গর্ভাবস্থায় ফুসকুড়ির কারণ ও প্রতিকার

 গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পরিবর্তন, এবং শরীরের ত্বক প্রসারিত হওয়ার কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ অন্যতম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ফুসকুড়ি ক্ষতিকর নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ফুসকুড়ি

গর্ভাবস্থায় ফুসকুড়ির সম্ভাব্য কারণ

গর্ভাবস্থায় ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ফুসকুড়ি হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ এবং তাদের লক্ষণ দেওয়া হলো:

PUPPP (Pruritic Urticarial Papules and Plaques of Pregnancy): এটি গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে সাধারণ ফুসকুড়ি। সাধারণত তৃতীয় ত্রৈমাসিকে পেটে লাল, চুলকানিযুক্ত দাগ বা ফুসকুড়ি দিয়ে এর শুরু হয় এবং পরে তা উরু, বুক ও হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে এটি সাধারণত মা বা শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয়।

হরমোনের পরিবর্তন: ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ত্বক সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যার ফলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বা অন্যান্য ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

মেলানিনের বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় ত্বকে মেলানিন বেড়ে যায়, যা ত্বকে কালো ছোপ বা ফুসকুড়ি হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে।

প্রিকলি হিট (Prickly heat) বা ঘামাচি: গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। ফলে অতিরিক্ত ঘাম থেকে ঘামাচি বা ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, বিশেষত শরীরের ভাঁজগুলোতে।

ইমপেটিগো (Impetigo): এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যা ত্বকে লাল ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে এবং পরে এতে জলীয় পদার্থ জমা হতে পারে।

একজিমা (Eczema): যদি আপনার আগে থেকেই একজিমা থাকে, তাহলে গর্ভাবস্থায় তা বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে ত্বকে শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত এবং লাল ছোপ দেখা দেয়।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদিও বেশিরভাগ ফুসকুড়িই ক্ষতিকর নয়, কিছু ক্ষেত্রে তা গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত:

  • ফুসকুড়ির সাথে যদি তীব্র চুলকানি, জ্বর, বমি, ক্লান্তি বা জন্ডিস থাকে।
  • যদি ফুসকুড়িগুলো ছড়িয়ে যায় বা খুব দ্রুত আকার পরিবর্তন করে।
  • যদি ফুসকুড়ির কারণে ঘুম বা দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয়।
প্রয়োজনে আরো পড়ুন:

গর্ভাবস্থায় ফুসকুড়ির প্রতিকার

ফুসকুড়ি থেকে মুক্তি পেতে কিছু সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার এবং সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে:

আর্দ্রতা: ত্বক আর্দ্র রাখতে সুগন্ধবিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

পোশাক: ঢিলেঢালা, আরামদায়ক এবং সুতির পোশাক পরুন। এটি বাতাস চলাচলে সাহায্য করবে এবং ঘাম কমাবে।

ঠান্ডা সেঁক: চুলকানি কমাতে আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। এর জন্য একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

ওটস বাথ: ওটস পানিতে মিশিয়ে গোসল করলে চুলকানি ও জ্বালাভাব থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়।

সাবান: সুগন্ধবিহীন, মৃদু সাবান ব্যবহার করুন।

স্ট্রেস কমান: পর্যাপ্ত ঘুম এবং আরাম করুন। অতিরিক্ত স্ট্রেস ত্বকের সমস্যা বাড়াতে পারে।

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: গরম আবহাওয়া এবং গরম জলীয় বাষ্প এড়িয়ে চলুন। গোসলের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।

মনে রাখবেন-

গর্ভাবস্থায় যেকোনো ওষুধ বা মলম ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।

Post a Comment

Previous Next