বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করণীয়

 যদি কোনো শিশুর পায়খানা শক্ত হয়, তাহলে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে তার এই সমস্যা দূর করতে পারেন। শিশুদের জন্য এই সমস্যাটা খুবই সাধারণ, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের জন্য এটি বেশ কষ্টকর হতে পারে।

বাচ্চাদের কষ্ট হয় কেন ?

বাচ্চাদের কষ্টকাঠিন্য হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের কিছু অভ্যাসের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। নিচে এর কয়েকটি প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:

খাদ্যাভ্যাস ও পানি পানের অভাব

কম আঁশযুক্ত খাবার: শিশুদের খাবারে যদি ফল, সবজি এবং গোটা শস্যের মতো আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ কম থাকে, তাহলে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়। আঁশ হজমে সাহায্য করে এবং পায়খানাকে নরম রাখে।

কম পানি পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা তরল খাবার না খেলে শরীর পানিশূন্য হয়ে যায়, যার ফলে পায়খানা কঠিন হয়ে পড়ে।
দুধের পরিবর্তন: অনেক সময় মায়ের বুকের দুধ থেকে ফর্মুলা বা গরুর দুধে পরিবর্তন করলে হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

শারীরিক কার্যকলাপের অভাব

শিশুরা যদি সারাদিন বসে থাকে বা টিভি-মোবাইলে বেশি সময় কাটায় এবং খেলাধুলা কম করে, তাহলে তাদের হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। শারীরিক কার্যকলাপ হজমতন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করণীয় 

মানসিক বা অভ্যাসগত কারণ

পায়খানা আটকে রাখা: অনেক শিশু খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কারণে বা স্কুল-কলেজের টয়লেট ব্যবহার করতে না চাওয়ার কারণে মল আটকে রাখে। এতে মল ভেতরে আরও শক্ত হয়ে যায় এবং কষ্ট বাড়ে।

পায়খানার ভীতি: একবার যদি শক্ত পায়খানা হওয়ার কারণে ব্যথা পায়, তাহলে পরবর্তী সময়ে শিশু ভয়ে মলত্যাগ করতে চায় না। এই ভয়ের কারণে তারা পায়খানা আটকে রাখে, যা সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলে।
রুটিনের পরিবর্তন: কোথাও বেড়াতে যাওয়া, নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়া বা দৈনন্দিন রুটিনে বড় কোনো পরিবর্তন এলে অনেক শিশুর হজমের ওপর চাপ পড়ে, যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত কারণ
কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ (যেমন, অ্যান্টিবায়োটিক, আয়রন সাপ্লিমেন্ট) কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
খুব কম ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক বা জন্মগত সমস্যা, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা বা অন্ত্রের গঠনগত ত্রুটি, কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দায়ী হতে পারে।

যদি আপনার বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য ঘন ঘন হয় বা উপরের কারণগুলো মনে না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

প্রথমত, কিছু ঘরোয়া প্রতিকার দিয়ে শুরু করা যেতে পারে:

জল ও তরল খাবার: শিশুকে প্রচুর পরিমাণে জল পান করানো জরুরি। জল শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং পায়খানা নরম হতে সাহায্য করে। জল ছাড়াও ফলের রস (যেমন, আপেল বা নাশপাতির রস) এবং স্যুপ দিতে পারেন।

আঁশযুক্ত খাবার: তার খাদ্যে আঁশযুক্ত (fiber) খাবার যোগ করুন। যেমন:
         ডাল ও শস্য: লাল চাল, ওটস, ডালিয়া।
          সবজি: ব্রোকলি, মটর, শিম।
          ফল: কলা, আপেল, নাশপাতি, কমলা।
পেট ম্যাসাজ: হালকা হাতে শিশুর পেটে ম্যাসাজ করলে তার পেটের পেশিগুলো শিথিল হয় এবং পায়খানা নরম হতে পারে। পেটে ঘড়ির কাঁটার দিকে ধীরে ধীরে গোলাকারভাবে ম্যাসাজ করুন।
শারীরিক কার্যকলাপ: শিশুকে বেশি বেশি খেলাধুলা বা হাঁটার জন্য উৎসাহিত করুন। শারীরিক কার্যকলাপ হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

যদি উপরের উপায়গুলো কাজে না আসে বা শিশুর অবস্থা খারাপ হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচের লক্ষণগুলো দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন:

  1. পায়খানার সাথে রক্ত গেলে।
  2. শিশুর প্রচণ্ড পেট ব্যথা হলে।
  3. শিশুর বমি হলে।
  4. যদি শিশু খাবার খেতে না চায় এবং দুর্বল হয়ে পড়ে।
  5. যদি পায়খানা দীর্ঘদিন ধরে শক্ত থাকে এবং তার জন্য অন্য সমস্যা তৈরি হয়।

চিকিৎসক শিশুর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা বা ঔষধের পরামর্শ দিতে পারেন, যা তার কষ্ট দূর করতে সাহায্য করবে।

 মনে রাখবেন, কোনো ঔষধ নিজে থেকে ব্যবহার করবেন না, বরং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

Post a Comment

Previous Next