মেয়েদের স্তনে যেসকল সমস্যা হয় এবং করণীয়

মেয়েদের স্তনে যেসকল সমস্যা হয়ে থাকে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-

মেয়েদের স্তনে যেসকল সমস্যা হয়ে থাকে


মেয়েদের স্তনের সমস্যা কি?

আমরা অনেকেই স্তনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকি। মেয়েদের স্তনের বিভিন্ন প্রকার   সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই স্তনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমরা মনে করি যে সমস্যাটি স্তন ক্যান্সারের সাথে জড়িত। কিন্তু স্তন ক্যান্সার ছাড়াও মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যে সমস্যা গুলো সবসময়  তেমন বিপদজনক নাও হতে পারে।  মেয়েদের  যে কোন বয়সেই স্তনের সমস্যা  হতে পারে। যেমন -বয়সন্ধিকালে,গর্ভাবস্থায়,স্তন্যপান করনো অবস্থায় মেয়েদের স্তনের সমস্যা দেখা যায়। 

 স্তনের সমস্যার প্রধান লক্ষণ গুলো কি কি?

স্তনের বিভিন্ন রকম সমস্যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো -

. স্তনের ভেতরে চাকা বা ধরনের কিছু অনুভব হওয়া।

.স্তনে ব্যথা অনুভব হওয়া।

.স্তন থেকে পুঁজ বা পুঁজ জাতীয় কিছু বের হওয়া।

স্তনের আকারের পরিবর্তন।

. স্তনের চামড়ার পরিবর্তন হওয়া।

. স্তনের বোঁটায় অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হওয়া।

.স্তনে অতিরিক্ত বোটার উপস্থিতি।

.অস্বাভাবিকভাবে স্তনের বৃদ্ধি।

উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই একজন মহিলা জেনারেল সার্জনকে দেখাবেন 

স্তনের ভেতরে চাকা অনুভব

অনেকে স্তনের ভিতরে চাকা বা জাতীয় কিছু দেখলে ভয় পেয়ে যান। তাদের  ধারণা এটি ক্যান্সারের কারন। ক্যান্সার ছাড়াও অনেক রোগের ক্ষেত্রেই  স্তনে চাকা দেখা দিতে পারে যেমন - টিউমার, চুলকানি বা ইনফেকশন জনিত কারনেও স্তনে চাকা দেখা যায়। স্তনে কোনো কারনে চাকা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

স্তনে ব্যথা

 স্তনের অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে মেয়েদের স্তন ব্যথার সমস্যা  সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।স্তনে ব্যথা হওয়ার বেশ কিছু কারন রয়েছে।স্তনের ব্যথা দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো সাধারণ ব্যথা এবং অপরটি বিশেষ ধরনের ব্যথা। সাধারণ ব্যথা গুলোর নির্দিষ্ট  কারন রয়েছে। যেনম :সিস্টইনফেকশন, আঘাত জনিত ব্যথা, বিভিন্ন  রোগ সংক্রান্ত ব্যথা,

সন্তান প্রসবের পর ব্যথা ইত্যাদি। স্তনের সাধারণ ব্যথা চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে খুব সহজেই সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়। কিন্তু বিশেষ ব্যথা  গুলো সাধারণত কোনো বিশেষ রোগ থেকে হয়ে থাকে। এ সকল রোগজাতীয়  ব্যথাকে ম্যাস্টালজিয়া বলা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করলে এই জাতীয় স্তনের ব্যথা সারিয়ে তোলা সম্ভব।

স্তন থেকে পুজ বের হওয়া

ইনফেকশন জনিত কারনে স্তন থেকে সাধারণত পুজ বা পুজ জাতীয় কিছু তরল পদার্থ বের হতে দেখা যায়। এই সমস্যাটি বিভিন্ন কারনে হতে পারে। যেমন- চুলকানির কারনে অনেক সময় স্তনে  পুজ জমতে পারে,আঘাত জনিত কারনে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। স্তনে পুজ বের হতে দেখা গেলে সঠিক পরীক্ষার নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।

স্তনের আকারের পরিবর্তন

মেয়েদের ক্ষেত্রে দুটি কারনে স্তনে আকারের পরিবর্তন হতে পারে। যেমন - জন্মগত ভাবে আকারের পরিবর্তন এবং রোগের কারনে আকারের পরিবর্তন হতে পারে। জন্মের পরে থেকে অনেকের মধ্যে স্তনের আকারে ছোট বড় তারতম্য থাকে। এটিকে  সাধারণত স্তনের কোনো সমস্যা বলে বিবেচনা  করা হয় না।এছাড়াও ক্যান্সার, টিউমার ইত্যাদি রোগের কারনে স্তনে আকারের পরিবর্তন হয়। তাই এক্ষেত্রে স্তনের আকারের সমস্যাটি সম্পর্ক ডাক্তার শরণাপন্ন হতে হবে।

স্তনের চামড়ার পরিবর্তন

চামড়ার পরিবর্তন সাধারণত বিশেষ সমস্যার কারনে হয়ে থাকে। চর্মরোগ জনিত নানা কারনে স্তনের চামড়ার পরিবর্তন হতে পারে।যেমন  স্তনের চামড়া ধীরে ধীরে কালচে বর্ণ বা সাদা বর্ণ ধারণ করতে পারে। এটিকে স্তনের তেমন জটিল রোগ হিসবে বিবেচনা করা হয় না। তাই সঠিক চর্ম চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যাটি  সহজেই প্রতিকার করা সম্ভব।

স্তনের বোটায় ব্যথা অনুভব

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্তনের বোটা অতিরিক্ত ব্যথা থাকে। এই সমস্যাটিতে অনেকেই ভুগে থাকেন।এই ব্যথার সমস্যাটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ২০  থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে বেশি হতে দেখা যায়। সাধারণত এই ব্যাথাটি স্তনের বোটা বা নিম্নাংশে  হয়ে থাকে এবং স্তনের চারিদিকে ছাড়ায় না। প্রতি মাসে পিরিয়ডের সময় গুলোতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই ব্যাথাটি সাধারণত কোনো চিকিৎসা ছাড়াই চলে যায় কিন্তুু অনেক সময় ব্যথা দীর্ঘ সময় থাকার ফলে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।

স্তনে অতিরিক্ত বোটার উপস্থিতি

অনেকে স্তনের বোটা বা নিম্নাংশ একাধিক হওয়ার কারনে চিন্তিত। কারন স্তনে সাধারণত দুটি নিম্নাংশ উপস্থিত থাকে। জন্মগত কারনে অনেক সময় স্তনের নিম্নাংশ একের অধিক হতে পারে।জন্মগত হলে সমস্যাটি নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বিভিন্ন  রোগের কারনেও এই সমস্যাটি  হতে পারে।সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অস্বাভাবিক স্তনের বৃদ্ধি

স্তনের বৃদ্ধির সমস্যাটি বেশি মেয়েরাই অনুভব করে।কিছু কিছু  ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিক। যেনম গর্ভবতী অবস্থায় স্তনের আকার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে, স্তন্যপান করানোর কারনে স্তনের বৃদ্ধি ঘটে। এক্ষেত্রে সমস্যাটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারন নেই।উল্লেখিত কারন ব্যতীত যদি স্তনের বৃদ্ধি দ্রুত ঘটতে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আরো পড়ুন:

মেয়েদের যোনিপথে চুলকানির কারণ ও করনীয় কি ?

কিভাবে স্তনের সমস্যার সমাধান করা যায়?

  1. জীবন যাত্রার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে স্তনে সমস্যাটি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। চলুন জেনে নেই  স্তনের সমস্যা দূরীকরণের কিছু ঘরোয়া উপায়-
  2. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করুন এবং অতিরিক্ত তেল চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করুন। অতিরিক্ত তেল চর্বি স্তনের বিভিন্ন রোগের সূচনা ঘটায়।
  3. পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খান এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  4. বাসায় অথবা বাইরে নিদিষ্ট মাপের অন্তবাস ব্যবহার করুন।
  5. অতিরিক্ত মশলা যুক্ত খাবার পরিহার করুন।
  6. নিয়মিত রঙিন বিভিন্ন রকম দেশিও ফল খান। এতে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো কাজ করে।
  7. ভিটামিন ,ভিটামিন বি১,ভিটামিন বি৬ এসকল উপাদান যুক্ত খাবার খান। এই উপাদান সমৃদ্ধ খাবার শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
  8. প্রতিদিন নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। এতে শরীর সুস্থ থাকবে। 

মন্তব্য:

স্তনের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে মাঝে মাঝে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করুন।এতে সহজেই আপনি স্তনের সমস্যা সনাক্ত করতে পারবেন। স্তনের সমস্যাটি চিহ্নিত করুন।  স্তনের অনেক সমস্যা  নিজে থেকেই সেরে যায়। কিন্তু যদি সমস্যাটি দীর্ঘদিন অনুভব করেন  এবং এটি আপনা আপনি সেরে না যায় সেক্ষেত্রে  যত দ্রুত  সম্ভব চিকিৎসা গ্রহন করুন।

Post a Comment

Previous Next