আমাশয় আমাদের দেশে একটি অতি পরিচিত রোগ।সারাবিশ্বে ৩৫-৪০লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়।আমাশয় হলো এক ধরনের রোগ জীবানুর সংক্রমণজনিত রোগ।অর্থাৎ পাতলা পায়খানার সাথে মিউকাস নিঃসরণ হলে তাকে আমার আমাশয় বলে থাকি।ছোট বড় সকলের এ রোগ হয়ে থাকে ।তবে শিশুারা সাধারণত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে । আজকে আমরা এই লেখার মাধ্যমে জানতে পারবো যে, আমাশয় কী? কেন হয়? আমাশয় এর লক্ষণ? কি করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
আমাশয় কয়েক প্রকারের আছে,
এদের কারণ যেমন ভিন্ন তেমনি এদের লক্ষন ও চিকিৎসা ভিন্ন।
এ আমাশয় অ্যামিবা নামক ব্যাকটেরিয়া মাধ্যমে মানব অন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে।এটি মুলত অ্যামেবিয়াসিস নামে পরিচিত। অ্যামিবিক আমাশয় বেসিলারি আমাশয় থেকে মারাত্মক ও বেশি দিন স্থায়ী হয়ে থাকে,এবং এর চিকিৎসা ও কঠিন।বাসি, পঁচা দূর্গন্ধ জনিত খাবার, অপরিষ্কার দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ আমাশয় মানব অন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে
৩.স্বল্প মেয়াদি আমাশয়ঃ
এ আমাশয় সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
৪.দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়ঃ
দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় সর্বদায় মলদ্বার ফাঁক হয়ে থাকে।এ আমাশয়ে আনেক দিনের চিকিৎসা প্রয়োজন।
আমাশয় কেন হয়?
আমাদের দেশে আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে।।
প্রায় বেশির ভাগ মানুষকে এ রোগে ভুগতে হয়েছে ।আমাশয় একটি সাধারণ রোগ।এ রোগ সম্পর্কে আমাদের যদি অজানা থাকে কিংবা এ রোগ কেন হয়, তাহলে এটি বার বার হতে পারে। এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে।
আরও পড়ুন :
- নবজাতকের যত্নের কি কি ভুল আপনার করা উচিত নয়?
- শিশুর বয়স এক বৎসর পার না হলে কোন কোন খাবার দেওয়া যাবে না?
যেসব কারনে আমাশয় হয়ে থাকে :
আমাসয় সাধারণত দূর্বল স্যানিটেশন দ্বারা সৃষ্টি হয়।
আমাশয় হওয়ার প্রধান কারন হলো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামন।এ জীবানুর সংক্রামন ঘটলে মলের সাথে রক্তও যেতে পারে।
দূষিত খাবারের মাধ্যমে হয়ে থাকে।।যেমন,রান্নার জিনিস পত্র অপরিষ্কার এবং তরিতরকারি পরিস্কার করা ছাড়া রান্না করা।
দূষিত জল এবং অন্যান্য পানীয় পান করা।( জল দূষণ মুক্ত করার জন্য ফুটিয়ে পান করা উচিত)
সংক্রমিত লোকদের দ্বারা হাত ধোঁয়া।
অপরিষ্কার হাতে কোন খাবার গ্রহন করা।
দূষিত জলে গোসল কিংবা সাঁতার কাটা।
খোসাযুক্ত ফল ধুয়ে না খাওয়া।।
আমাশয় হলে যে সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে
- পরিপাকতন্ত্র ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেকোন কারনে আমাশয় হতে পারে।
- পরিপাকতন্ত্রের যে সমস্যাগুলো দেখে বুঝবেন আমাশয় হয়েছে কিনা তা হলো,,,
- ডানদিক থেকে তলপেটে ব্যাথা যা পায়খানা করার পর কমে যায়
- পেট ফুলে উঠা।এবং অস্বস্তি বোধ করা।
- পায়খানা সঙ্গে আম বা মিউকাস
- (শ্লেষ্মাঝিল্লি)বেশি থাকে
- রোগি বারবার পাতলা পায়খানা হাওয়া(সাধারনত দিনে দশ বারের কম)
এছাড়াও আরও কিছু লক্ষন রয়েছে,,
- জ্বর
- বমি বমি ভাব বা বমি হাওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- ক্লান্তি
- মেজাজ খিটখিটে হতে থাকে
- বদহজম
- পায়খানা সম্পূর্ণ না হাওয়া
- পেটে শব্দ করা।
- এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা
অনেক সময় মলদ্বারে বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগেন।
আমাশয়ের কখন জটিল আকার ধারণ করতে পারে ?
আমাশয় অনেক সময় জটিল রুপ ধারন করে থাকে।যেমন,
শরীরের প্রতিটি জোড়ায় জোড়ায় ব্যাথা।
চোখ জালা পোড়া করা
যৌন ব্যাথা বেদনাদায়ক প্রস্রাব হওয়া।
অনেক সময় অ্যামিবিক আমাশয়ের কারণে লিভার ফোলার মত গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া কখনও কখনও ছোট শিশুদের খিচুঁনি হতে পারে।
আমাশয় প্রতিরোধের করনীয়
আমরা জানি যে আমাশয় প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।আমাশয় প্রতিরোধ করতে যে নিময় গুলো মেনে চলে অবশ্যক তা হলো,
সবসময় পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।দাঁত ব্রাশ করার সময়ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।
মলত্যাগ করার পর পরিষ্কার পানি এবং সাবান কিংবা হ্যান্ড ওয়াস দিয়ে হাত ভালো ধুয়ে নিতে হবে।
রান্না বান্নার আগে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।অপরিষ্কার কোন কিছুতে রান্না করা যাবে না।
এছাড়া অপরিচ্ছন্ন হাতে কিছু খাওয়া যাবেনা।।খাওয়ার আগে হাত ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
বাইরের খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
খোসাযুক্ত যেকোন ফলমূল ও শাক-সবজি ধুয়ে নিতে হবে
ব্যবহৃত পোশাক ও তাওয়াল হালকা কুসুম গরম পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
একজনের ব্যবহৃত তাওয়াল আরেকজন ব্যবহার করা যাবে না।
শিশুদের হাত ধোয়ার ব্যাপারে জানাতে হবে।
অসুস্থ শিশুর ডায়পার পরিবর্তন করার সময় সর্তক অবলম্বন করতে হবে।
কিভাবে বুজবেন শিশুর আমাশয় হয়েছে কিনা?
- এ সময় শিশুর মারাত্মক ডায়রিয়া হবে। বিশেষ করে পেট ও নাভির চারপাশে প্রচন্ড ব্যাথা হবে।অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়াবাড়ি হলেও জ্বরও আসতে পারে।
- অনেক আমাশয় এমন ভাবে সংক্রমণ সৃষ্টি করে যার ফলে মলের সঙ্গে রক্ত বের হতে থাকে।
- শিশুর আমাশয় হলে যে লক্ষন টি বেশি দেখা দেয় সেটি হলো বার বার পেট ব্যাথা এবং পায়খানা করার প্রবনতা বেড়ে যায়।তবে পেট কখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না।
শিশুর আমাশয় হলে আমাদের কিছু করনীয় বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে ।তা হলো,আমাশয় হলে নিয়মিত খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
- প্রচুর পরিমানে তরল খাবার খাওয়াতে হবে।যেমন;ঠান্ডা পানি,চিনির শরবত, ডাবের পানি,ফলের রস ইত্যাদি। এতে শিশুর পানি শূন্যতা দূর হবে
- পায়খানা অতিরিক্ত পাতলা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
ঘরোয়া উপায়ে আমাশয় থেকে মুক্তির উপায়
থানকুনি পাতাঃ
থানকুনি পাতা বাটা এবং তার সাথে চিমটি লবন আর দু ফোঁটা সরিষা তেল এই তিনটা এক সাথে ভালো করে মিশিয়ে ভাতের সাথে প্রত্যকদিন খেলে আমাশয় ভালো হয়।
পাথর কুচি পাতাঃ
আমাশয় নিরাময়ে পাথর কুচি পাতা খুব এ দরকারী জিনিস।দু চামচ পাথর কুচি পাতার রস, দু চামচ থানকুনি পাতার রস এবং কুচি দূর্বাঘাসের রস এ তিনটি একসাথে মিশিয়ে তার সাথে আদার রস যোগ করে খেতে হবে। এতে আমাশয় কিছু টা নিরাময় পাবে।
কলাঃ
ডালিমের খোসাঃ
ডালিমের খোসা আমাশয় নিরাময়ের জন্য খুব উপকারি একটি জিনিস। ডালিমের শুকনো খোসা ও কাচা খোসা আমাশয় নিরাময়ের জন্য উপকারী। ডালিমেরচখোসা চূর্ন করে তাতে মধু মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
আম পাতা ও জাম পাতার রসঃ
আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে আম পাতা ও জাম পাতার রসের ঘরোয়া ঔষধ খুব এ কার্যকারি। কাচা আম ও জাম পাতার রস দুই থেকে তিন চামচ নিয়ে একটু গরম করে খেলে আমাশয় দূর হয়।জামের কুচি পাতার রস রক্ত আমাশয়ের জন্য খুব এ দরকারী জিনিস। কচি জাম পাতার রস দুই থেকে তিন চামচ নিয়ে গরম করে ছেকে দুই তিন দিন খেলে তাড়াতাড়ি আমশয় সেরে যায়।
কাঁচা বেলঃ
সাধারণত পেট খারাপ হলে আমরা কাচাবেল খেয়ে থাকি।এটি আমাশয় নিরাময়ের জন্য খুব এ উপকারী একটা ফল।কাচাবেল ধুয়ে প্রথমে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে।।এরপর একটি বাটিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।।সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এ কাচা বেলের পানি পান করলে আমাশয় ভাল হয়
আমাশয় হলে যে খাবার গুলো পরিহার করতে হবে। তা হলো
- চানাচুর
- চিপস জাতীয় খাবার
- কাচা মরিচ দিয়ে ঝাল মুড়ি ও ভর্তা
- ঝাল মশলা যুক্ত খাবার
- বাসি পঁচা খাবার
- চর্বি ও তেল যুক্ত খাবার
- ফাস্ট জাতীয় খাবার
এসব খাবার আমাশয়ের উপর্সগ বাড়িয়ে দেয়।
ডায়রিয়া জনিত শিশুর আমাশয় :
ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর মলে রক্ত দেখা দিলে বুঝতে হবে শিশুর আমাশয় হয়েছে।প্রায় পনের শতাংশ শিশুর মৃত্যু ডায়রিয়া জনিত রোগের কারনে হয়ে থাকে।অপুষ্টি ও পানি সল্পতা শিকার হলে শিশু মায়ের বুকের দুধ পান না করলে শিশুর আমাশয় মারাত্মক হয়ে উঠে।এ ছাড়া ডায়রিয়ার তুলনায় আমাশয় শিশুর পুষ্টিমান ক্ষুন্ন করে বেশি।হাম আক্রান্ত বা তিন মাসের মধ্যে হাম ভোগার ইতিহাস থাকলে মারাত্মক আমাশয় হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
পড়ুন :ফর্মুলা দুধ কি? খাওয়ার নিময় কি এবং ফর্মুলা দুধের চেয়ে বুকের দুধ কেন ভালো?
শেষকথা:
আমাশয় একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ ।শিশুরা সাধারণত অনেক কিছু মুখে দিয়ে থাকে ।যেমন - কাপড় ,মাটি,বিভিন্ন ধরনের খেলনা ইত্যাদি । তাই শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় । এ থেকে বলা যায় যে ,পরিস্কার-পরিছন্নতা ও স্বাস্থ্যস্মত খাবার খেলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি ।