জেনে নিন,জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা গুলো কি কি ?

 আপনি কি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (Contraceptive Pill) সেবন করেনপিল সেবন করার নিয়ম এবং সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে কি অজ্ঞত আছেন? তাহলে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা গুলো কি কি ?

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ দম্পতি ব্যস্ততা সচেতনার কারণে বাচ্চা দেরিতে নিতে চান। অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অনেক নারীরা এখন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন করেন। 

তবে এই পিল খাওয়ার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম, সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে যে গুলো সম্পর্কে না জেনে পিল সেবন করলে হিতের বিপরীত হতে পারে অর্থাৎ আপনার শরীরে গর্ভ নিরোধক পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এর ফলে আপনার শরীরে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। 

যা পরবর্তীতে আপনার গর্ভাবস্থার সময়, বাচ্চা প্রসব করার সময়, গর্ভধারণ হওয়ার পথে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এজন্য এই পিল এর ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল কি? What is Contraceptive Pill?

গর্ভনিরোধক ওষুধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলকে ইংরেজিতে আমরা Contraceptive Pill বলে থাকি। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল হল এক ধরনের বড়ী বা পিল যা নারীরা সেবন করলে ডিম্বাণুর নির্গমন হতে পারে না এবং গর্ভধারণের আশঙ্কা থাকে না। গর্ভনিরোধক ওষুধ মূলত এস্ট্রোজেন-প্রজেস্টরন হরমোনের সংমিশ্রণে তৈরী বড়ী বা পিল।

আরও জানুন...

গর্ভপাত (Miscarriage) কেন হয় ?জেনে নিন ,গর্ভপাত (Miscarriage )এর লক্ষণ সমূহ কি কি ?

 Insomnia বা নিদ্রাহীনতা আপনার শরীরে মারাত্নক প্রভাব ফেলতে পারে 

 ব্রেস্ট ক্যান্সার কী? এটি হওয়ার কারণ এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপায় কি?

কোন উপায়ে আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (Contraceptive Pill)সেবন করবেন ?

কোন উপায়ে আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (Contraceptive Pill)সেবন করবেন ?


গর্ভনিরোধক ওষুধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। সে গুলো হলো

* আপনার পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে পঞ্চম দিনের মধ্যে যে কোন দিনের মধ্যে আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া শুরু করতে পারেন।

* রাতের খাবারের পরে আপনাকে এই পিলটি খেতে হবে। যদি কোন দিন আপনি পিল   খেতে ভুলে যান তাহলে তার পরের দিন দুটি পিল খেতে হবে।

* আপনি যদি বাচ্চা নিতে চান তাহলে আপনাকে - মাস আগের থেকে পিল খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

তবে গর্ভনিরোধক ওষুধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এর ফলে পিল খেলে আপনার শরীরে কোন ক্ষতি হবে কি না সে সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন। 

 

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল কাদের জন্য প্রযোজ্য ?

আপনার বয়স যদি ৪০ বছরের কম হয় তাহলে আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ খেতে পারেন। তবে ৪০ বছরের পর এই পিল খেলে আপনার হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিস, মাইগ্রেন ইত্যাদি সমস্যা থাকলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করলে আপনার শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

কি কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার পরে গর্ভধারণ হতে পারে ?

                            

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলসেবন করার পরেও যে কারণে আপনার গর্ভধারণ হতে পারে তা নিচে আলোচনা করা হলো

* আপনি যদি নিয়মিত পিল না খান সেক্ষেত্রে আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

* নিয়মিত সঠিক সময়ে যদি আপনি পিল না খান তাহলে পিলের কার্যকারিতা কমে যেতে থাকে। এর ফলে আপনার গর্ভধারণ হতে পারে।

* দীর্ঘ দিন ধরে আপনি যদি অ্যান্টি-ফানগাল ড্রাগ নেন তাহলে এই গর্ভনিরোধক ওষুধের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। 

* আপনি যদি কোন ধরনের হার্বাল সাপ্লিমেন্ট সেবন করেন সেক্ষেত্রে এই জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যার ফলে আপনার গর্ভধারণ হতে পারে।

 জেনে নিন..


জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করলে কি কি সুবিধা হতে পারে ?

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ খেলে আপনার শরীরে যে সুবিধা গুলো দেখা দিতে পারে সে গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

নিয়মত পিরিয়ড হওয়া :

আপনার যদি অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা থাকে তাহলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে আপনার অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং নিয়মিত পিরিয়ড হবে।

ব্রণের সমস্যা দূর হওয়া :

আপনি যদি ব্রণের সমস্যায় ভুগেন তাহলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল আপনার ব্রণের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে Oral Contraceptive Pill ব্রণের সমস্যা দূর করতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

টেনশন কমে যাওয়া :

নিয়মিত গর্ভনিরোধক ওষুধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করলে এটি আপনার টেনশন বা দুশ্চিন্তাকে কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কমে যাওয়া :

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক কমিয়ে দিতে পারে।

তলপেটের প্রদাহ লোপ পাওয়া :

আপনার যদি ঘন ঘন তলপেটে প্রদাহ বা করে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার ফলে আপনার এই ব্যাথার তীব্রতা অনেকাংশেই লোপ পেতে পারে।

এটোপিক প্রেগন্যান্সি ঝুঁকি কমে যাওয়া :

নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার ফলে এটি আপনার এটোপিক প্রেগন্যান্সির হওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিতে পারে। 

ব্রেস্টের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া :

গর্ভনিরোধক ওষুধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে আপনার ব্রেস্টে ব্যথাসহ, ব্রেস্টের কিছু রোগ সৃষ্টি হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

সিস্টের ঝুঁকি কমে যাওয়া :

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করলে এটি আপনার ওভারি বা ডিম্বাশয়ে সিস্টের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

আর্থ্রাইটিসের ভয় কেটে যাওয়া :

এই পিল খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। 

যৌনাঙ্গের প্রদাহ জনিত রোগ সৃষ্টি প্রতিহত করা :

নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করার ফলে এটি আপনার যৌনাঙ্গের প্রদাহ জনিত রোগ যেমন ক্যান্সার, টিউমার সৃষ্টিকে প্রতিহত করতে পারে।


জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে শরীরে কি কি অসুবিধা হতে পারে ?

আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ দীর্ঘ দিন ধরে সেবন করলে আপনার শরীরে যে অসুবিধা গুলো দেখা দিতে পারে সে গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতায় ভোগা :

আপনি যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল অতিরিক্ত মাত্রায় খান তাহলে আপনার শরীরে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার প্রভাব বেড়ে যেতে পারে। 

এই বিষণ্নতা থেকে ধীরে ধীরে আপনার ব্রেন বা মস্তিষ্কের ভিতরে দূর্বলতা কাজ করতে পারে এবং পরবর্তীতে আপনার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।

স্থলতায় ভুগা বা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া :

দীর্ঘ দিন ধরে যদি আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খান তাহলে আপনার শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে অথবা আপনার স্থুলতায় ভুগার ঝুঁকি বেশি থাকে। এর থেকে আপনার শরীরে নানা ধরনের জটিল রোগ যেমন : স্ট্রোক, টিউমার, ক্যান্সার ইত্যাদি দেখা দেয়ার চরম সম্ভাবনা রয়েছে।

 মেজাজ পরিবর্তন হওয়া :

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বেশি খাওয়ার ফলে আপনার মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে। অতিরিক্ত পিল খেলে আপনার অনেক সময় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে হুটহাট করে মেজাজ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এর ফলে আপনি খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যেতে পারেন।

মাথা ব্যাথা করা :

অতিরিক্ত মাত্রায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবনের ফলে আপনার মানসিক চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে সময় আপনার মাথা ব্যথা করতে পারে।

বমি বমি ভাব :

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বেশি করে খেলে আপনার শরীরের ভিতরে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আর সেই সাথে আপনার বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।

ব্রেস্টে ব্যাথা করা :

অতিরিক্ত মাত্রায় যদি আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করেন তাহলে আপনার ব্রেস্টে ব্যাথা হতে পারে। এই ব্যাথা থেকে পরবর্তীতে টিউমার, ক্যান্সার প্রভৃতি ধরণের জটিল রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

চোখে ঝাপসা দেখা :

দীর্ঘ দিন ধরে যদি আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খান তাহলে আপনার দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সময় কাছের জিনিস গুলো আপনার কাছে ঝাপসা দেখা দিতে পারে

তলপেটে ব্যাথা করা :

আপনি যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বেশি খান তাহলে আপনার তলপেটের প্রদাহ বা ব্যাথা কমার বদলে উল্টো অনেক বেড়ে যেতে পারে।

মানসিক অবসাদ বৃদ্ধি পাওয়া :

গর্ভনিরোধক ওষুধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বেশি খেলে আপনার মানসিক অবসাদ বা ক্লান্তির প্রভাব স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

 যৌনমিলনের আগ্রহ কমে যাওয়া :

জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ী বা পিল বেশি সেবন করার ফলে আপনার যৌনমিলনের আগ্রহ কমে যেতে পারে।

পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া :

অতিরিক্ত মাত্রায় যদি আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করেন তাহলে আপনার পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। 

গ্লুকোমা হওয়া :

গর্ভনিরোধক ওষুধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বেশি খেলে আপনার চোখে গ্লুকোমা দেখা দিতে পারে। চোখের এক প্রকার রোগের নাম হল গ্লুকোমা।

পড়ুন:

 গর্ভাবস্থায় মায়েরা যে সব খাবার  খেলে সন্তান মেধাবী ও বুদ্ধিমান হতে গুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে

পরিশেষে বালা যায় যে, 

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করার যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে অসুবিধা কিন্তু রয়েছে। সব না জেনে শুধু পিল খেয়ে গেলে কিন্তু আপনার শরীরের মারাত্নক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। আপনার শরীরে এই পিলের প্রভাব বেড়ে গেলে পরবর্তীতে এটি আপনার গর্ভধারণ হওয়ার পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।  জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল সেবনের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে এবং সব সময় নিজেকে সচেতনতা বজায় রেখে চলতে হবে। স্বল্পমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করলে আপনার মানসিক শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকবে এবং গর্ভাবস্থায় বাচ্চা প্রসবের সময় ঝুঁকি অনেকটাই কম থাকবে। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই উপরিউক্ত সুবিধা-অসুবিধা গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের দেয়া নির্দেশনা গুলো ঠিক মত মেনে চলতে হবে।

  



Post a Comment

Previous Next