অনিয়মিত ঋতুস্রাব( Irregular Period) নিয়মিত করার কিছু সেরা ঘরোয়া টিপস

ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে কিভাবে আপনার অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা Irregular Period এর সমস্যা দূর করবেন ?  সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন -

অনিয়মিত ঋতুস্রাব( Irregular Period) নিয়মিত করার কিছু সেরা ঘরোয়া টিপস


বিশ্বব্যাপি প্রতিনিয়ত ঋতুস্রাবের সমস্যায় ভুক্তভোগী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা তাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা মাসিকের সমস্যা যে কোনো বয়সের নারীদের হতে পারে তবে বিশেষ করে যারা অবিবাহিত বর্তমান সময়ে তাদের মধ্যে এই সমস্যার প্রকোপ বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। নারীদের অনিয়ন্ত্রতিত জীবনযাপন যেমন : অতিরিক্ত স্ট্রেস, পরিশ্রম, দুর্বলতা প্রভৃতির কারণেই মূলত তাদের ঋতুস্রাব নিয়মিত হচ্ছে না, এমনটি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অনিয়মিত ঋতুস্রাব নিয়মিত করার জন্য অনেক নারীরাই খাবার পিল বা ওষুধ সেবন করেন। তবে এসব ওষুধে অনেক ধরনের সাইড ইফেক্ট থাকে। যার ফলে আপনার শরীরে স্হূলতা, খাবারে অরুচি, ব্রণ, মাথা ব্যথা, পা ব্যথা, পেট ফাঁপা ইত্যাদি অসুবিধা দেখা দিতে পারে। কিন্তু ওষুধ না খেয়েও আপনি ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই ঋতুস্রাব নিয়মিত করতে পারেন। এজন্য Irregular Period বা অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় গুলো সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

এখন আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করার উপায় গুলো সম্পর্কে জানব,

 

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করুন ঘরোয়া উপায়ে ?

ঘরোয়া পদ্ধতিতে অনিয়মিত পিরিয়ড দূর করার উপায় গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করুন ঘরোয়া উপায়ে ?

                                                           ছবি :সংগৃহিত

শারীরিক ব্যায়াম এবং মেডিটেশন:

ঋতুস্রাব নিয়মিত না হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হল অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক চাপ। আপনি যখন বেশি স্ট্রেস বা টেনশন করতে থাকেন তখন আপনার শরীরের ভিতরে যে সমস্ত হরমোন পিরিয়ডকে নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রেস এর কারণে সমস্ত হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে আপনার পিরিয়ড ঠিকমত হয় না। ঋতুস্রাব নিয়মিত করার পদ্ধতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল যোগ বা শারীরিক ব্যায়াম এবং মেডিটেশন। আপনি যদি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম এবং মেডিটেশন করেন তাহলে এটি আপনার মানসিক চাপকে দূর করতে সহায়তা করবে। 

আদা:

আদা বহুগুণে গুণান্বিত একটি খাবার। এটি সর্দি-কাশির সমস্যা সারানোর পাশাপাশি আপনার Period Cycle বা ঋতুস্রাবের চক্রকে Regulation বা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করবে। আপনাকে আদা খাওয়ার জন্য কাপ পানিতে চা চামচ পরিমাণ মিহি আদা কুঁচি নিয়ে - মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর এর সাথে অল্প পরিমাণে চিনি বা মধু মিশিয়ে নিতে হবে। ভরা পেটে অর্থাৎ প্রতিদিন খাবার খাওয়ার পরে আপনাকে এই পানীয়টি তিন বেলা খেতে হবে। এভাবে এক মাস নিয়মিত খেতে পারলে আপনার অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যাবে।  

দারুচিনি : অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করতে দারুচিনি অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। এটি আপনার মাসিক নিয়মিত করার পাশাপাশি মাসিক চলাকালীন সময়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। দারুচিনি খাওয়ার অন্যতম উপায় হল, এক গ্লাস দুধের ভিতরে আধা চামচ দারচিনির গুঁড়ো মেশাবেন এবং এর সাথে আপনি মধু মিক্সড করেও খেতে পারেন। এই মিশ্রণটি আপনি থেকে সপ্তাহ নিয়মিত পান করুন। এর ফলে আপনার  অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা কেটে যাবে।  এছাড়াও আপনি চা অথবা লেবুর রসের সাথে দারুচিনির গুড়া করে মিশিয়ে খেতে পারেন।


জিরাজিরায় কোন প্রকার Side effect বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। জিরাও আপনার পিরিয়ড নিয়মিত করতে জিরা অনেক ভালো কাজে দিবে। এজন্য আপনি এক গ্লাস পানিতে চা চামচ জিরা নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখবেন। তারপর সকালে উঠে এই পানি এবং জিরা দুটোই খেয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত খেতে পারলে উপকার পাবেন।

আরও জানুন......

মেয়েদের অনিয়মিত  মাসিক হয় কেন ? অনিয়মিত মাসিক হলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ?

সাদা স্রাব(  Leucorrhoea)কী? সাদা স্রাব( Leucorrhoea) কী  কারণে হয়ে থাকে? ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে সাদা স্রাব প্রতিরোধ করবেন?


অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী :

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারির উপকারিতা
                                                                          ছবি :সংগৃহিত

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার রসের অনেক গুণ আছে। এটি রূপচর্চার পাশাপাশি মাসিক নিয়মিত করতেও ভাল কার্যকরী। এটি আপনার শরীরের হরমোন রেগুলেশনে সহায়তা করবে। অ্যালোভেরা খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে তাজা অ্যালোভেরা পাতার রস সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে খাওয়া বন্ধ রাখাই শ্রেয়।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার :

আপনার রক্তে ইনসুলিন ব্লাড সুগারের মাত্রার তারতম্যের কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার রক্তের ইনসুলিন ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর ফলে মাসিকের সমস্যা দূর হবে। এটি খাওয়ার জন্য আপনি, এক গ্লাস পানিতে টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন খাবার খাওয়ার আগে খাবেন। এটি আপনার ঋতুস্রাবের চক্র নিয়ন্ত্রণে অনেক কার্যকরী ফল দিবে।

কাঁচা পেপে :

কাঁচা পেপে ঋতুস্রাবের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি আপনার জরায়ুর Muscle Fiber Contraction- সাহায্য করবে। পর পর কয়েক মাস নিয়মিত কাঁচা পেপের রস খেতে পারলে আপনার পিরিয়ডের সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে এটি না খাওয়াই উত্তম।

ধনেগুঁড়া :

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করতে ধনেগুঁড়া বেশ উপকারী একটি উপাদান। এর এর ভিতরে এমেইনাগোগ নামক একটি ওষুধি উপাদান রয়েছে যা আপনার মাসিককে নিয়মিত সাহায্য করবে। ধনেগুঁড়া খেতে হলে আপনি দুই কাপ পরিমাণ পানিতে এক টেবিল চামচ ধনেগুঁড়া ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে যখন এক পরিমাণে নেমে আসবে তখন জ্বাল অফ করে পানি ছেঁকে আলাদা করে রাখুন। পিরিয়ডের ডেট শুরু হওয়ার কিছু দিন আগে থেকে দিনে তিন বার করে এই পানীয় পান করুন। তাহলে এটি আপনার পিরিয়ডের সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে।

জেনে নিন,জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল( Contraceptive Pill ) খাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা গুলো কি কি ?

কাঁচা হলুদ :

হলুদের উপকারিতা
                                                                     ছবি :সংগৃহিত

আদি কাল থেকেই চিকিৎসা শাস্ত্রে হলুদের উপকারের কথা আমরা শুনে আসছি। হলুদ আপনার মাসিক নিয়মিত করতে এবং শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করবে। কাঁচা হলুদ আপনার জরায়ুর মাংসপেশী সঙ্কোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং এর ভিতরে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ দুধে চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা হলুদ নিয়ে মধু বা গুড় দিয়ে কিছুদিন খেলে উপকার পাবেন।

 তিল :

তিল একটি উপকারী উপাদান এবং অনেক গুণ আছে। তিলের ভিতরে থাকা উপাদান হরমোন উৎপাদন করে থাকে। এটি আপনার অনিয়মিত ঋতুস্রাবকে নিয়মিত করতে সাহায্য করবে। তিল খাওয়ার জন্য আপনাকে অল্প পরিমাণের তিল নিয়ে তা ভেজে গুঁড়া করে নিতে হবে। তারপর এর সাথে এক চামচ গুড় মিশিয়ে খেয়ে নিন। রকম প্রতিদিন খালি পেটে এক চা চামচ করে খেতে পারলে কার্যকরী ফল পাবেন।

 মৌরী :

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করতে মৌরী ভালো কাজ করে। মৌরী খেতে হলে আপনাকে রাতে এক গ্লাস পানিতে দুই টেবিল চামচ মৌরি ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর সকালে ওঠে মৌরী ভেজানো পানি ছেঁকে নিয়ে ওই পানি পান করলে উপকৃত হতে পারেন।

ফল সবজির রস :

পিরিয়ডের সমস্যা দূর করতে হলে খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি করে ফল সবজির রস রাখতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে এবং হরমোনের ব্যালান্স রেগুলেশনে সহায়তা করবে। বিভিন্ন ধরনের সবজি ফল যেমন : গাজর, পুদিনা পাতা, করলার রস, টক জাতীয় ফল- মাল্টা, তেঁতুল, জলপাই, আঙুরের রস দিনে দুবার করে খেলে উপকার পেতে পারেন। তবে এগুলোর মধ্যে ঋতুস্রাব নিয়মিত করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হল গাজর এবং আঙুরের রস।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার :

আপনার শরীরে যদি আয়রনের ঘাটতি থাকে তাহলে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পিরিয়ড নিয়মিত করতে হলে আপনাকে আয়রন বা লৌহসমৃদ্ধ যেমন- গরু, মুরগীর মাংস, কলিজা, চিংড়ি, ডিম, কচুর শাক, লাল শাক, পালং শাক, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, মটরশুঁটি, তরমুজ, খেজুর, গাব, টমেটো, ডাল, ভুট্টা, শস্যদানা প্রভৃতি খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এর ফলে আপনার ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

 গর্ভপাত (Miscarriage) কেন হয় ?জেনে নিন ,গর্ভপাতের লক্ষণ সমূহ কি কি ?

অবশেষে আমরা বলতে পারি যে, 

একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা কিশোরীর নিয়মিত ঋতুস্রাব বা মাসিক হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু তা না হয়ে যদি মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে তখন বুঝে নিতে হবে আপনার শারীরিক কোন সমস্যার কারণে পিরিয়ড হচ্ছে না। আর সময়মতো যদি এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে পরবর্তীতে এর থেকে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে যা পরবর্তীতে আপনার গর্ভাবস্থার সময় মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। 

এজন্য সময়মতো এই সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণে জন্য আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপরিউক্ত উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে। কারণ পিরিয়ডের সমস্যা অল্প থাকা অবস্থায় চিকিৎসা করালে আপনি সহজেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। তাই আপনি যদি অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা Irregular Period সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে সেই সাথে উপরিউক্ত ঘরোয়া উপায়গুলো ঠিক মত অনুসরণ করতে হবে এবং অবশ্যই গুরুতর মনে করলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

 

 

Post a Comment

Previous Next