প্রথম সিজারের কত দিন পর দ্বিতীয় সন্তান নেয়া নিরাপদ ?


 প্রথম সিজারের কত দিন পর দ্বিতীয় সন্তান নেয়া নিরাপদ ? সম্পর্কে জানতে হলে বিস্তারিত পড়ে নিন


প্রথম সিজারের কত দিন পর দ্বিতীয় সন্তান নেয়া নিরাপদ

সিজারিয়ান অপারেশনের সময় একজন নারীর শরীরের ওপর অনেক বেশি প্রেসার পড়ে। সে জন্য এই অপারেশনের পর মায়েরা শারীরিক ভাবে অনেক বেশি দূর্বল হয়ে পড়ে। এই দূর্বলতা থেকে কাটিয়ে উঠে আরেকটা সন্তান নেওয়ার জন্য অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়।

বিশেষজ্ঞ দের মতামত অনুসারে, প্রথম সন্তান সিজারে হওয়ার পরে পরবর্তীতে দ্বিতীয় সন্তান নেওয়া সময় কমপক্ষে বছর মাঝে গ্যাপ রাখা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ দম্পতি আরেকটা সন্তান নেয়ার জন্য এই দীর্ঘ সময়ের গ্যাপটা রাখতে চান না। এতে করে দ্বিতীয় বার সন্তান ধারণের সময় তারা বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। প্রথম সিজারের পর থেকে দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার মধ্যবর্তী গ্যাপ, কারণ, সুবিধা অসুবিধা গুলো সম্পর্কে অনেকেরই অজানা রয়েছে। যার ফলে গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে মা শিশু দুজনেই ঝুঁকিতে পড়ে যায়। জন্য প্রথম সিজারের পর দ্বিতীয় সন্তান নিতে কত দিন সময় লাগবে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা খুবই জরুরি।

এখন চলুন সিজারের পর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার জন্য মধ্যবর্তী সময়সীমা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক,

 

প্রথম সিজারের কত দিন পর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়া নিরাপদ ?

প্রথম সিজারের পর আরেকটা সন্তান নেয়ার জন্য যে কয় দিন অপেক্ষা করা দরকার সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

প্রথম সিজারের কত দিন পর দ্বিতীয় সন্তান নেয়া নিরাপদ


* World Health Organization (WHO) বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর পরামর্শ অনুযায়ী, সি-সেকশন বা নরমাল যে কোন ডেলিভারির ক্ষেত্রেই দুই গর্ভধারণের মাঝে কমপক্ষে দুই বছরের ব্যবধান রাখা উচিত। দুই বছর সম্ভব না হলে অন্তত ১৮ মাসের ব্যবধান দ্বিতীয় বার বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে রাখতে হবে।

* কারণ প্রেগন্যান্সি চলা কালীন সময়ে এবং সিজারে বাচ্চা প্রসবের পরে একজন মায়ের শরীরে অনেক চাপ পড়ে এবং এর সাথে  বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়ে থাকে।

প্রয়োজনে আরও জানুন

সিজারের পর কোমর ব্যাথার কারণ ও সমাধান

HPV ভ্যাকসিন কি?HPV Vaccine কেন দেয়া হয় ?

 * প্রথম বার বাচ্চা প্রসবের পরে পুনরায় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার মাঝে এই ব্যবধানটি থাকলে আপনার শরীরের সিজার পরবর্তী কাটা-ছেঁড়া, ব্যথা-ফোলা সংক্রান্ত ধকল গুলো সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এবং পাশাপাশি আপনি পুনরায় কনসিভ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হবেন।

* সি-সেকশনে প্রথম সন্তান হওয়ার পরে সাধারণত অধিকাংশ নারীই মানসিক চাপ শারীরিক অসুস্থতায় ভোগে। সময় আরেকটি সন্তান নেওয়ার জন্য আপনার মানসিক শারীরিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে যা তখন প্রথম বারের গর্ভধারণের তুলনায় কম থাকবে। সে জন্য আপনি যদি ২য় সন্তান নেওয়ার মাঝে দুই বছরের গ্যাপ রাখেন তাহলে আপনার এই প্রস্তুতি গুলো নিতে সুবিধা হবে এবং সেই সাথে আপনার শিশুর ঠিক মত দেখা শুনা করতে পারবেন।

* সিজারিয়ান ডেলিভারির সাথে আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং হওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ পুষ্টি গুণ বেরিয়ে যায়। যার জন্য ডেলিভারির পরে আপনার রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য,  পুষ্টি হীনতা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই সব সমস্যা থেকে সেরে না উঠতে আপনার অন্তত দুই বছরের মত সময় লাগতে পারে।  জন্য প্রথম দ্বিতীয় বাচ্চা নেওয়ার মাঝে অন্তত দুই বছর বিরতি থাকা প্রয়োজন। 

* সি-সেকশনে প্রথম সন্তান জন্মের পরপর দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করার যাবে না। এর কারণ সন্তান প্রসব হওয়ার সময় তার মায়ের শরীর থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, লৌহ ভিটামিন এর বেরিয়ে যেতে থাকে। জন্য শিশু জন্মের পর একজন মায়ের শরীরে এই প্রয়োজনীয় উপাদান গুলোর ঘাটতি পূরণ করতে অনেকটা সময় লেগে যায়।

* সে জন্য ডাক্তাররা একটি বাচ্চা হওয়ার অন্তত দুই বছর ব্যবধানের পর আরেকটি বাচ্চা নিতে বলেন। গ্যাপের সময়টাতে আপনি শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান গুলোর ঘাটতি পূরণ করে পুনরায় মা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করতে পারবেন।

* ১ম বাচ্চা হওয়ার পর আপনি যদি দুই বছরের গ্যাপে ২য় বাচ্চা নেন তাহলে আপনার শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ আপনার বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করবে। যা আপনার শিশুর মেধার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশি ব্যবধানের বাচ্চাদের মেধার বিকাশ কম ব্যবধানের বাচ্চাদের তুলনায় অনেক বেশি হয়।

* আপনার বয়স যদি পয়ত্রিশোর্ধ্ব হয় তাহলে কখনোই ১৮ মাসের কম ব্যবধানে সন্তান নেওয়া যাবে না। এতে আপনার মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।  

* প্রথম দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার মাঝে কমপক্ষে দুই বছর অথবা ১৮ মাসের গ্যাপ রাখলে আপনার দুই সন্তানের ক্ষেত্রেই দেখভাল করতে কোন প্রকার অসুবিধা হবে না। এর ফলে আপনি এবং সন্তান দুজনেই সুস্থ থাকতে পারবেন।

আরও পড়ুন :সন্তান প্রসবের কতদিন পর সহবাস করতে পারবেন ?

                       ঋতুস্রাবের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান গর্ভে আসতে পারে ? 

 

 প্রথম সিজারের মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসলে কি কি সমস্যা হতে পারে ?

আপনার প্রথম সন্তান জন্মের পর মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসলে যে সব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই প্রসব হওয়া :

প্রথম সিজারের পরপর ছয় মাসের ব্যবধানে যদি আপনি আবার গর্ভধারণ করেন তাহলে নয় মাস হওয়ার আগেই আপনার সন্তান প্রসব হয়ে যেতে পারে। কারণ সিজারে বাচ্চা প্রসবের পরে একজন নারীর জরায়ুর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতেই প্রায় এক থেকে দেড় মাসের মত সময় লেগে যায়। ছয় মাসের ব্যবধানে বাচ্চা গর্ভে আসলে জরায়ু মুখের সন্তান ধারণ ক্ষমতা দূর্বল থাকার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আপনার বাচ্চা প্রসব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। 

কম ওজনের সন্তান জন্ম দেয়া :

দুই গর্ভধারণের মাঝে যদি আপনার অন্তত ১৮ মাসের ব্যবধান না থাকে তাহলে আপনার সন্তান স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে অনেক কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাচ্চা কনসিভ করার জন্য আপনার ইউটেরাসে পানি ভাঙ্গার ঘটনা ঘটতে পারে।  এই পানি ভাঙ্গার কারণে আপনার শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ জরায়ু মুখ হয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে।

সেই সাথে আপনার গর্ভে থাকা সন্তানের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ বেরিয়ে যেতে থাকে। সে জন্য ছয় মাসের ব্যবধানে আরেকটি সন্তান গর্ভে আসলে ডেলিভারির সময় স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম ওজনের সন্তানের জন্ম হতে পারে।

 আকারে ছোট হওয়া :

প্রথম সন্তান জন্মের পর আরেকটা সন্তান নেয়ার মাঝে যদি নির্দিষ্ট সময়ের গ্যাপ না রাখা হয় তাহলে আপনার দ্বিতীয় সন্তান সাইজ প্রথম সন্তানের তুলনায় ছোট হতে পারে। এর অন্যতম কারণ হল প্রথম সন্তান হওয়ার সময় আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি থাকার পাশাপাশি Growth Hormone এর কোন চাহিদা ছিল না যার কারণে তার আকৃতিতে কোন প্রকার সমস্যা দেখা যায় নি। কিন্তু মাসের কম ব্যবধানে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসলে এই হরমোনের ঘাটতি থাকে যার কারণে আপনার সন্তান আকারে ছোট হতে পারে।

পুষ্টিহীনতায় ভোগার সম্ভাবনা :

আপনি প্রথম সিজারের পরপর যদি দ্বিতীয় সন্তান নেন তাহলে তার পুষ্টিহীনতায় ভোগার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ প্রেগন্যান্সি চলা কালীন এবং বাচ্চা প্রসবের হওয়ার সময় একজন নারীর শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো বেরিয়ে যেতে থাকে। ছয় মাসের কম ব্যবধানে পুনরায় গর্ভধারণ করলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না। যার জন্য আপনার গর্ভের সন্তান আপনার শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুণ গ্রহণ করতে পারবে না। যার ফলে আপনার দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর তার পুষ্টিহীনতায় ভোগার চরম সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা :

সি-সেকশনের পর দ্বিতীয় বাচ্চা নেওয়ার মাঝে যদি ১৮ মাসের কম ব্যবধান থাকে তাহলে গর্ভবস্থার সময় নির্দিষ্ট সময় প্রসবের পূর্বেই আপনার শরীর থেকে পানির সাথে প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ গুলো বেরিয়ে যেতে পারে। যার ফলে আপনার সন্তানের শরীর থেকে পানি বের হয়ে সন্তান শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর তার অটিজম আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।  

জন্মগত ত্রুটির আশঙ্কা :

দুই গর্ভধারণের মাঝে নির্দিষ্ট গ্যাপ না থাকার কারণে দ্বিতীয় সন্তানের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ, হরমোন, ভিটামিন প্রভৃতির চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণে তার জন্মের পর জন্মগত ত্রুটির আশঙ্কা বেশি থাকে।

 স্বাভাবিক প্রসবের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া :

প্রথম সি-সেকশন অপারেশন হওয়ার পরে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কম ব্যবধানে যদি ২য় সন্তান জন্ম নেয় তাহলে পুনরায় বাচ্চা প্রসব করার সময় আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যার জন্য আপনার স্বাভাবিক প্রসবের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

রক্তশূন্যতায় ভুগা :

সিজারিয়ান ডেলিভারির পরপর যদি আপনি আরেকটি বাচ্চা নেন তাহলে আপনার প্রথম বাচ্চা জন্মের সময় শরীরে যে পরিমাণ রক্ত ছিল সে পরিমাণ রক্ত দ্বিতীয় বাচ্চা গর্ভে থাকা অবস্থায় থাকে না। এর ফলে আপনি এবং গর্ভে থাকা সন্তান দুজনেরই রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।  

প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা :

প্রথম বাচ্চা সিজারে হওয়ার সময় আপনার শরীরের উপর অনেক প্রেসার পড়ে যায়। এই সময় আপনার মানসিক চাপ অনেক বেশি থাকে এবং এই চাপ থেকে সেরে উঠতে নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়। এই টাইমের আগে যদি আপনি আরেকটি বাচ্চা গর্ভে ধারণ করেন তাহলে আপনার মানসিক চাপ আরও বেড়ে যেতে পারে। যার থেকে পরবর্তীতে আপনি প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন।

সিজোফ্রেনিয়া :

সি-সেকশনে বাচ্চা প্রসবের পরপর নানা কারণে আপনি মানসিক চাপে থাকতে পারেন। এই মানসিক চাপ না কাটতে না কাটতে পুনরায় যদি আপনি সন্তান নেন তাহলে আপনার মানসিক চাপ আরও বেড়ে যেতে পারে। এই চাপ কন্ট্রোল না করতে পারলে ধীরে ধীরে আপনি সিজোফ্রেনিয়ার মত জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

প্রয়োজনে পড়ুন:

 গর্ভপাত বা Miscarriage এড়াতে যে সব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ? 

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণে শরীরে যে সব সমস্যা দেখা দিতে পারে ?


পরিশেষে আমরা এতটুকুই বলতে পারি যে,

সুস্থ্য সন্তান সুস্থ্য মা আমাদের সকলেরই কাম্য। আপনি এবং গর্ভের সন্তান দুজনের সুস্থতার কথা চিন্তা করে বাচ্চা নেওয়ার সময় দুই সন্তানের মাঝে অন্তত দুই বছরের গ্যাপ রাখবেন। গর্ভধারণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিয়ে তারপর সন্তান নিবেন। আর একটা কথা মনে রাখবেন, দিন শেষে সিদ্ধান্তটা স্বামী এবং স্ত্রী দুজনকেই নিতে হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বিশেষ করে উপরিউক্ত নির্দেশনা গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। তাই সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিতে চাইলে আপনাকে প্রথম দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার মাঝে কমপক্ষে দুই বছর অথবা ১৮ মাসের গ্যাপ রাখতে হবে এতে করে আপনার এবং গর্ভে থাকা সন্তান উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।

Post a Comment

Previous Next