জেনে নিন-স্তনে ব্যথা (Breast pain) হলে করণীয় কি ?

জেনে নিন-স্তনে ব্যথা (Breast pain) হলে করণীয় কি? বিস্তারিত

মেয়েদের স্তনে ব্যথা হলে কি করণীয়? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন – আজকের এই পোস্টটিতে আমরা এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

স্তন ব্যথা মেয়েদের শরীরের একটি অন্যতম সমস্যা। যা অধিকাংশ নারীরাই লজ্জার কারণে বা আতঙ্কের কারণে লুকিয়ে রাখতে চান। আবার অধিকাংশ নারীরাই জানেন না এই ব্যথা হওয়ার কারণ এবং এর থেকে প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে। কিন্তু যদি আমরা এই সমস্যাটিকে গুরুত্ব সহকারে না দেখি তাহলে পরবর্তীতে এটি ক্যান্সারে রুপ নিতে পারে। তাই স্তন ব্যথা হওয়ার কারণ এবং প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা খুবই জরুরি।    

এখন চলুন আমরা স্তন ব্যথা হওয়ার কারণ ও এর থেকে প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই, 

স্তন ব্যথা (Breast pain) হলে করণীয় কি ?

কী কী কারণে  স্তন ব্যথা হতে পারে ?   

স্তন ব্যথা হওয়ার কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য কারণ রয়েছে। কারণ গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –

পিরিয়ডের কারণে :

পিরিয়ডের কারণে স্তন ব্যথা হতে পারে। কারণ এ সময় আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে থাকে। যার জন্য এ সময় আপনার ব্রেস্টে হালকা ব্যথা হতে পারে। আবার অনেক সময় পিরিয়ডের আগেও এই ব্যথা হতে পারে। তবে পিরিয়ডের পর এই ব্যথা কমে যাবে। সে জন্য এ রকম সিচুয়েশনকে চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা নরমাল মনে করে থাকেন।তাই এ রকম লক্ষ্মণ দেখা দিলে ঘাবড়ে যাবেন না। 

স্তনের ভেতর সিস্ট জমলে :

সিস্ট হল এক ধরনের তরলপূর্ণ থলি, যা আপনার অনেক সময় ব্রেস্টের ভেতর হতে পারে। আপনার স্তনের ভেতর গ্রন্থি কোষ গুলো যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন সিস্ট হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। আর ব্রেস্টের ভেতর যখন এই সিস্ট জমবে তখন আপনার ব্রেস্টে ব্যথা হতে পারে। আর যখনই এ রকম বুঝতে পারবেন তখন অবশ্যই একজন চিকিৎসক বিশেষজ্ঞের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ নিবেন তা না হলে পরবর্তীতে এর থেকে জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে।

জীবাণুর সংক্রমণ হলে :

আপনার ব্রেস্টে যদি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা ছত্রাকের সংক্রমণ হয় তাহলে আপনার ব্রেস্টে যন্ত্রণা বা প্রদাহ হতে পারে।যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মেস্টাইটিস বলা হয়ে থাকে। এই মেস্টাইটিস ব্রেস্ট পেইনের অন্যতম একটি প্রধান কারণ।   

অনেক সময় যক্ষ্মা হলে ও ব্রেস্ট পেইন হয়। আর এই ব্যথার সঙ্গে জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে জন্য এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে :

অনেক সময় শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে গেলে আপনার স্তনে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত শিশুকে বুকের দুধ দেয়ার আগে ও পরে স্তন ঠিক মত পরিষ্কার না করা হলে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এতে করে অনেক সময় আপনার ব্রেস্টে ইনফেকশন বা ঘা হতে পারে। আর এই ইনফেকশনের কারণে আপনার স্তনে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে : 

প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে অর্থাৎ সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের দিকে আপনার ব্রেস্টে পেইন অনুভব হতে পারে। কারণ এ সময় স্তনের আকার বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে স্তনের ওপর দিয়ে নীল শিরা ও দেখা যেতে পারে। এর ফলে আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যেতে পারে। এতে করে হরমোনের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতে পারে। যার ফলে এ সময় আপনার স্তনে ব্যথা হতে পারে।

ওষুধের সাইড ইফেক্ট হলে :

আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে Contraceptive pills বা গর্ভ নিরোধক ওষুধ সেবন করেন তাহলে এই ওষুধের সাইড ইফেক্ট হিসেবে ও অনেক সময় আপনার ব্রেস্টে পেইন হতে পারে। 

আরও জানুন: 

ব্রেস্ট ক্যান্সার(Breast Cancer) কী? এটি হওয়ার কারণ এবং প্রতিরোধ করার উপায় কি ?

স্তন ব্যথা হলে কি করবেন ?

মেয়েদের স্তন ব্যথা হলে করণীয় কাজ গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া :

স্তন ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে সব সময় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার যেমন : মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবুজ শাক-সবজী, ফলমুল প্রভৃতি বেশি করে খেতে হবে। এসব খাবার আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করবে। এর ফলে পিরিয়ডের সময় কষ্ট কম হবে এবং স্তন ব্যথা হবে না। 

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা :

ব্রেস্ট পেইন প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। আর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আপনাকে হাইড্রোজেনেটেড অয়েল সমৃদ্ধ খাবার যেমন : বেকারির খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রভৃতি এবং মিথাইলজ্যান্থাইন জাতীয় খাবার যেমন : চকলেট, মাখন, পনির, কোকা-কোলা, কলা, আচার, মাশরুম প্রভৃতি খাবার খাওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে।  এতে করে আপনার হরমোনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ব্রেস্ট পেইন হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। 

আরও পড়ুন:

 ওজন বাড়ার ফলে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে? জেনে নিন, কীভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন 

স্তনের মাপ অনুযায়ী ব্রা পরিধান করা :

স্তন ব্যথা রোধ করতে হলে আপনাকে স্তনের মাপ অনুযায়ী ব্রা পরিধান করতে হবে। কারণ টাইট ব্রা বা স্তনের মাপের চেয়ে খুব ছোট ব্রা পরিধান করলে আপনার ব্রেস্টের ওপর প্রেসার পড়বে এবং সেই সাথে প্রচুর ঘাম হবে। এতে করে আপনার ব্রেস্টে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাই সব সময় স্তনের মাপ অনুযায়ী ব্রা পরিধান করার   চেষ্টা করবেন। এর ফলে আপনার ব্রেস্ট পেইন হবে না। 

স্তন পরিষ্কার রাখা :

বাচ্চাকে প্রত্যেক বার বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে ও পরে সব সময় স্তন ও নিপল পরিষ্কার করবেন এবং এর পাশাপাশি সব সময় পরিষ্কার নরম সুতির কাপড় পরিধান করার চেষ্টা করবেন।এতে করে আপনার ব্রেস্টে ঘাম কম হবে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর সংক্রমণ হবে না। আর ব্রেস্ট পেইনের আশঙ্কা ও থাকবে না। 

ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া :

ব্রেস্ট পেইন থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে যেসব খাবারে ভিটামিন বেশি থাকে সেসব খাবার বেশি করে খেতে হবে। আপনার দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে রাখবেন। এসব খাবার খেলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকবে। ব্রেস্ট পেইনের আশঙ্কা কমে যাবে। 

ম্যাসাজ করা : 

ব্রেস্ট পেইন কমানোর জন্য আপনি গোসলের সময় সাবান লাগিয়ে ব্যথার জায়গায় হালকা ম্যাসাজ করুন। এতে করে আপনার ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক থাকবে, জীবাণুর সংক্রমণ হবে না এবং লসিকার ড্রেনেজ বাড়বে। এর ফলে ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।

বরফের স্যাঁক : 

এক টুকরো বরফ তোয়ালে করে মুড়িয়ে ব্যথার স্থানে প্রায় ১০ মিনিট স্যাঁক দিন। এটি আপনার স্তনের ব্যথা কমাতে বেশ ভালোই কাজ দিবে।

খাবার লবণ কম খাওয়া :

ব্রেস্ট পেইনের প্রতিরোধ করতে হলে খাবার লবণের ব্যবহারের কমিয়ে দিন। কারণ লবণ বেশি খেলে আপনার শরীরে পানি জমবে। এর ফলে স্তন ফুলে যাবে। এর ফলে পিরিয়ডকালীন সময়ে আপনার স্তনে ব্যথা ও ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। তাই ব্রেস্ট পেইন কমাতে হলে খাবার লবণ পরিমাণে কম ব্যবহার করুন।

শেষ কথা :

আমাদের সমাজে অধিকাংশ নারীরাই স্তনের ব্যথাকে সামান্য সমস্যা মনে করে লুকিয়ে রাখতে চান। কিন্তু অনেক সময় এই সামান্য সমস্যাই আপনার জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।তাই স্তনে যদি কোন প্রকার অসুবিধা মনে করেন তাহলে অবশ্যই উপরিউক্ত করণীয় দিক গুলো অনুসরণ করবেন এবং প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ বক্ষ চিকিৎসক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন।  


Post a Comment

Previous Next