শিশু তথা বাচ্চাদের দ্রুত ঘুম পাড়ানোর উপায়

শিশু তথা বাচ্চাদের দ্রুত ঘুম পাড়ানোর উপায় বিস্তারিত

শিশু তথা বাচ্চাদের দ্রুত ঘুম পাড়ানোর উপায়


ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা ঘুমের কারনে শরীর সুস্থ থাকে,ব্রেন পরিষ্কার হয়, শারীরিক মানষিক বিকাশ ঘটে। অনেক সময় দেখা যায় সারাদিনের ক্লান্তির পরেও ঘুমানো হয় না।আর এই ঘুম না হওয়ার  সমস্যাকে স্লিপ ডিসঅর্ডার বলে। এই সমস্যা শুধু  যে বয়স্কদের হয় তা কিন্তু নয়, এই সমস্যার ভুক্তভোগী শিশুরাও হতে পারে।

বাচ্চাদের কতটা সময় ঘুমানো উচিত ?

শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাবারের পাশাপাশি  পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই নয়, বরং ঘুমও অতিপ্রয়োজনীয় একটি দিক।

শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশে পর্যাপ্ত পরিমানের  ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু কতসময় ঘুমায় তা তার বয়সের ওপর নির্ভর করে থাকে।সাধারণত নবজাতক সঠিক পরিবেশ পেলে সে  ৮০ শতাংশ সময়ই ঘুমিয়ে কাটায়। মানে শিশুরা দিন-রাত ২৪ ঘন্টার ভিতর ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটায়।

 এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা ১২-১৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকে। আবার - বছর বয়সী শিশুরা ১০-১২ ঘন্টা  সময় ঘুমায় -১২ বছর বয়সীরা -১১ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকে।অন্যদিকে একই সময়ে, ১৩-১৬ বছর বয়সী  ১০ ঘন্টা   ঘুমোতে পারে।

বাচ্চাদের ঘুম কম হওয়ার কারন-

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :

বাচ্চাদের ঘুম কম হওয়ার অনেক কারন রয়েছে।তার মাঝে প্রথমেই আসা যাক  ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়ার দিকে।সাধারণত  অসুস্থতা অথবা পেট সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে অভিভাবকরা শিশুদেরকে বিভিন্ন  ওষুধ দেওয়া শুরু করে দেন।আর এই  ভারী ডোজের ফলে শিশুদের ঘুম ব্যহত হয় ফলে শিশু কম ঘুমায়।

অসুস্থতা :

 শিশুরা বিভিন্ন অসুস্থতা যেমন সর্দির ভাব, কাশি ,পেটে ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা হলে  শিশুদের ঘুম কম হয় বা শিশু ঘুমাতে চায়না।

 শিশুর আসেপাশের পরিবেশ:

শিশুর ঘুম কম হওয়ার ভেতর আরও একটি কারন হচ্ছে তার আসেপাশের পরিবেশ।শিশুর ঘুম কম এর জন্য চারপাশের পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কেননা কখনও কখনও আমাদের আশেপাশের পরিবেশ  কোলাহলপূর্ণ, গরম ঠান্ডা হয়ে থাকে এর ফলে শিশুর ঘুমের ব্যঘাত ঘটে।

অন্ধকার বা স্যাঁতসেঁতে ঘরঃ

অনেক সময় আমরা মনে করি অন্ধকার ঘরে হয়তো শিশুর ঘুম বেশি হবে, ভালো হবে।এই ধারনা ভুল  শিশুর ঘর অন্ধকার অথবা স্যাঁতসেঁতে রাখা  যাবে না, এমনকি শিশুর থাকার  ঘরে অতিরিক্ত আসবাব রাখাও উচিত নিয় , অতিরিক্ত আসবাবপত্র ঘরে  থাকার কারনে বাতাস ঘরে  আসা-যাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে এবং ধুলাবালি জমতে সাহায্য করে, যা কিনা  শিশুর জন্য ক্ষতিকর।এতে শিশুর ঘুম কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শিশুর ঘুমের অভ্যাস না থাকাঃ

অনেক সময় দেখা যায় শিশুর ঘুমানোর অভ্যাস না থাকার কারনে সে ঘুমাতে চায় না। তাই খাবারের কিছুসময় পর শিশুকে ঘুমানোর  অভ্যাস  করানো উচিত। এতে  করে শিশু বেসি সময় ঘুমায়। ঘুমানোর আগে যেসকল শিশু বুকের দুধ পান করে, সেইসকল শিশুর পেটের গ্যাস বের করে নিতে হবে। তা না হলে পেট ব্যথা অথবা  হজমে সমস্যা হয়ে শিশুর ঘুম ভেঙে যায় এবং শিশু কান্নাকাটি করতে পারে

ক্যাফেইনঃ

সাধারণত  শিশুরা প্রায়ই সফট ড্রিংকস পান  করতে পছন্দ করে থাকে। এনার্জি ড্রিংকস সোডা ড্রিংকসের ভেতর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে ।যা কিনা ছোট বাচ্চাদের ঘুম না হওয়ার  অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।নবজাতকের ঘুম কম হওয়ার আরও অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন-

  • এমন অনেক শিশু আছে যারা ঘরে বেশি আলো থাকলেও ঘুমাতে চায় না।
  •  
  • শিশুর ঘরে বা পাশের ঘরে টেলিভিশন চললে শিশুর ঘুম ভালো হয় না।
  •  
  • শিশুর ডায়পার ভেজা অথবা খুব আঁটসাঁট হয়ে গেলে  তখন তারা অস্বিস্ত বোধ করে থাকে, অবস্থায় শিশুর ঘুম ভালো হয় না।
  •  অনেক সময় দেখা যায় রাত ১০ -১১ বাজলেও অনেক  শিশু ঘুমায়না, এর একটি কারণ ধারনা করা হয় যে হতে পারে শিশু তার  বাবা মায়ের সাথে খেলতে চায় বা আদর পেতে চায়।
  •  পেটে ক্ষুধা থাকলে অনেক শিশু ঘুমাতে চায়না কান্না করে।
  •  শিশুরা দিনের বেলা বেশি সময় ঘুমালে রাতে তারাতাড়ি ঘুমায় না।

 আরও জানুন :

শিশু তথা বাচ্চারা খেতে না চাইলে করনীয় ?

 শিশুকে বুকের দুধ ছাড়াতে করনীয়

শিশুর ঘুম কম হলে করনীয় কি ?

শিশুর ঘুম কম হলে করনীয় কি ?


.প্রথমেই রাত - ৯টার ভিতর শিশুকে খাওয়ানো শেষ করুন। তারপর তার ঘুমোনোর ব্যবস্থা করুন।

 

.দিনের বেলায় ঘরে পর্যাপ্ত আলোর -বাতাসের ব্যাবস্থা রাখুন।সম্ভব হলে আলো জ্বালিয়ে রাখবেন।

 

.রাতে শিশু না ঘুমোতে চাইলে তাকে নিয়ে বিছানায় যান ঘুম পাড়ানোর জন্য বিভিন্ন  ছড়া বা সূরাহ অথবা ইসলামী সংগীত  শোনান সাথে  গায়ে হাত বুলিয়ে দিন।

 

.শিশু ঘুমানোর সময় আশেপাশের পরিবেশ শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।এ সময়ে ঘরেও শব্দও কম  করার চেষ্টা করুন।

 

.শিশুর ঘুমের পরিবেশ তৈরি  করার জন্য তাকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট  একটি ঘরে নির্দিষ্ট বিছনায় ঘুম পাড়ান। এতে বিছানা  তার পরিচিত হয়ে যাবে ফলে ঘুম ভালো হবে।

 

.শিশুর বিছানা অবশ্যই পরিস্কার -পরিচ্ছন্ন আরামদায়ক দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

 

.ঘুমানোর ঘরটা খানিকটা  অথবা হালকা অন্ধকার করে রাখবেন। কমপক্ষে  ঘুমানোর আধা ঘণ্টা আগেই  রুমের আলো কমিয়ে ফেলুন।এতে বাচ্চা তাড়াতাড়ি ঘুমাবে।

 

.প্রতিদিন রাতে  নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চাদের ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। শিশুদের সাধারণত  ঘুমানোর আদর্শ সময় হবে  রাত সাড়ে টা -রাত সাড়ে ৯টা। সাথে সাথে দুপুরের দিকে নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্ছাকে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস   করতে হবে।

 

.শিশুকে দিনে বেলায় খেলাধুলার অভ্যাস তৈরী  করাতে হবে। এতে করে শরীর যথেষ্ট ক্লান্ত বোধ হবে তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবে।

 

.গরমের কালে শিশুর ঘুমানোর আগে অবশ্যই  নরম সুতি কাপড়  অথবা গামছা ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দিন এতে শিশু শরীরে ঠান্ডা  বোধ করবে ঘুম  ভালো হবে।

 

১০.ঘরমে ঘরে পর্যাপ্ত পরিমানে ফ্যানের বাতাস বা জানালা দিয়ে ঘরে  বাতাস প্রবেশ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

১১.ঘুমানোর সময় শিশুকে মোটা বা সিনথেটিক কাপড় পরানো যাবেনা। পাতলা সুতি কাপড় পরালে ভালো  হবে।

 

১২.নবজাতক থেকে  বছর বয়সী শিশুদের  অবশ্যই  ঘুম পাড়ানোর সময় মায়ের কোলের ভিতর নিয়ে ঘুমনোর চেষ্টা করুন। শিশু ঘুমানোর অনন্ত ৩০/৪০ মিনিট সময় শিশুর সাথে  থাকতে হবে।এতে করে শিশু বুঝবে যে তার মা তার সাতগেই আছে। ঘুমানোর পর ভারী  কোল বালিশ অথবা  বড় বালিশ দুই পাশে দেবেন।যাতে করে শিশু ভাবে তার মা সাথে  আছে।আর তখন সে আরামে ঘুম দেবে।

 

১৩.শিশুকে ঘুমানোর  সময়  কোনো ভাবেই উপুড় করে শোয়াবেন না। এইভাবে শোয়ালে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে  যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ,এমনকি বুকে চাপ  লাগতে পারে। শিশুদের জন্য সবথেকে ভালো হয় খুব পাতলা বালিশে ঘুমনোর অভ্যাস তৈরী  করানো। এতে শিশুর মাথা এবং ঘাড়ের পজিশানটাও সঠিক থাকে আর শিশু আরামে ঘুম দেয়।

 

১৪.বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার জন্য শিশুর রাতে  ঘুম ভালো  না হতে পারে।অন্যদিকে  জন্মের পর থেকেই কিছু সময় পরপর কান্না করা এবং দিন -রাত  খুব অল্প পরিমাণে ঘুমানো এসব লক্ষণ দেখলে অবশ্যই চিকিৎকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিতে হবে।

মন্তব্য :

শিশুদের  পর্যাপ্ত ঘুম তার শরীর মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। পর্যাপ্ত ঘুম যদি না হয় শিশুর বৃদ্ধি এবং  বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।শিশুর পড়াশোনা, খেলাধুলা বিভিন্ন কাজে মনোযোগ কম হতে পারে বিশেষজ্ঞরা বলেন  দীর্ঘদিন এই  সমস্যা হলে শিশুর স্মরণশক্তি কমে  যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Post a Comment

Previous Next