সিজার পরবর্তী সময়ে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কিনা ?

সিজারের পর দ্বিতীয় বার নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কিনা ?

গর্ভবতী মায়েদের অনেকের প্রশ্ন থাকে যে, প্রথম বাচ্চা সিজারে হলে দ্বিতীয় বাচ্চা সিজারে নেওয়া যাবে কিনা ?অবশ্যই প্রথম সিজারের পর দ্বিতীয় বাচ্চা নরমাল করা সম্ভব তবে এতে রোগীকে কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা জরুরী । আমরা এই আর্টিকেলে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব-

সিজার পরবর্তী নরমাল ডেলিভারি সম্ভব ?
সিজার পরবর্তী সময়ে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কিনা 

 প্রথম সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি (Vaginal Birth After Cesarean বা VBAC) সম্ভব, তবে তা নির্ভর করে কিছু বিষয়ের ওপর। যেমন:

  • সিজারের কারণ: প্রথম সিজার কী কারণে হয়েছিল, তার ওপর নির্ভর করে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা। যদি এমন কোনো কারণে সিজার হয়ে থাকে, যা পরবর্তী ডেলিভারিতে সমস্যা তৈরি করবে না, তবে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব।
  • উদাহরণস্বরূপ, যদি আগের সিজারটি শিশুর অস্বাভাবিক অবস্থানের কারণে হয়ে থাকে, তবে পরবর্তী গর্ভাবস্থায় শিশুর অবস্থান স্বাভাবিক থাকলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব।
  • জরায়ুর অবস্থা: সিজারের সময় জরায়ুতে যে সেলাই করা হয়েছিল, তার অবস্থা কেমন, তার ওপর নির্ভর করে নরমাল ডেলিভারির ঝুঁকি। যদি সেলাই দুর্বল থাকে, তবে নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ু ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • গর্ভবতীর শারীরিক অবস্থা: গর্ভবতীর বয়স, ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ইত্যাদি শারীরিক অবস্থা নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • শিশুর আকার ও অবস্থান
  • শিশুর আকার স্বাভাবিক থাকতে হবে এবং সঠিক অবস্থানে থাকতে হবে।
  • শিশুর আকার যদি খুব বড় হয় বা শিশু যদি অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকে, তবে নরমাল ডেলিভারি কঠিন হতে পারে।
  • হাসপাতালের সুবিধা: নরমাল ডেলিভারির সময় যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তবে দ্রুত সিজার করার মতো সুবিধা হাসপাতালে থাকতে হবে।
  • সিজারের পর সময়ের ব্যবধান:সিজারের পর সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ মাস পর নরমাল ডেলিভারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কখন নরমাল ডেলিভারি সম্ভব:

  • যদি আপনার আগের সিজারের কারণ পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
  • যদি আপনার জরায়ুর অবস্থা ভালো থাকে।
  • যদি আপনার গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা না থাকে।
  • যদি আপনার শিশুর আকার স্বাভাবিক থাকে এবং সঠিক অবস্থানে থাকে।

কখন দ্বিতীয় বার নরমাল ডেলিভারি করা উচিত নয়

কিছু পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বার নরমাল ডেলিভারি (Vaginal Birth After Cesarean বা VBAC) করা উচিত নয়। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
যদি আগের সিজারটি এমন কোনো কারণে হয়ে থাকে যা পরবর্তী গর্ভাবস্থায় পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন: পেলভিসের আকার ছোট বা শিশুর আকার খুব বড়।
যদি জরায়ুতে 'T' আকৃতির বা উল্লম্ব (ভার্টিকাল) সেলাই থাকে।
জরায়ুর জটিলতা:
যদি জরায়ুতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা থাকে।
আগের সিজারের সেলাই যদি দুর্বল থাকে।
গর্ভাবস্থার জটিলতা:
যদি গর্ভবতীর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যা থাকে।
যদি গর্ভফুল জরায়ুর নিচের দিকে থাকে (প্লাসেন্টা প্রিভিয়া)।
শিশুর জটিলতা:
যদি শিশুর আকার খুব বড় হয় (৪ কেজির বেশি)।
যদি শিশু অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকে।
যদি একাধিক শিশু গর্ভে থাকে (যমজ বা তার বেশি)।

২য় সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়

দ্বিতীয় সিজারের পর বাচ্চা নেওয়ার জন্য সাধারণত কমপক্ষে ১৮ মাস থেকে ২৪ মাস অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর কারণ হল:

  • সিজারের সময় জরায়ুতে যে ক্ষত তৈরি হয়, তা সম্পূর্ণরূপে সেরে উঠতে এবং শক্তিশালী হতে যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। খুব তাড়াতাড়ি গর্ভধারণ করলে জরায়ু ফেটে যাওয়ার (Uterine rupture) ঝুঁকি বাড়তে পারে, যা মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে।
  • পরপর দুটি গর্ভাবস্থার মধ্যে যথেষ্ট বিরতি না থাকলে মায়ের শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং গর্ভকালীন জটিলতা যেমন - রক্তাল্পতা (Anemia), গর্ভফুল নিচে নেমে যাওয়া (Placenta previa), গর্ভফুল জরায়ু থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া (Placental abruption) ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • এছাড়াও, খুব কম সময়ের ব্যবধানে গর্ভধারণ করলে অপরিণত শিশু (Preterm birth) জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা এবং শিশুর ওজন কম হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং অন্যান্য কারণ বিবেচনা করে এর চেয়ে কম সময়ও পরামর্শ দিতে পারেন। 

আরো পড়ুন,

সিজারের পর পায়খানা শক্ত হয় কেন?

সিজারের পর পেটের ফাটা দাগ কমানোর উপায় কী?

নরমাল ডেলিভারির সুবিধা:

  • দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
  • হাসপাতালে কম সময় থাকতে হয়।
  • পরবর্তী গর্ভাবস্থায় জটিলতার ঝুঁকি কম থাকে।

নরমাল ডেলিভারির ঝুঁকি:

  • জরায়ু ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • জরুরি ভিত্তিতে সিজার করার প্রয়োজন হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

  • সিজারের পরে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কি না, তা জানতে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • ডাক্তারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে আপনার শারীরিক অবস্থা, পূর্বের সিজারের ইতিহাস এবং অন্যান্য ঝুঁকি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।

মনে রাখবেন, প্রতিটি গর্ভাবস্থা আলাদা। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।

Post a Comment

Previous Next