একাধিক গর্ভধারণ বলতে সাধারণত একসাথে একের অধিক সন্তান গর্ভধারণ বুঝায় ।সাধারণত জমজ সন্তান বলতে একসাথে টইন শিশু বেশি হলেও কখনো কখনো ট্রিপলেট( তিনটি শিশু একসাথে )বা এর বেশিও গর্ভধারণ করতে পারে ।একক গর্ভধারণ থেকে একাধিক গর্ভধারণ কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে নিচে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তা বস্তারিত আলোচনা করা হলো-
যমজ সন্তান কিভাবে হয়
যমজ সন্তান সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে এবং এদের জন্ম প্রক্রিয়াও আলাদা। নিচে এই দুই ধরনের যমজ সন্তানের জন্মের কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:
১. অভিন্ন যমজ (Identical Twins)
এই ধরনের যমজ সন্তান দেখতে হুবহু একই রকম হয় এবং তাদের লিঙ্গও একই হয় (হয় দুটিই ছেলে, না হয় দুটিই মেয়ে)। অভিন্ন যমজ হওয়ার কারণ হলো:
- একটি মাত্র শুক্রাণু একটি মাত্র ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে।
- নিষিক্ত হওয়ার পর সেই ডিম্বাণুটি বিভাজিত হয়ে দুটি আলাদা ভ্রূণে রূপান্তরিত হয়।
- এই দুটি ভ্রূণ তখন মাতৃগর্ভে স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠে এবং যমজ সন্তানের জন্ম হয়।
- যেহেতু তারা একই নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে এসেছে, তাই তাদের জিনগত গঠন সম্পূর্ণ এক।
২. ভিন্ন যমজ (Fraternal Twins)
এই ধরনের যমজ সন্তান দেখতে একই রকম নাও হতে পারে, কারণ তারা আলাদা আলাদা ডিম্বাণু থেকে আসে। তাদের লিঙ্গ ভিন্নও হতে পারে (একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে)। ভিন্ন যমজ হওয়ার কারণ হলো:
- নারীর মাসিক চক্রের সময় যদি একই সাথে একটির পরিবর্তে দুটি ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়।
- তখন দুটি আলাদা শুক্রাণু এই দুটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে।
- এভাবে দুটি নিষিক্ত ডিম্বাণু দুটি আলাদা ভ্রূণে পরিণত হয় এবং মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে।
- যেহেতু এই দুই যমজ দুটি ভিন্ন ডিম্বাণু ও দুটি ভিন্ন শুক্রাণু থেকে এসেছে, তাই তাদের জিনগত গঠন অভিন্ন যমজের মতো এক হয় না।
যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কাদের বেশি?
যমজ সন্তান হওয়ার বিষয়টি অনেক সময় জেনেটিক বা বংশগত হতে পারে। যদি পরিবারের কারো যমজ সন্তান থাকে, তাহলে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও কিছু বিষয় যমজ সন্তানের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে, যেমন:
মায়ের বয়স: মায়ের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
উর্বরতার চিকিৎসা: যারা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) বা অন্য কোনো উর্বরতার চিকিৎসার সাহায্য নেন, তাদের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
শারীরিক গঠন: অতিরিক্ত ওজন বা লম্বা নারীদের ক্ষেত্রেও যমজ সন্তান হতে পারে।
বংশগত কারণ: মায়ের বংশে যদি যমজ সন্তান জন্মের ইতিহাস থাকে, তাহলে তার যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রয়োজনে আরো জানান-
স্তনে ব্যথা (Breast pain) হলে করণীয় কি ?
গর্ভে যমজ সন্তান থাকলে করণীয়
গর্ভে যমজ সন্তান থাকা একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। তবে স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার চেয়ে এ ক্ষেত্রে মা ও শিশুর জন্য কিছু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:
১. নিয়মিত ও সতর্কতার সাথে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা
যমজ গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে, যেমন— সময়ের আগে প্রসব, কম ওজনের শিশু জন্ম নেওয়া, বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি। তাই একজন বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা খুবই জরুরি। চিকিৎসক আপনার এবং শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে বিশেষ পরীক্ষা (যেমন— ঘন ঘন আলট্রাসনোগ্রাফি) করাবেন।
২. সঠিক খাদ্যাভ্যাস
যমজ শিশুদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে গর্ভবতী মায়ের বেশি পরিমাণে পুষ্টি প্রয়োজন হয়।
ক্যালোরি: একজন স্বাভাবিক গর্ভবতী নারীর তুলনায় যমজ সন্তানের মায়ের প্রায় ৪০% বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। তবে একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খাওয়া উচিত।
প্রোটিন: মাছ, মাংস, ডিম, ডাল এবং দুগ্ধজাত খাবার বেশি করে খান। প্রোটিন শিশুদের সঠিক ওজন ও বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড: যমজ গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার যেমন— গাঢ় সবুজ শাকসবজি, ডাল, বাদাম, এবং লাল মাংস খান। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
ক্যালসিয়াম: শিশুদের হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম দরকার। দুধ, দই এবং পনির থেকে এটি পাওয়া যায়।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম
যমজ গর্ভাবস্থায় শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরি। দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাস করুন এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান। ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বিশ্রামের ওপর জোর দিন।
৪. প্রসবের জন্য প্রস্তুতি
যমজ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় সময়ের আগেই প্রসব হতে পারে। তাই প্রসবের তারিখের অনেক আগেই আপনার প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা উচিত। হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং যেকোনো জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
৫. মানসিক সহায়তা
একাধিক সন্তানের মা হওয়ার ভাবনা অনেক সময় মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। তাই আপনার সঙ্গী, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে খোলাখুলি কথা বলুন। আপনার অনুভূতিগুলো তাদের সাথে ভাগ করে নিন। প্রয়োজনে একজন কাউন্সিলরের সাহায্য নিতে পারেন।
জমজ সন্তান গর্ভধারণের লক্ষণসমূহ:
যমজ সন্তান গর্ভধারণের কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যায়, যা সাধারণ গর্ভধারণের লক্ষণগুলোর চেয়ে একটু আলাদা বা তীব্র হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এই লক্ষণগুলো কেবল একটি ধারণা দিতে পারে। যমজ সন্তান গর্ভধারণ নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হলো আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান।
যমজ সন্তান গর্ভধারণের কিছু সম্ভাব্য লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:
গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলোর তীব্রতা বৃদ্ধি:
শারীরিক পরিবর্তনের লক্ষণ
চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে লক্ষণ :
যদি উপরের লক্ষণগুলোর কোনোটি আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনিই সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আপনার গর্ভধারণের অবস্থা নিশ্চিত করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় যত্ন ও পরামর্শ দিতে পারবেন।