দুই বছরের বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়াবেন যেভাবে

 দুই বছরের বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়ানো একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই সময়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করা জরুরি, যাতে শিশু মানসিকভাবে কোনো আঘাত না পায়। এখানে কিছু কার্যকর পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

       বাচ্চাকে কখন বুকের দুধ ছাড়ানো উচিত

বাচ্চাকে কখন বুকের দুধ ছাড়ানো উচিত

বাচ্চাদের বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় প্রতিটি মা এবং শিশুর জন্য একটি বিশেষ এবং সংবেদনশীল পর্যায়। এই সময়টি কখন শুরু করা উচিত, তা নিয়ে অনেক মা দ্বিধায় ভোগেন। সাধারণত, চিকিৎসকরা এবং বিশেষজ্ঞরা এক বছর থেকে দুই বছর বয়সের মধ্যে বুকের দুধ ছাড়ানোর পরামর্শ দেন। তবে, কখন দুধ ছাড়াবেন তা সম্পূর্ণরূপে মা এবং শিশুর প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে।

সঠিক সময় নির্ধারণ

শিশুকে বুকের দুধ ছাড়ানোর কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। সাধারণত, যখন শিশু শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে এবং তার পুষ্টির জন্য কেবল বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল থাকে না, তখনই দুধ ছাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কমপক্ষে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়, যদি মা এবং শিশু উভয়ের পক্ষেই তা সম্ভব হয়।

যখন দুধ ছাড়ানো উচিত নয় 

অসুস্থতার সময়: 

শিশু বা মা যদি অসুস্থ থাকে, তবে বুকের দুধ ছাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। এই সময়ে শিশু তার মায়ের কাছ থেকে অতিরিক্ত যত্ন এবং সান্ত্বনা চায়, যা বুকের দুধের মাধ্যমেও পাওয়া যায়।

বড় কোনো পরিবর্তনের সময়: যদি শিশু নতুন কোনো পরিবেশে যাচ্ছে (যেমন—ডে-কেয়ারে যাওয়া) বা পরিবারের কোনো বড় পরিবর্তনের মধ্যে থাকে, তখন দুধ ছাড়ানো পিছিয়ে দিন। এই ধরনের পরিবর্তন শিশুর জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

দাঁত ওঠার সময়: 

যখন শিশুর দাঁত ওঠে, তখন সে কিছুটা অস্থির থাকে। এই সময়ে বুকের দুধ তাকে স্বস্তি দিতে পারে।

বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়ানোর উপায়

১. ধীরে ধীরে শুরু করুন

একবারে বুকের দুধ ছাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে শিশু এবং মা উভয়ের জন্যই সমস্যা হতে পারে। হঠাৎ করে বন্ধ করার বদলে, ধীরে ধীরে দুধ খাওয়ানোর পরিমাণ এবং সময় কমান। প্রথমে দিনের বেলা একটি নির্দিষ্ট সময়ে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করুন এবং এর পরিবর্তে অন্য খাবার বা পানীয় দিন।

২. বুকের দুধের বিকল্প দিন

যখনই শিশু বুকের দুধ খেতে চাইবে, তাকে পুষ্টিকর অন্য খাবার বা পানীয়ের প্রস্তাব দিন। যেমন—গরুর দুধ, বিভিন্ন ফলের রস, স্যুপ বা নরম শস্য জাতীয় খাবার। শিশুর পছন্দের খাবারগুলো তাকে খেতে দিন, এতে সে বুকের দুধের কথা ভুলে অন্য খাবারে আগ্রহী হবে।

৩. নতুন রুটিন তৈরি করুন

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য আপনি যে সময়গুলো ব্যবহার করতেন, সেই সময়গুলোতে অন্য কিছু করার চেষ্টা করুন। যেমন—খেলনা দিয়ে খেলা, পার্কে ঘুরতে যাওয়া, বই পড়া বা নতুন কোনো গান শোনানো। এতে শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরবে এবং সে বুকের দুধের জন্য বায়না করবে না।

৪. রাতের বেলা বুকের দুধ ছাড়ানো

দিনের বেলার চেয়ে রাতের বেলা বুকের দুধ ছাড়ানো কঠিন হতে পারে। রাতের বেলা শিশু জেগে উঠলে তাকে পানি বা অন্য কোনো পানীয় দিন। একই সাথে তাকে আদর করুন এবং বুকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করুন। এতে সে নিরাপত্তার অনুভূতি পাবে।

৫. সান্ত্বনা দিন

বুকের দুধ শুধুমাত্র পুষ্টির উৎস নয়, এটি শিশু এবং মায়ের মধ্যে এক ধরনের মানসিক সংযোগও তৈরি করে। তাই বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় শিশুকে অতিরিক্ত আদর করুন, গল্প বলুন এবং তার পাশে থাকুন। এতে সে বুঝবে যে বুকের দুধ বন্ধ হলেও আপনি তার পাশেই আছেন।

৬. ধৈর্য ধরুন

প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে বুকের দুধ ছাড়ানোর প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। কিছু শিশু দ্রুত মানিয়ে নেয়, আবার কারো কারো সময় লাগে। তাই ধৈর্য হারাবেন না। যদি শিশু বায়না ধরে, তবে তাকে জোর করবেন না।

৭. নিজের যত্ন নিন

শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করলে আপনার স্তনে দুধ জমে কষ্ট হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনি স্তনে গরম কাপড় দিয়ে চাপ দিতে পারেন বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ওষুধ সেবন করতে পারেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধৈর্য এবং ভালোবাসা দিয়ে এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করা। যদি আপনার এই বিষয়ে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

Post a Comment

Previous Next