ার সাথে সাথে গর্ভের
শিশু ও বাড়তে থাকে।তার
সাথে শিশু হাত পাও
কাজ করতে শুরু করে।এতে
করে শিশুর লাথি
ও চলন আপনার পেট
আরও শক্ত এবং টান
টান করে
তুলতে পারে। এর মাধ্যমে আপনার
শিশু যে সুস্থ রয়েছে
তা আপনি জেনে স্বস্তি
বোধ করবেন, কিন্তু শিশুর প্রতিটি আন্দোলনে আপনার পেট আরও শক্ত
হতে পারে।
৫.অতিরিক্ত পরিমাণ
খাওয়া
অনেকেই ভেবে থাকেন যে গর্ভাবস্থায়, তাদের বেশি বেশু খাওয়া উচিত। ‘শিশু পেটে থাকার কারনে দুইজনের জন্য খাওয়া উচিত মনে করেন’ পুরানো এই ধারণা অনুসরণ করেন। কিন্তু এটা সত্যি নয়! আপনি গর্ভাবস্থায় দুইজনের হিসাব করে যদি খান, তাহলে আপনার অধিক খাওয়া হবে।এর ফলে,আপনার পেট ভরে উঠবে, শক্ত হবে এবং টানটান হবে।
৬ . প্রসবের সময় এগিয়ে
আসলে
আনুমানিক
প্রসবের তারিখের সময় আপনার পেটে
সংকোচন ও কঠোরতা আগের
থেকে বেশি জটিল হতে
পারে। তখন অনুভব করতে
পারবেন প্রসব
শ্রমে যাচ্ছেন আপনি।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য
গর্ভাবস্থায়
নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্য
খুবই সাধারণ বিষয় । মনে
করা হয় এটি অস্বাস্থ্যকর
ডায়েটের কারণ তা কিন্তু
একদম নয়। মূলত জরায়ু
অন্ত্রে চাপের ফলে এটি ঘটে
থাকে। এছাড়া, শরীরে প্রজেস্টেরন যুক্ত হওয়ায় গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে ধীর করে ফেলে
আর এইভাবে একজন গর্ভবতী মহিলার
কোষ্ঠকাঠিন্য বুঝতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্যর ফলে আপনার পেট
শক্ত এবং টানটান হতে
পারে।সাধারণত গর্ভধারণের কারনে কিছু বিশেষ হরমোন
পরিমানের তুলনায় অনেকখানি বেড়ে যায়। এই কারনে
হরমোনের প্রভাবে খাবার হজমে করার সাথে
জড়িত পেশিগুলো খানিকটা শিথিল করে এতে হজমের
গতি কমে যায়।
৮.গর্ভপাত
গর্ভধারণের প্রায় ২৮ তম সপ্তাহ এর আগে গর্ভে শিশুর মৃত্যু হওয়াকে গর্ভপাত বলা হয়। পেট শক্ত হওয়ার পাশাপাশি যদি পেটে ব্যথাও থাকে তবে এটিকে গর্ভপাতের লক্ষণ ধরা যেতে পারে।তবে গর্ভপাত হলে আপনার পেট শক্ত হওয়ার পাশাপাশি নিচের কিছু লক্ষণ দেখা যায়-
লক্ষণ:
1.যোনিপথে ভারী বা ফোঁটা ফোঁটা রক্তপাত হওয়া।
2.মানিকের ব্যাথার মত ব্যথা হওয়া
3.ব্যথা বা রক্তপাত বাদেও যোনিপথে হঠাৎ করে অধিক পরিমাণে তরল আসা।
4.যোনি
দিয়ে যেকোনো প্রকার টিস্যু জাতীয় পদার্থ অথবা মাংসপিণ্ডের মত
অংশ বের হওয়া
তাছাড়া
ব্র্যাক্সটন হিক্স সংকোচনের ফলে জরায়ুর ওপর থেকে
শুরু করে নিচে এসে
নামে। এ থেকে ও
পেট টানটান হয়ে যায়।এই ধরনের
সংকোচন সাধারণত অনিয়মিত ভাবে হয়ে থাকে
, ১৫ সেকেন্ড -৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। আবার কখনো
কখনো এর থেকে বেশি
সময় ধরেও হয়।
ব্র্যাক্সটন হিক্স সংকোচন হতে পারে বিভিন্ন কারনে। যেমন—
- গর্ভাবস্থায় বেশি কাজকর্ম করার ফলে।
- মূত্রথলি ভরা থাকলে।
- শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে বা ডিহাইড্রেটেড হলে।
- সহবাসের পরে বা সহবাসের সময়।
গর্ভাবস্থায় পেট টান-টান বা শক্ত হলে করণীয়
১. আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমান পানি
পান করতে হবে।সাধারণ
শরীরে যদি পানির অভাব
থাকে বা পানিশূন্যতা দেখা
দিলে পেটে টান অনুভূতি
হতে পারে। এই জন্য গর্ভাবস্থায় যেন
পানি শূন্যতা দেখা না দেয়
তাই পর্যাপ্ত পরিমান
পানি পানের চেষ্টা করুন । দিনে
কমপক্ষে ২-৩লিটার পানি
পান করুন।আর বেশি আপনি যতটা
পারেন।
২. খাবার গ্রহণে আপনাকে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে পেট শক্ত হয়ে আসে তাহলে সারাদিনে অল্প অল্প খান তবে কয়েকবার খান।খাবারে আঁশ জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে রাখুন।
৩.গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান করা থেকে এড়িয়ে চললুন।সাধারণত ২ কাপ কফিতে বা ২–৩ কাপ চায়ে এই পরিমাণ ক্যাফেইন পাওয়া যায়।
৪.নিয়মিত ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় খাবার হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া গর্ভাবস্থার নানান জটিলতা কমাতে সাহায্য করতে পারে এই ব্যায়াম ।গবেষণায় দেখা যায় যে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম গর্ভবতীর জন্য নিরাপদ ও কার্যকর।এতে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা হয়।
৫.যদি বুঝতে পারেন আপনার
ব্র্যাক্সটন হিক্স সংকোচন হচ্ছে, তবে আপনি নিজের
অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলুন। যেমন,
যদি আপনি দাঁড়িয়ে থাকেন
তবে বসে পড়ুন বা
সুয়ে পড়ুন।
তবে হ্যাঁ খেয়াল রাখবেন যেন তাড়াহুড়ো না করেন। দ্রুত জায়গা পরিবর্তন না করে ধীরে ধীরে করুন।
৬.গর্ভাবস্থায় অবশ্যই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে । সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমানোকে আদর্শ ঘুমবলে ধরা হয়। এর থেকে কম ঘুম হলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।তাই গর্ভাবস্থায় নিয়ম করে ঘুম ও বিশ্রাম নিতে চেষ্টা করুন।
৭. মাংসপেশির বিভিন্ন ব্যথায়
হালকা মালিশ করলে উপকার পেতে
পারেন। এই জন্য হালকা
গরম সেঁক নিতে পারেন
ও কুসুম গরম
পানিতে গোসল করতে পারেন।
তবে খেয়াল
রাখবেন পানি যেন খুব
বেশি গরম না হয়।
কখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন-
- গর্ভাবস্থায় পেটে যদি বেশি শক্ত হয় এবং তীব্র বেদনাদায়ক হয়।
- গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হওয়ার সাথে সাথে শ্বাসকষ্টের অভিজ্ঞতা হয় আপনার।
- এক ঘণ্টার মধ্যে যদি চারবারের বেশি পেট টান হয়।