সিজার কতবার করা নিরাপদ?

একজন মা সাধারণত কতবার সিজার করতে পারে?
সিজার কতবার করা নিরাপদ

সিজারিয়ান ডেলিভারি একটি জটিল অস্ত্রোপচার। তাই এটি একাধিকবার করা হলে মায়ের স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত তিনবারের বেশি সিজারিয়ান ডেলিভারি করা উচিত নয়। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন মায়ের শারীরিক অবস্থা বা পূর্বের সিজারিয়ান ডেলিভারিতে কোনো জটিলতা না থাকলে, চারবার পর্যন্তও সিজার করা যেতে পারে।

সিজারে যেসব ঝুঁকি দেখা দিতে পারে

তবে, প্রতিবার সিজারিয়ান ডেলিভারির সাথে কিছু ঝুঁকি জড়িত থাকে, যা নিচে আলোচনা করা হলো:

  • জরায়ুতে ক্ষত: 
  • প্রতিবার সিজারের সময় জরায়ুতে নতুন করে ক্ষত তৈরি হয়। ফলে জরায়ু দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং পরবর্তী গর্ভধারণে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত রক্তপাত: 
  • সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে, যা মায়ের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।সংক্রমণ: সিজারিয়ান ডেলিভারির পর মায়ের শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
  • অর্গান ক্ষতিগ্রস্ত: 
  • একাধিকবার সিজারের ফলে পেটের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন মূত্রাশয় বা অন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • গর্ভফুল আটকে যাওয়া: 
  • আগের সিজারের কারণে গর্ভফুল জরায়ুতে আটকে যেতে পারে, যা পরবর্তী গর্ভধারণে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • শিশুর শ্বাসকষ্ট:
  •   সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুদের শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে।
প্রয়োজনে আরো জানুন,

সিজার কখন করাবেন?

সিজারিয়ান ডেলিভারি কখন করাতে হবে তা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের উপর। জরুরি অবস্থা এবং আগে থেকে পরিকল্পনা করে এই দুই ভাবে সিজার করা হয়। নিচে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

জরুরি অবস্থা:

  • শিশু যদি গর্ভে শ্বাসকষ্টে ভোগে।
  • প্রসবের সময় যদি শিশুর হৃদস্পন্দন কমে যায়।
  • যদি গর্ভফুল জরায়ুর মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে।
  • প্রসবের সময় যদি মায়ের অতিরিক্ত রক্তপাত হয়।
  • যদি প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার পরও জরায়ুর মুখ না খোলে।
  • যদি শিশু অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকে, যেমন আড়াআড়ি বা পা নিচের দিকে থাকে।
  • যদি গর্ভনালীতে সমস্যা দেখা দেয়।

পরিকল্পিত সিজার:

  • যদি মায়ের পেলভিস (শ্রোণী) ছোট হয়।
  • যদি মায়ের যোনিতে বাধা থাকে।
  • যদি মায়ের আগে দুই বা ততোধিক সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়ে থাকে।
  • যদি মায়ের কোনো শারীরিক জটিলতা থাকে, যেমন হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ।
  • যদি গর্ভের শিশুর আকার খুব বড় হয়।
  • গর্ভে যদি একাধিক শিশু থাকে।

সিজারের সুবিধা:

সিজারিয়ান ডেলিভারির কিছু সুবিধা রয়েছে। নিচে কয়েকটি সুবিধা আলোচনা করা হলো:

  • জীবন রক্ষাকারী:
    • জরুরি পরিস্থিতিতে, যখন স্বাভাবিক প্রসব মা বা শিশুর জন্য বিপজ্জনক হয়, তখন সিজারিয়ান ডেলিভারি জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।
    • যেমন: গর্ভফুল জরায়ুর মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে রাখলে, প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হলে বা শিশুর হৃদস্পন্দন কমে গেলে সিজার করা জরুরি হয়ে পড়ে।
  • পরিকল্পিত প্রসব:
    • কিছু ক্ষেত্রে, আগে থেকেই সিজারিয়ান ডেলিভারির পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
    • যেমন: মায়ের পেলভিস ছোট হলে, আগে দুই বা ততোধিক সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়ে থাকলে বা মায়ের কোনো শারীরিক জটিলতা থাকলে।
  • শিশুর সুরক্ষা:
    • কিছু পরিস্থিতিতে, সিজারিয়ান ডেলিভারি শিশুর জন্য নিরাপদ হতে পারে।
    • যেমন: শিশু যদি অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকে বা গর্ভে শ্বাসকষ্টে ভোগে।
  • নিয়ন্ত্রিত প্রসব:
    • সিজারিয়ান ডেলিভারি আগে থেকে পরিকল্পনা করা যায় বলে এই প্রক্রিয়ায় প্রসবের সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
    • অতিরিক্ত প্রসব বেদনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সিজারের অসুবিধা:

সিজারিয়ান ডেলিভারির কিছু অসুবিধা রয়েছে। নিচে কয়েকটি অসুবিধা আলোচনা করা হলো:

  • পুনরুদ্ধারের সময়: সিজারিয়ান ডেলিভারির পর স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে বেশি সময় লাগে সুস্থ হতে। পেটের ক্ষত শুকাতে এবং ব্যথা কমাতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।
  • ব্যথা: সিজারিয়ান ডেলিভারির পর কয়েকদিন পর্যন্ত পেটে ব্যথা থাকতে পারে। ব্যথানাশক ওষুধেও পুরোপুরি ব্যথা কমে না।
  • সংক্রমণ: সিজারিয়ান ডেলিভারির পর ক্ষতস্থানে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
  • রক্তপাত: সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় বেশি রক্তপাত হতে পারে, যা মায়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
  • জটিলতা: কিছু ক্ষেত্রে, সিজারিয়ান ডেলিভারির কারণে জরায়ু, মূত্রাশয় বা অন্ত্রের মতো অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • বুকের দুধ: সিজারিয়ান ডেলিভারির পর মায়ের বুকের দুধ আসতে কিছুটা দেরি হতে পারে।
  • খরচ: সিজারিয়ান ডেলিভারি স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
  • পরবর্তী গর্ভধারণ: সিজারিয়ান ডেলিভারির পর পরবর্তী গর্ভধারণে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন গর্ভফুল জরায়ুতে আটকে যাওয়া বা জরায়ু ফেটে যাওয়া।

শেষ কথা:

সিজারিয়ান ডেলিভারির সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই রয়েছে।তাই, সিজারিয়ান ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক মায়ের শারীরিক অবস্থা এবং পূর্বের ডেলিভারির ইতিহাস বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

Post a Comment

Previous Next