জরায়ুতে সিস্ট কেন হয় ? জরায়ুতে সিস্ট হলে কি করবেন ? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন –
![জরায়ুতে সিস্ট কেন হয় ? জরায়ুতে সিস্ট হলে কি করণীয় ? জরায়ুতে সিস্ট কেন হয় ? জরায়ুতে সিস্ট হলে কি করণীয় ?](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgBSY86o0_8ttXcAJr6i8GXv7fu9o9nj2Rb3i0838Cj2VjMEz2Bza-JeVYPrX5Mw2rWMUTDtKlPvBaSW9yfr9X2fA8l8Hu1tSfWdcdUQmgx22ru4pj-XCy2GkN5vt_Toc85EyqzPsfPrZl6iCYiomTRyprczLQI-1HxSchUf6UunGGoAJff5NoN-rtNYu4/w400-h240/%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A7%87%20%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%20%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87%20%E0%A6%95%E0%A6%BF%20%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A7%9F.jpg) |
জরায়ুতে সিস্ট |
ওভারিয়ান সিস্ট বা জরায়ুর সিস্ট এখন খুবই কমন একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি চার থেকে পাঁচ জন নারীর মধ্যে এক জন নারীর জরায়ুতে এই সিস্টের প্রবলেম আছে। বিশেষজ্ঞ দের মতে, মূলত জীবনযাত্রার মানের আমূল পরিবর্তনের কারণে এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আর অধিকাংশ নারীরাই এই রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে ঠিক মত জানেন না বলে শরীরের ভিতরে রোগটি পুষে রাখেন। এর ফলে রোগটি আরও বেশি জটিল আকার ধারণ করতে পারে যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। সেজন্য আমাদেরকে এই বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা খুবই জরুরি।
এখন আসুন আমরা জরায়ুর সিস্ট হওয়ার কারণ এবং প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই,
জরায়ুর সিস্ট কি ?
জরায়ুর সিস্ট বা ওভারির সিস্ট হল এক ধরনের তরল পূর্ণ থলি যা আপনার একটি কিংবা দুটি জরায়ুর মধ্যেই দেখা দিতে পারে।
জরায়ুতে সিস্ট কেন হয় ?
ওভারি বা ডিম্বাশয় এর প্রধান কাজ হল ডিম্বাণু তৈরী করা। এই ওভারিতে প্রতি মাসেই ডিম্বাণু তৈরী হয়ে থাকে। ওভারিয়ান সিস্ট বা জরায়ুতে সিস্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল ওজন বেড়ে যাওয়া। ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে আপনার শরীরে হরমোনাল ইমব্যালেন্স তৈরি হতে পারে। এর ফলে আপনার শরীরে পুরুষ জাতীয় হরমোনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে কনসিকোয়েন্স হিসেবে আপনার ওভারিতে সিস্ট তৈরি হতে পারে।
এছাড়া ও প্রাকৃতিক নিয়মে যখন ওভ্যুলেশনের সময় আসে তখন ওভারির ভেতর সিস্টের মতো দেখতে এক ধরণের ফলিকলের সৃষ্টি হয়। ডিম্বাণু নিঃসরণের পরে এই পরিণত ফলিকল গুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আর এই প্রক্রিয়াটি যখন ঠিকঠাক ভাবে চলবে না তখন ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
জরায়ুতে সিস্ট হলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে ?
জরায়ুতে সিস্ট হলে আপনার শরীরে যে ধরনের লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
তলপেটে ব্যথা করা :
জরায়ুতে সিস্ট হলে এর প্রাথমিক উপসর্গ হিসাবে আপনার তলপেটে হালকা ব্যথা হতে পারে।
তীব্র ব্যথা করা :
এই সিস্ট জটিল আকার ধারণ করলে ফেটে যেতে পারে। এর ফলে আপনার গায়ে তীব্র ব্যথা হতে পারে। সেই সাথে রক্ত বের হতে পারে। অনেক সময় প্রস্রাব বা মলত্যাগ করতেও সমস্যা হতে পারে।
অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া :
ওভারিয়ান সিস্ট হলে আপনার পিরিয়ড ঠিকমতো না হতে পারে এবং পিরিয়ড হওয়ার সময় ব্যথা আগের থেকে অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি যৌনমিলনের সময় ব্যথা আগের থেকে বেশি অনুভব হতে পারে।
জরায়ুতে সিস্ট হলে কি করনীয় ?
জরায়ুর সিস্ট প্রতিকারের উপায় গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
হিটিং প্যাড :
জরায়ুর সিস্টের সমস্যা প্রতিকারের অন্যতম ঘরোয়া উপায় হল হিটিং প্যাড ইউজ করা বা গরম পানির স্যাক দেয়া। কারণ সাধারণত এই অসুখ হলে আপনার তলপেটে ব্যথা হবে। হিটিং প্যাড ব্যবহার করার ফলে শরীরে যে তাপ হবে তা আপনার রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যথা কমাতেও সাহায্য করবে। এই প্রতিকারটি ব্যবহারের জন্য আপনি একটি হিটিং প্যাড বা গরম পানির বোতলে তোয়ালে জড়িয়ে নিয়ে পেটে বা পিঠের নিচের দিকে প্রায় ২০ মিনিটের মত বোতলটি ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। এ রকম করে দিনে কয়েক বার করুন।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা :
জীবন বাঁচানোর জন্য পানি অপরিহার্য। বেশি পরিমাণে পানি পান করলে বা তরল জাতীয় খাবার বেশি খেলে এতে থাকা উপদান গুলো আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করবে। গবেষণায় দেখা গেছে ওভারিয়ন সিস্ট হওয়া রোধ করতে পানি বা তরল জাতীয় খাবার খুবই কার্যকরী একটি প্রতিকার।
আরও পড়ুন:
ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা :
জরায়ুর সিস্টের যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম আরেকটি কার্যকরী উপায় হল ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা। অধিকাংশ নারীরাই এই সিস্ট হলে সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকেন। কিন্তু এটা করা ঠিক নয়। এ সময় শরীরকে হালকা নড়াচড়া করানো উচিত।এটি করার ফলে আপনার সিস্টের কারণে যে ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি হয়েছে তা সহজেই কমে যাবে।
হার্বস বা জড়িবুটি :
হার্বস বা জড়িবুটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সমস্যার সাথে মোকাবিলা করতে খুবই কার্যকরী। গবেষণায় দেখা গেছে, জড়িবুটি ওভারিয়ান সিস্টের প্রবলেম দূর করার পাশাপাশি নতুন সিস্ট গঠনে বাঁধা দিবে। হার্বস বা জড়িবুটির মধ্যে মিল্ক থিসেল সীড, ব্ল্যাক কোহশ প্রভৃতি জড়িবুটি ওভারিয়ন সিস্টের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে।
বীট কপি :
জরায়ুর সিস্ট প্রতিকারে বীট কপি ও ভাল উপকারী। এতে রয়েছে বিটাসায়ানিন নামক একটি বিশেষ উপাদান। এই উপাদানটি বীটে উপস্থিত অন্যান্য ক্ষারীয় এজেন্টের সাথে বিক্রয়া করে সিস্টের কারণে হওয়া ক্রাম্প বা খিঁচুনিকে প্রশমিত করে ফেলে। বিটাসায়ানিন বিট কপিতে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় বলে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে এটি বেশি করে খাবেন।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার :
ওভারিয়ান সিস্ট প্রতিকারের আরেকটি প্রাকৃতিক উপায় হল অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। এটি ক্ষারীয় এবং পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ। ওভারিয়ান সিস্ট হলে যদি আপনি অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার খান তাহলে এতে থাকা ঐ দুটি উপাদান আপনার ওভারিয়ান সিস্টকে সংকুচিত করতে সাহায্য করবে। অতি দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য আপনি এটিকে ব্ল্যাক স্ট্র্যাপ মোলাসেস বা কালো গুড় এর সাথে মিক্সড করে সেবন করতে পারেন।
ক্যামোমাইল টি :
ক্যামোমাইল টি জরায়ুর সিস্ট ভাল করতে খুবই উপকারী। এই রোগ হলে সাধারণত একজন মহিলাকে প্রচন্ড ব্যাথা ও অসুবিধায় ভুগতে হয়। তাই এ সময় যদি সে এক কাপ ক্যামোমাইল টি খেতে পারে তাহলে নিমিষেই সে এই ব্যথা নিস্তার পেতে পারে। এর পাশাপাশি তার যদি পেশী টান বা খিঁচুনি সমস্যা থাকে ক্যামোমাইল টি সেই সমস্যা লাঘব করে দিতেও কাজ করবে।
ক্যাস্টর ওয়েল প্যাক :
ক্যাস্টর ওয়েল ওভারিয়ান সিস্ট নিরাময়ের জন্য জনপ্রিয় উচ্চ ক্ষমতাশালী একটি প্রতিকার। এটি আপনার রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করবে। যার জন্য আপনার ওভারিয়ান সিস্ট সহজেই নিরাময় করা সম্ভব হবে। ক্যাস্টর ওয়েলে ব্যবহারের জন্য আপনি একটি পরিষ্কার কাপড় নিয়ে তা পানিতে ভাল করে ভিজিয়ে নিন। এরপর আরাম পাওয়ার জন্য প্রভাবিত জায়গায় ওপর রেখে দিবেন। উপকার নিজেই বুঝতে পারবেন।
শেষ কথা :
আমাদের সমাজে এই রোগ ধরা পড়লে অধিকাংশ মহিলাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করে। এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। কারণ সব সমস্যারই সমাধান রয়েছে। সে জন্য সিস্টের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথেই উপরিউক্ত প্রতিকার গুলো অনুসরণ করবেন এবং তৎক্ষনাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। সময় মতো চিকিৎসা করালে আপনি সহজেই এই রোগ থেকে নিস্তার পেতে পারেন।