ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়

 ওভারির সিস্ট দূর করবেন কিভাবে ?

ওভারি সিস্ট (ডিম্বাশয়ের সিস্ট) দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে, যা ব্যথা কমাতেও এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু সিস্ট চিকিৎসার মাধ্যমে বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে।


ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়
ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়


এখানে কিছু ঘরোয়া উপায় উল্লেখ করা হলো:

১. উষ্ণ সেঁক: পেটের নিচের অংশে একটি গরম জলের বোতল বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করলে ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। উষ্ণতা রক্ত ​​সঞ্চালন বাড়ায় এবং পেশী শিথিল করে ব্যথা কমায়।

২. ক্যাস্টর অয়েল প্যাক: ক্যাস্টর অয়েল লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। একটি ফ্লানেলের কাপড়ে ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে পেটের নিচের অংশে রেখে প্লাস্টিক ও একটি গরম তোয়ালে দিয়ে ঢেকে অন্তত ৩০ মিনিট রাখুন।

৩. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার: অ্যাপল সাইডার ভিনেগার পটাশিয়ামের অভাবজনিত সিস্ট কমাতে সাহায্য করতে পারে। ২ টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতে ১ চামচ বেকিং সোডাও যোগ করা যেতে পারে।

৪. বিটরুট: বিটরুটে "বিটাসায়ানিন" নামক একটি যৌগ থাকে যা লিভারকে শরীর থেকে টক্সিন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। বিটরুটের ক্ষারীয় প্রকৃতি শরীরের অ্যাসিডিটির ভারসাম্য বজায় রাখে। এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং ব্ল্যাকস্ট্র্যাপ গুড় (Molasses) দিয়ে তাজা বিটরুটের রসের মিশ্রণ তৈরি করে পান করতে পারেন।

৫. আদা: আদা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি এন্ডোক্রাইন গ্রন্থিগুলিকে উদ্দীপিত করে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনি কাঁচা আদা খেতে পারেন, আদার চা পান করতে পারেন বা খাবারে আদা ব্যবহার করতে পারেন।

৬. হলুদ: হলুদ তার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং পরিপাকের উন্নতি ঘটায়। এক কাপ উষ্ণ দুধে আধা চা চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারেন।

৭. রসুন: রসুন ভিটামিন সি এবং বি৬ সমৃদ্ধ, যা মহিলা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্যকর। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ফাইব্রয়েড নিরাময় করে এবং তাদের বৃদ্ধি রোধ করে। নিয়মিত রসুনের লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে পারেন বা খাবারে যোগ করতে পারেন।

৮. মধু: মধু ডিম্বাশয়ের সিস্টের চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে। এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ মধু এবং এক টেবিল চামচ পরাগ মিশিয়ে এতে অ্যালোভেরার রস যোগ করে পান করতে পারেন।

৯. ইপসম সল্ট বাথ: ইপসম সল্ট বাথে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট থাকে যা পেশী শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। গরম জলে ১ কাপ ইপসম সল্ট মিশিয়ে ২০-৩০ মিনিট এই জলে শরীর ডুবিয়ে রাখুন।

১০. জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও খাদ্যাভ্যাস:

  • নিয়মিত ব্যায়াম: কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, সাঁতার এবং যোগাসন খুব উপকারী।

  • সুষম খাদ্য: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মাছ (ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যেমন স্যামন, সার্ডিন) খাওয়া উপকারী।

  • প্রচুর জল পান: পর্যাপ্ত জল পান শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।

  • পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট ও চিনি পরিহার: সাদা ভাত, কেক, পেস্ট্রি, ক্যান্ডি এবং ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করা উচিত।

  • স্বাস্থ্যকর প্রোটিন: ডিম, ডাল, কুইনোয়া, ওটমিল ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর প্রোটিন গ্রহণ করুন।

  • স্ট্রেস কমানো: স্ট্রেস ব্যথা বাড়াতে পারে। মেডিটেশন, যোগা, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অন্যান্য রিলাক্সেশন কৌশল অনুশীলন করুন।

মনে রাখবেন:

যদিও এই ঘরোয়া উপায়গুলি সিস্টের উপসর্গগুলি কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, তবে এগুলি সিস্টের চিকিৎসার বিকল্প নয়। যদি আপনার সিস্টের লক্ষণগুলি গুরুতর হয়, ব্যথা বাড়ে, বা আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো উদ্বেগ থাকে, তবে দ্রুত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কিছু সিস্টের জন্য চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

Post a Comment

Previous Next