থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) কী ? থাইরয়েড ক্যান্সার হলে শরীরে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে ?

আপনার কি গলা ব্যাথা করছে ? থাইরয়েড ক্যান্সার হয় নি তোআপনি কি জানেন থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) কী এবং কী কারণে হয়ে থাকে ? থাইরয়েড ক্যান্সার হলে আপনার শরীরে কোন ধরনের লক্ষ্মণ দেখা যায় ? কীভাবে আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন ? সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

থাইরয়েড ক্যান্সার কী  থাইরয়েড ক্যান্সার হলে শরীরে কি কি  লক্ষণ দেখা দিতে পারে



বর্তমান বিশ্বে এখন আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ থাইরয়েড ক্যান্সারের শিকার হচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই সাথে মৃত্যুর হারও বেড়ে চলেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করার কারণে মূলত থাইরয়েড ক্যান্সার হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা প্রাথমিক অবস্থায় থাইরয়েড ক্যান্সারের লক্ষ্মণ প্রকাশ পাওয়ার পরেও সম্পর্কে ঠিকমত বুঝতে পারেন না। এর ফলে থাইরয়েড ক্যান্সার গলার বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার ফলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। এজন্য থাইরয়েড ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা অত্যন্তজরুরি।

এখানে,যা যা থাকছে,

  1. থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) কী ?Thyroid Cancerকি কারণে হয় ?
  2. থাইরয়েড ক্যান্সার হলে শরীরে কি কি  লক্ষণ দেখা দিতে পারে ?
  3.  থাইরয়েড ক্যান্সার হলে কী উপায়ে প্রতিকার করবেন ?
  4. কীভাবে আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন ?

 থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) কী ?

থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) হল এক প্রকার এন্ডোক্রাইন ক্যান্সার। এটি আমাদের গলার ভিতরে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে বিকাশ লাভ করে। অর্থাৎ স্বরযন্ত্রের ভিতরে থাইরয়েড গ্রন্থিতে যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষের বৃদ্ধি ঘটে তখন থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:

থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) কাদের হয় ?

থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) নারী পুরুষের উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা দিতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং মধ্যবয়স্ক যারা রয়েছেন তাদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি।

 থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) কয় ধরনের হয়ে থাকে ?

সাধারণত থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) চার ধরনের হয়ে থাকে। সে গুলো হল

  •  Papilloma Thyroid Cancer (প্যাপিলোমা থাইরয়েড ক্যান্সার)
  •  Follicular Thyroid Cancer (ফলিকুলার থাইরয়েড ক্যান্সার)
  •  Medullary Thyroid Cancer (মেডুলারি থাইরয়েড ক্যান্সার)
  • Anaplastic Thyroid Cancer (অ্যানাপ্লাস্টিক থাইরয়েড ক্যান্সার)

কী কারণে থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) হতে পারে ?

আমাদের থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer) হওয়ার পেছনে রয়েছে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ। কারণগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত জেনে নিন :

জেনেটিক পরিবর্তন :

আপনার শরীরে যদি জেনেটিক পরিবর্তন বা জিনগত ত্রুটি থাকে তাহলে থাইরয়েডের ভিতরে কোষগুলোর বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে হতে থাকবে। এই কোষগুলো তখন জমাট বেঁধে টিউমার বা পিন্ডের এর মত তৈরী করে। যার থেকে আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গলগণ্ড রোগ :

আপনার গলা বা থাইরয়েড গ্রন্থি যদি বেড়ে যায় তখন অবস্থাকে বলা হয় গলগণ্ড রোগ। এই রোগ থেকে আপনার শরীরে থাইরয়েড ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।

 থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে গেলে :

আপনার গলা বা থাইরয়েড গ্রন্থি যদি ফুলে যায় তাহলে আপনার শরীরে থাইরয়েড ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।

বংশগত কারণে :

আপনার পরিবারের কোন সদস্য যদি আগে থেকে থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্তথাকেন তাহল আপনার শরীরে থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

স্থলতায় ভুগলে :

আপনি যদি স্থুলতায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে থাইরয়েড ক্যান্সার দেখা দেয়ার চরম সম্ভাবনা রয়েছে।

আয়োডিনের অভাব :

আপনার আয়োডিনের অভাব বা আয়োডিন স্বল্পতা যদি বেশি হয় তাহলে আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার হতে পারে।

বিকিরণ রশ্মি :

আপনি যদি বিকিরণ রশ্মির কাছে যান তাহলে আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 থাইরয়েড ক্যান্সার হলে শরীরে যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে?

সাধারণত থাইরয়েড ক্যান্সার হলে আপনার শরীরে নিম্নলিখিত লক্ষ্মণগুলো দেখা দিয়ে থাকে। লক্ষ্মণ গুলো দেখা দিলে আপনাকে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। লক্ষ্মণ গুলো হল

খাদ্যবস্তু গিলতে অসুবিধা :

আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার হলে খাদ্যবস্তু বা খাবার গিলে ফেলানোর সময় অসুবিধা দেখা দিতে পারে।

 নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া :

থাইরয়েড ক্যান্সার হলে আপনার নিঃশ্বাস নেয়ার সময় অসুবিধা করতে পারে। সময়আপনার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে নিতে অনেক কষ্ট হতে পারে।

গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া :

থাইরয়েড ক্যান্সার হলে আপনার গলার স্বরে পরিবর্তন আসতে পারে অর্থাৎ গলা ভারী ভারী লাগতে পারে বা গলা বসে যেতে পারে। সময় গলার আওয়াজ ভাঙ্গা ভাঙ্গা মনে হয়।

কথা বলতে অসুবিধা হওয়া :

থাইরয়েড ক্যান্সার হলে আপনি কথা বলতে গেলে আটকে যেতে পারেন। সময় স্পষ্ট কথা বলতে সমস্যা দেখা দেয়।

গলা ঘাড় ফুলে যাওয়া :

থাইরয়েড ক্যান্সারে আপনার গলা এবং ঘাড়ের চারপাশ ফুলে যেতে পারে।

গলা ব্যাথা করা :

আপনার গলা বা থাইরয়েড গ্রন্থি ব্যাথা করতে পারে থাইরয়েড ক্যান্সার হলে।

সর্দি-কাশি হওয়া :

আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার হলে ঘন ঘন সর্দি-কাশির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন:কোলন ক্যান্সার হলে  শরীরে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে ?

 থাইরয়েড ক্যান্সার হলে যে ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয় 

আপনার গলায় বা থাইরয়েড ক্যান্সারের অবস্থান ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসক নিম্নলিখিত পরীক্ষা-নীরিক্ষা গুলো করে থাকেন। পরীক্ষা-নীরিক্ষা গুলো হল


থাইরয়েড ক্যান্সার হলে কোন ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয় ?,থাইরয়েড ক্যান্সার হলে কী উপায়ে প্রতিকার করবেন ?,,কীভাবে আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন ?


* Blood Test (রক্ত পরীক্ষা)

* Thyroid Scan (থাইরয়েড স্ক্যান)

* Thyroid Ultrasound (থাইরয়েড আল্ট্রাসাউন্ড)

* Thyroid Function Test (থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা)

* Thyroglobulin Test (থাইরোগ্লোবুলিন পরীক্ষা)

* Imaging Test (ইমেজিং পরীক্ষা)

* Nuclear Imaging Test (নিউক্লিয়ার ইমেজিং পরীক্ষা)

* Genetic Test (জেনেটিক পরীক্ষা)

* Thyroid Biopsy (থাইরয়েড বায়োপসি)

 

উপরিউক্ত পরীক্ষা-নীরিক্ষাগুলো করার আগে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ

গ্রহণ করতে হবে।

 আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার হলে কী উপায়ে প্রতিকার করবেন ?

থাইরয়েড ক্যান্সার হলে সর্বপ্রথমেই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এরপর চিকিৎসক আপনার শরীরে ক্যান্সারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজন বোধে নিচের পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে থাকেন। পদ্ধতি গুলো হল

থাইরয়েড গ্রন্থির সার্জারি :

থাইরয়েড ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সাধারণত চিকিৎসকরা থাইরয়েড গ্রন্থিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ বা টিউমার অপসারণ করে ফেলেন।

থাইরয়েড হরমোন থেরাপি :

এই থেরাপি থাইরয়েড ক্যান্সার সার্জারি করার পরে দেয়া হয়। এই থেরাপিতে সাধারণত চিকিৎসক নির্দিষ্ট হরমোন আপনার শরীরে প্রয়োগ করিয়ে থাকেন।

তেজস্ক্রিয় আয়োডিন থেরাপি :

থাইরয়েড ক্যান্সার সার্জারি করার পরে চিকিৎসকরা এই থেরাপি দিয়ে থাকেন। এই থেরাপিতে থাইরয়েড ক্যান্সারের কোষগুলো পুরোপুরি মারা গেছে কি না তা নিশ্চিত করা হয়।

 বিকিরণ থেরাপি :

এটিও থাইরয়েড ক্যান্সার সার্জারির পরে দেয়া হয়। এই পদ্ধতি থাইরয়েড ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করতে ব্যাবহার করা হয়।

কেমোথেরাপি :

এই পদ্ধতির মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যান্সারের কোষগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়।

টার্গেটেড থেরাপি :

এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ প্রয়োগ করে থাইরয়েড ক্যান্সারের অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়।

কীভাবে আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন ?

থাইরয়েড ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং সেগুলো ঠিক মত পালন করতে হবে। বিষয়গুলো হল

জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা :

আপনাকে থাইরয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য সবার আগেই জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন করা দরকার। রোগ-ব্যাথি সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। অসুখ- বিসুখ দেখা দেয়ার সাথে সাথে হেলা-ফেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জাঙ্ক ফুড ত্যাগ করা :

থাইরয়েড ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাইরের তৈরি অস্বাস্থ্যকর খাবার বা জাঙ্ক ফুড বর্জন করতে হবে।

সুষম খাবার খাওয়া :

আপনাকে থাইরয়েড ক্যান্সারের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজী, ফলমূল খেতে হবে। এগুলো আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় মিনারেল এর চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।

খাদ্যবস্তু চিবিয়ে খাওয়া :

থাইরয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই খাদ্যবস্তু চিবিয়ে খেতে হবে। এর ফলে খাদ্যবস্তু শীঘ্রই থাইরয়েড গ্রন্থি বিপাক হয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। যার ফলে আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।

আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা :

আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা আপনার থাইরয়েডের জন্য অধিক কার্যকরী। তাই থাইরয়েড ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে বেশি বেশি করে আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

আদা :

আদায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকায় এটি আপনার থাইরয়েডের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে।

ভিটামিন বি :

ভিটামিন বি আপনার থাইরয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী পালন করার ক্ষমতা রয়েছে। এজন্য আপনাকে বেশি করে ভিটামিন বি জাতীয় খাবার যেমন : মাছ, মাংস,ডিম, দুধ প্রভৃতি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

 আরও পড়ুন:মুখের ক্যন্সার কী ? মুখের ক্যন্সারের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো কী কী ?

পরিশেষে বলা যায় যে,

আমরা জানি থাইরয়েড ক্যান্সার একটি জটিল ব্যাধি। থাইরয়েড ক্যান্সারের জীবাণু পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়লে বাঁচার আশঙ্কা অনেক কমে যেতে পারে। তাই এর লক্ষ্মণ গুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এবং লক্ষ্মণ প্রকাশের সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের চিকিৎসা করালে আপনি দ্রুতই এই রোগ থেকে সেরে উঠে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। তাই আপনি যদি থাইরয়েড ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চান তাহলে অবশ্যই উপরিউক্ত বিষয়গুলোর লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সেগুলো মেনে চলতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

Post a Comment

Previous Next