পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার কারণ ও করনীয় কি?

পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার কারণ ও করনীয় কি? বিস্তারিত


পিরিয়ড হলো একটি শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।যার সাথে প্রজনন সম্পর্ক ওতপ্রতভাবে  জড়িত।




অথাৎ,প্রতি মাসে হরমোনের জন্য মেয়েদের জরায়ু থেকে যে নিঃসৃত অংশ রক্ত যোনিপথ দিয়ে  আসে তাকে পিরিয়ড বলা হয়। সাধারণত ১২ থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারীদের নারীদের  ২৮ থেকে ৩০ দিন পর পর পিরিয়ড বা মাসিক হয়।সময়মত নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া নারীদের জন্য ভালো। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম থাকে।কিন্তু  যদি ২১ দিন আগে বা ৩৫ দিন পরে হলে এবং যদি তিন দিনের কম বা সাত  দিনের বেশি থাকে , তাহলে  তাকে অনিয়মিত ঋতুচক্র বলা হয়।

তবে একবার পিরিয়ড দেরিতে যদি হয় তহলে চিন্তার কিছু নেই। খেয়াল রাখতে হবে  তিন মাস একসাথে  পিরিয়ড না হলে, বছরে  যদি নয় বারের কম পিরিয়ড হয়  বা প্রতিবার পিরিয়ড হওয়ার ভিতরে  ৩৫ দিনের  চেয়ে বেশি বিরতি থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 অনিয়মিত পিরিয়ড হলে যে সমস্যা হয়

 . অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া।

.খিটখিটে মেজাজ মানষিক অশান্তি।

.নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় পিরিয়ড স্থায়ী হওয়া।

.মাথা ব্যাথা,অস্থিরতা।

.বাচ্চা ধারন ক্ষমতা কমে যাওয়া।

.অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেগন্যান্সি ইত্যাদি।

 তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ

বিভিন্ন কারনে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।তার মাঝে কিছু উল্লেখযোগ্য কারন আলোচনা করা হলো----

.শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।

 .অতিরিক্ত মানসিক যন্ত্রনা।

.ওজন কমে যাওয়া।

.প্রয়োজনের অধিক শরীরচর্চা করা।

.জরায়ুতে টিউমার।

.শারীরিক সমস্যা।

.জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন পিল এবং কপার টি ব্যবহার।

.সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো।

.পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম।

১০. বিভিন্ন  হরমোনের তারতম্যের জন্যে।

১১.শারীরিক পরিশ্রম।

১২.থাইরয়েড এর সমস্যা।

 তাড়াতাড়ি বা নিয়মিত মাসিক হওয়ার ঘরোয়া উপায়

পিরিয়ড নিয়মিত করতে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের থেরাপি  দিয়ে থাকেন। যার ফলে কারো কারো পা ব্যথা, পেট ব্যথা, মাথাব্যথা, খাবারে অরুচি, মোটা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই  পিরিয়ড অনিয়মিত হলে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা ---


                                                 পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার কারণ ও করনীয় কি?, অনিয়মিত পিরিয়ড হলে যে সমস্যা হয়,তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ,.


.অ্যালোভেরা:

ঘৃতকুমারী বা আ্যলোভেরার ভিতরের অংশ বা শাস যা রূপচর্চা, চুলের যত্নে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।এগুলোর পাশাপাশি পিরিয়ড  নিয়মিত  করতে খুব  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া হরমোন রেগুলেশন- সাহায্য করে এই আ্যলোভেরা। বেশি ভালো ফলাফল পেতে হলে তার  জন্য প্রতিদিন সকালে  তাজা অ্যালোভেরার পাতার রস একটু মধু দিয়ে  মিশিয়ে খেতে হবে খালি পেটে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন  পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায়  না খাওয়া হয়।

আরও পড়ুন:

মাসিকের আগে ও পরে স্তন ব্যথায় করণীয় কি ?

মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব(  Leucorrhoea) এর কারণ এবং করণীয় কি ?

 .কাঁচা পেপেঃ

কাঁচা পেপে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে যেমন ত্বক মসৃন রাখে,হজমে সাহায্যে করে,ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।   এছাড়াও  এটি পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে।পিরিয়ড রেগুলেশন এর  সাহায্য করে থাকে   জরায়ুর মাসল ফাইবার কন্ট্রাকশন- সাহায্য করে থাকে কাচাঁ পেপে।  নিয়মিত কয়েক মাস পর পর কাঁচা পেপের রস খাওয়া হলে পিরিয়ড নিয়মিত হয়।কিন্তু পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় এটা না খাওয়ায় উচিত।

 . আদাঃ

ঠান্ডা -কাশি,গ্যাস,গলা ব্যাথা ইত্যাদি সারাতে আদার গুনের কোন তুলনা হয়না। তেমনি অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করতে আদার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন খাবার পর তিন বেলায়  কাপ  পরিমাণ পানিতে চা চামচ পরিমাণ আদা কুঁচি দিয়ে  - মিনিট পর্যন্ত  ফুটিয়ে নিতে হবে।তারপর  এর সাথে অল্প পরিমাণে  মধু  বা চিনি মিশিয়ে নিয়ে খেতে হবে। তবে  মনে রাখতে হবে , এই পানীয়টি খালি পেটে  খাওয়া যাবে না ।কিছু মাসের ভিতরই  এর ফল  পাবেন। পিরিয়ড সাইকেল রেগুলেশন- সাহায্য করে করে থাকে আদা।  অনিয়মিত পিরিয়ড  কে নিয়মিত করে দেয় এই আদা।

.অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারঃ  

রক্তে ইনসুলিন সুগার এর মাত্রার তারতম্য এর ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার-এর ফলে  আপনি আপনার অনিয়মিত পিরিয়ড  অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন।

এক গ্লাস পানির সাথে  চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার নিয়ে   খাবার  আগে প্রতিদিন  খেতে হবে। পিরিয়ড সাইকেল নিয়ন্ত্রণে  অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে এই আ্যপেল সাইডার ভিনেগার।

 .মেডিটেশন এবংযোগ ব্যায়াম :

পিরিয়ড  নিয়মিত না হওয়ার প্রথম কারণগুলোর ভিতরে  প্রধান কারণ হল  মানসিক চাপ। শরীরে যেসকল  হরমোন পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকে  স্ট্রেস-এর জন্য সেগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে সময় মত পিরিয়ড হয় না।মেডিটেশন এবং যোগ ব্যায়াম স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে থাকে। সব থেকে উপযোগী পদ্ধতির মাঝে  এই দুটি বেশ উপযোগী

.দারুচিনিঃ

যে সকল খাবার বহু গুনের জন্য গুনান্বিত  দারুচিনি তার মাঝে  অন্যতম। অনিয়মিত পিরিয়ড সরাতে হলে  লেবুর রস বা চার  সাথে দারুচিনি গুড়া করে মিশিয়ে খেতে হবে। এতে পিরিয়ড নিয়মিত৷ হয় এবং তার সাথে পিরিয়ড চলাকালীন ব্যথা কমাতে  সাহায্য করে।

 .কাঁচা হলুদ:  

মসলা জাতীয় দ্রব্য হলেও হলুদ সেই  প্রাচীন কাল থেকেই চিকিৎসা বিষয়ে  এর ব্যবহার বিভিন্নমুখী    শরীরে হরমোনের ভাসাম্য  ঠিক রাখতে  এবং অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করতে কাচাঁ হলুদ সাহায্য করে থাকে ।এছাড়াও  কাঁচা হলুদ জরায়ু সঙ্কোচন-প্রসারণ  করে থাকে। তাছাড়া কাচাঁহলুদের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি  পিরিয়ড-এর ব্যাথা  কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। এক কাপ পরিমাণ  দুধের সাথে  চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা হলুদ   গুড় বা মধু  দিয়ে কিছুদিন খেতে হবে।

 .জিরাঃ

পিরিয়ড  নিয়মিত করতে জিরা খুব ভালো কাজে করে।  এক গ্লাস পানির সাথে  চা চামচ জিরা দিয়ে  সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর পরের দিন সকালে সেই  পানি জিরা  খেয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত পান করলে  সুফল পাওয়া যাবে।

আরও জানুন :

মেয়েদের যোনিপথে চুলকানির কারণ ও করনীয় কি ?

 .সবজির জুস ফলঃ 

খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন  বেশি বেশি করে  সবজির জুস ফল  রাখুন। এতে করে  শরীর ঠাণ্ডা রাখবে  হরমোন রেগুলেশন-এর সাহায্য হবে। যেমন- পুদিনা পাতাগাজর,করলার রস, ভিটামিন সি জাতীয় ফলের রস ইত্যাদি প্রতিদিন  দিনে দুইবার করে পান করতে পারেন। কিন্তু পিরিয়ড নিয়মি হতে গাজর আঙুরের রস  খুব ভালো এবং  বেশি উপকরী।

 উপরিউক্ত  ঘরোয়া পদ্ধতি পালন করার পরেও যদি  কোন উপকার না পান তবে অবশ্যই  একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কখন  চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নিবেন ?

. দিন দিন পিরিয়ডের ভিতরের সময়ের ব্যাবধান পরিবর্তন দেখা দিলে।

.৩৫ দিনের পর ২১ দিনের আগে পিরিয়ড হলে।

.পিরিয়ডের স্থানীত্ব সময় যদি দিনের বেশি বা দিনের কম হয়।

.পিরিয়ড এর সময় অতিরিক্ত পেটে ব্যাথা অতিরিক্ত রক্তপাত যদি হয়।

.মানসিক চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।

.বছরে তিন বা তিন বারের  কম বার পিরিয়ড  হলে।

একটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত,

 শরীরে আয়রনের কমতি  হলে অনিয়মিত পিরিয়ড এর  সমস্যা হতে পারে। সেজন্য এই বিষয় গুলোর  পাশাপাশি লৌহসমৃদ্ধ খাবার  বা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গরু মাংশ ডিম, মুরগীর মাংস, কলিজা, চিংড়ি, ডাল, লাল শাক, কচুশাক,পালং শাক, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, মটরশুঁটি, তরমুজ, গাব, টমেটো, ডাল, ভুট্টা,খেজুরশস্যদানা ইত্যাদি প্রচুর  খেতে হবে।
               


Post a Comment

Previous Next