গর্ভাবস্থায় চোখে ঝাপসা দেখার কিছু কারণ ও সমাধান

 গর্ভাবস্থায় চোখে ঝাপসা দেখা একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত গর্ভাবস্থায় শরীরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন হরমোন এবং শারীরিক পরিবর্তনের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি প্রসবের পরে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়।আসুন এর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-----

গর্ভাবস্থায় চোখে ঝাপসা দেখা
গর্ভাবস্থায় চোখে ঝাপসা দেখার কারণ ও করণীয়

চোখে ঝাপসা দেখার কারণ

গর্ভাবস্থায় চোখে ঝাপসা দেখার কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:

হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর প্রভাবে চোখের কর্নিয়ায় ফ্লুইড জমা হতে পারে, যার কারণে দৃষ্টি ঝাপসা মনে হয়।

তরল ধারণ: গর্ভাবস্থায় শরীরে পানি জমে থাকার কারণে চোখেও ফোলাভাব দেখা দিতে পারে, যা দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।

শুষ্ক চোখ: এই সময়ে চোখের জল তৈরির গ্রন্থি (lacrimal gland) কম কাজ করলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। এর ফলে চোখ অস্বস্তিকর লাগতে পারে এবং দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।

রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ (প্রি-এক্লাম্পসিয়া) এর মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর ফলে চোখে ঝাপসা দেখা, বিদ্যুতের ঝলক দেখা বা আলোর ঝলকানি দেখতে পাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

চোখে চাপ: দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর চাপ পড়ে, যা সাময়িকভাবে দৃষ্টি ঝাপসা করতে পারে।

চোখে ঝাপসা দেখলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা মোকাবিলায় আপনি কিছু সহজ পদক্ষেপ নিতে পারেন:

চোখকে বিশ্রাম দিন: দীর্ঘ সময় ধরে কোনো স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত বিরতি নিন এবং চোখকে বিশ্রাম দিন। প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ ফুট দূরে থাকা কোনো বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকিয়ে থাকতে পারেন।

হাইড্রেটেড থাকুন: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে এবং চোখ শুষ্ক হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার এড়িয়ে চলুন: গর্ভাবস্থায় কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে চোখ অস্বস্তিকর লাগতে পারে। এই সময় চশমা ব্যবহার করা বেশি আরামদায়ক।

স্বাস্থ্যকর খাবার: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ, দুধ, ও ডিম খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। এগুলি আপনার এবং আপনার শিশুর চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি ঝাপসা দৃষ্টির পাশাপাশি আপনার তীব্র মাথাব্যথা, চোখের সামনে আলোর ঝলকানি, বমি ভাব বা শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক ফোলাভাব দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা আপনার গাইনি বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন। এসব উপসর্গ প্রি-এক্লাম্পসিয়ার মতো গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

আরো জানুন:

গর্ভাবস্থায় ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় কেন

সিজার পরবর্তী সময়ে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কিনা ?

ডায়াবেটিস রোগীদের যেসব বর্জন করা উচিত

চোখে ঝাপসা দেখলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

গর্ভাবস্থায় চোখে ঝাপসা দেখা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা অত্যন্ত জরুরি।

যদি চোখে ঝাপসা দেখার পাশাপাশি নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

তীব্র মাথাব্যথা: যদি এমন মাথাব্যথা হয় যা সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধেও কমছে না।

আলোর ঝলকানি বা ঝিলিক: চোখের সামনে যদি হঠাৎ করে আলোর ঝলকানি, ছোট ছোট দাগ, বা বিদ্যুতের মতো কিছু দেখতে পান।

হঠাৎ ফোলাভাব: হাত, মুখ বা পায়ের পাতা হঠাৎ করে ফুলে গেলে।

পেটে তীব্র ব্যথা: বিশেষ করে পাঁজরের ঠিক নিচে তীব্র ব্যথা হলে।

বমি ভাব বা বমি: যদি বারবার বমি হয় এবং শারীরিক অসুস্থতা বাড়ে।

আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টি হারানো: যদি কোনো কারণে আপনার দৃষ্টিশক্তি আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে চলে যায়।

এই লক্ষণগুলো প্রি-এক্লাম্পসিয়া নামক একটি গুরুতর সমস্যার চিহ্ন হতে পারে। এটি গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পর থেকে দেখা যায় এবং এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও প্রস্রাবে প্রোটিন দেখা যায়। সময় মতো চিকিৎসা না করালে এটি মা ও শিশু উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে।

কখন অপেক্ষা করতে পারেন?

যদি ঝাপসা দৃষ্টির সঙ্গে অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ না থাকে, তবে সাধারণত এটি গর্ভাবস্থার হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে আপনি কিছু সাধারণ যত্ন নিতে পারেন:

  • চোখকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।
  • দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না।
  • শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত জল পান করুন।

তবে, যদি এই সমস্যাটি প্রসবের পরেও দীর্ঘস্থায়ী হয় অথবা আপনার অস্বস্তি বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা উচিত।

Post a Comment

Previous Next