নারীর বন্ধ্যাত্বের (Infertility) কারণ ও করণীয়

নারীর বন্ধ্যাত্বের (Infertility) কারণ ও করণীয় বিস্তারিত

 

নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ গুলো কি কি ? বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করতে হলে কি করবেন ? সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

নারীর বন্ধ্যাত্বের (Infertility) কারণ ও করণীয়

নিয়মিত যৌন মিলন করা সত্ত্বেও যখন একজন নারী তার বিবাহের এক বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে চেষ্টা করার পরেও গর্ভবতী হতে পারে না তখন এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বন্ধ্যাত্ব বা Infertility বলা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ নারীরাই এই সমস্যায় ভুগতেছে। বিশেষজ্ঞ দের মতে, নারীদের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তনের কারণেই মূলত বন্ধ্যাত্ব নারীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আর বেশিরভাগ মহিলারা এই সমস্যার কারণ এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে জানেন না। আর সেই জন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে বন্ধ্যাত্ব হওয়ার কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

এখন চলুন নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক,

নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ গুলো কি কি ? 

নারীদের বন্ধ্যাত্ব হওয়ার কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য কারণ রয়েছে। কারণ গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

বয়স বৃদ্ধি পেলে :

নারীর বন্ধ্যাত্ব হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল বয়স বৃদ্ধি পাওয়া। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে নারী পুরুষ উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের হরমোন গুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং নারীদের মেনোপজের হওয়ার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম না থাকার কারণে সময় বন্ধ্যাত্ব হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় আর তাই ৩৫ বছরের পরে যদি কোন নারী  গর্ভবতী হতে চান সময় গর্ভপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে এবং তার জন্য গর্ভবতী হওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে যেতে পারে।

যৌনবাহিত রোগ থাকলে :

আপনি যদি আগে থেকে কোন যৌনবাহিত রোগ যেমন : গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়ার প্রভৃতিতে আক্রান্ত থাকেন কিংবা হরমোনজনিত সমস্যা যেমন : পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকেন তাহলে কিন্তু আপনার গর্ভধারণে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। 

জরায়ুতে সমস্যা থাকলে :

আপনার জরায়ুতে যদি আগে টিউমার হয় এবং প্রজনন অঙ্গে অস্ত্রোপচার করার কারণে যদি কোন ভাবে আপনি আঘাত পান তাহলে বন্ধ্যাত্ব হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া যদি আপনি এন্ডোমেট্রিওসিস, চকলেট সিস্ট প্রভৃতি জরায়ুর সমস্যায় ভুগেন তাহলে আপনার বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

জটিল রোগে ভুগলে :

আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যেমন : অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার প্রভৃতিতে ভুগতে থাকেন তাহলে কিন্তু ইনফার্টালির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিম্বস্ফোটন সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে :

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী যদি নিয়মিত ডিম্বস্ফোটন বা ডিম ছাড়তে ব্যর্থ হন, এর ফলে তার বন্ধ্যাত্ব হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় দ্রব্য খেলে :

আপনি যদি অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় দ্রব্য যেমন : চা, কফি প্রভৃতি বেশি পান করেন তাহলে আপনার শরীর অনেক বেশি কড়া হয়ে যাবে। এর ফলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। যা আপনার গর্ভধারণের পথে মারাত্মক বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

ধূমপান মদ্যপান করলে :

ধূমপান, মদ্যপান, ড্রাগ প্রভৃতি নেশা জাতীয় দ্রব্য। এগুলো আপনার শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে দেহের বিভিন্ন অংশ যেমন : ফুসফুস, লিভার, জরায়ু প্রভৃতি জায়াগায় এক ধরনের টক্সিক পরিবেশের সৃষ্টি করবে। যার জন্য পরবর্তীতে আপনার ইনফার্টালিটির প্রবলেম দেখা দিতে পারে।

বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করতে হলে কি করবেন ?

বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে করণীয় কাজ গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা :

বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হল জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা। কারণ বর্তমান সময়ে অধিকাংশ নারীরাই ডিজিটাল ডিভাইসের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে।যার জন্য তাদের শারীরিক কসরত, বিশ্রাম ঠিক মত হচ্ছে না। এর ফলে তারা সহজেই বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যা তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে অনেক কমিয়ে দিচ্ছে।তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে অলসতার জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এর পরিবর্তে আপনাকে নিয়মিত শরীরচর্চা হাঁটাহাঁটি করতে হবে এবং এর পাশাপাশি আপনি পর্যাপ্ত ঘুম বিশ্রাম নিবেন। এর ফলে আপনার শরীর সচল থাকবে এবং আপনি রোগ ব্যধিতে কম আক্রান্ত হবেন। 

আরও জানুন:

অনিয়মিত ঋতুস্রাব( Irregular Period) নিয়মিত করার কিছু সেরা ঘরোয়া টিপস

মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব(  Leucorrhoea) এর কারণ এবং করণীয় কি ?

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা :

ইনফার্টালিটির প্রবলেম সমাধান করতে হলে আপনার দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। কারণ শরীরের ওজন বেশি বেড়ে গেলে বা কমে গেলে দেহের হরমোন গুলোর মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে। যা আপনার গর্ভধারণের পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। তাই এই সমস্যা দূর করতে হলে আপনাকে যে সব খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট বা তেল-চর্বি বেশি থাকে জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। এর পরিবর্তে আপনি সুষম খাবারের ডায়েট চার্ট অনুসরণ করবেন। আর দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করবেন।

সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ করা :

অকাল বন্ধ্যান্ত যদি না চান তাহলে প্রতিটি নারীরই উচিত সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ করা। কারণ ৩৫ বছরের পর থেকে শরীরের বোন ডেনসিটি কম হতে থাকে। সময় সন্তান ধারণ করলে মহিলাদের গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে। তাই প্রতেক নারীরই উচিত ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সন্তান ধারণ করা।

মানসিক চাপ মুক্ত থাকা :

অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে আমাদের শরীরের হরমোন গুলোর মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে। যার ফলে ডিম উৎপাদনে বাঁধা হতে পারে। যার জন্য ইনফার্টালিটির সমস্যা হতে পারে। সেই জন্য আমাদের উচিত কাজের প্রেসার কমানো এবং সব সময় দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করা।

সুষম খাবার গ্রহণ করা :

বন্ধ্যাত্ব রোধ করতে হলে আমাদেরকে সবাইকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে। যেমন : ফোলেট, জিংক, ভিটামিন সি , আয়রন, ওমেগা- ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে এসব খাবার আপনার ফার্টালিটিতে সহায়তা করবে।

একজন অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া :

আপনার প্রজনন তন্ত্রে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। কারণ সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে এই সমস্যা সহজেই সমাধান করা সম্ভব।

শেষ কথা :

বন্ধ্যাত্ব বা ইনফার্টিলিটির সমস্যা প্রতিটি নারীর কাছেই অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি অনুভূতি। তবে সব সমস্যারই সমাধান আছে। তাই আমাদের উচিত হতাশ না হয়ে উপরিউক্ত করণীয় কাজ গুলো অনুসরণ করা। আর এতে যদি কাজ না হয় তাহলে আপনি একজন অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্টের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কৃত্রিম প্রজনন বা IVF পদ্ধতি অবলম্বন করে এখন সন্তান ধারণ করতে পারবেন।

Post a Comment

Previous Next