এসি ছাড়া ঘরকে ঠান্ডা রাখার অভিনব কৌশল


গরমেকালে গরম পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে তীব্র শীত যেমন সহ্য করা কষ্টকর তার থেকে বেশি কষ্ট তীব্র গরম সহ্য করা।আর এই গরমের তাপমাত্রা যখন বেশি হয়ে যায় তখন ঘরের ফ্যানের বাতাসও তা ঠান্ডা করতে পারেনা।এমন কি ফ্যানের বাতাস তখন আরো বেশি মনে হয়।অবশেষে মানুষ বেছে নেয় এসি বা এয়ার কুলার এবং অন্যান্য সকল কৃত্রিম উপায়।

ঘরকে ঠান্ডা রাখার অভিনব কৌশল


তবে এসি দিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখা যেমন একদিকে ব্যয়বহুল তেমনি অন্যদিকেএটি আবার পরিবেশের সাথে সাথে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এই দিক থেকে বিবেচনা করলে বলা যায়প্রাকৃতিক উপায়েই  ঘর ঠান্ডা করার  উপকারিতা এসি থেকে অনেক ভালো প্রাকৃতিক উপায়ে হয়তো দীর্ঘক্ষণ ঘর বেশী ঠান্ডা রাখা যায়না তবে এগুলো অবশ্যই আপনাকে সাময়িকভাবে দিতে পারে আরাম।এবে এটা একটা ভালো দিক যে আপনি সাময়িক ভাবে হলেও প্রাকৃতিক উপায়ে খুব সহজেই গরমে ঘর ঠান্ডা করতে পারবেন আপনার স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে।

দীর্ঘক্ষণ এসি ভিতর থাকলে কি  কি সমস্যা হয়?

শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা যেমন-নাখ চোখগলায় সমস্যা হতে পারে।এর মাঝে  নাক বন্ধ থাকা আবার  চোখ দিয়ে পানি পড়ার মত সমস্যা দেখা যায়।

বেশিদিন এসিতে থাকার ফলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।এর মাঝে ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়া,চুলকানি ইত্যাদি

শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়া।ঘরে হোক  বা অফিসের  এসি এমনভাবেই তৈরি  হয় যান শরীর ঠাণ্ড হয়ে যায়।  এতে করে দেখা যায়, শরীর এইভাবে ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে সহজেই শরীরে ক্লান্তি চলে আসে।এক গবেষণায় দেখা গেছে যাদেরই বাড়িতে বা অফিসে নিয়মিত এসি চলে তারাই সহজে ক্লান্ত হয়ে যান।

 দীর্ঘদিম এসির রুমে থাকার ফলে যাদের অ্যাজমা   অ্যালার্জি  আছে বেড়ে যেতে পারে

ড্রাই আইজ

এসি রুমে থাকাত ফলে চোখ শুষ্ক হতে থাকে। এতে চোখ  চুলকায় চোখে জ্বালাও করতে পারে। অনেকে আবার  অস্পষ্ট দেখেন।

সর্বক্ষন এসিতে যারা থাকে ডিহাইড্রেটেড বা পানিশূন্যতায় তারা ভুগে থাকেন

বেশি সময় এসি ঘরে থাকলে শরীর শুকিয়ে যায়।এর ফলে মাথা ব্যাথা বেড়ে যায় এবং মাইগ্রেনের ব্যথা থাকলে তা আরও  অনেকেটাই বেড়ে যায়।

অনেক দিন বা  সময় এসিতে থাকলে নাকের প্যাসেজ শুকিয়ে যাতে থাকেফলে মিউকাস মেমব্রেনে ইরিটেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে 

ঘরকে ঠান্ডা করার কৌশল

.বাড়িতে গাছপালা রাখুন

কথায় আছে গাছপালা আমাদের বন্ধু।গাছ না থাকলে যেমন আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারতাম না তেমনি ভাবে গাছের ছায়া আমাদের ঘরকে করে তোলে ঠান্ডা।  আপনার ঘরকে ঠান্ডা  রাখার ব্যাপারে গাছের তুলনা এক কথায় অপরিসীম।বাড়ির আসেপাশে বা সাদের বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগান।ঘরের বেলকনিতে ছোট ছোট গাছ রাখতে পারেন যেমনঃ অ্যালোভেরা, স্নেক,পিস লিলি, প্ল্যান্ট, বোস্টন ফার্ন,জারবেরা, পথোস, ব্যাম্বু পামইত্যাদি গাছ রাখতে পারেন ঘরে পারেন।

.জানলায় ভারী এবং মোটা পর্দা

দিনের বেলাতে জানলায় মোটা এবং ভারী পর্দা দিন। কেননা ঘরের জানলা দিয়ে অনেক সময় তাপ প্রবেশ করে থাকে। তাই এই ধরনের পর্দা ব্যাবহার করলে ঘরে তাপ কম প্রবেশ করবে এবং ঘর ঠান্ডা থাকবে।

.মেঝে মোছা

সাধারণত ঘরের মেঝে  ঠান্ডা থাকলেঘরও ঠান্ডা থাকে। এই জন্য  ঘরের মেঝে  দুই- একবার মুছে নিন প্রতিদিন এতে আপনার ঘর অনেকটাই ঠান্ডা থাকবে।

.ঘর যথাসম্ভব ফাকা রাখুন

আপনার ঘর যতটা  খোলামেলা এবং ফাঁকা রাখবেন ততই ঘর ঠান্ডা থাকবে। যে ঘরে যত  আসবাবপত্র বা জিনিস থাকে, সেই ঘরে ততটা গরম লাগে। আর যে ঘর  খোলামেলা  ফাকা হয় সেই ঘরে গরম  একটু কমই লাগে।এই জন্য আপনার কক্ষের অতিরিক্ত জিনিসপত্র সরিয়ে দিন যাতে বাতাস চলাচলে কোন বাধা না আসে।

.সন্ধ্যায় জানলা খোলা রাখুন

সাধারণত সন্ধ্যায় আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে,ঠান্ডা বাতাস থাকে।তাই দিনের তাপ কমে গেলে অবশ্যই ঘরের জানলা খোলা রাখুন। এতে ঘরে ভালোভাবে ঠান্ডা বাতাস চলাচল করবে এবং ঘর ঠান্ডা রাখবে।

.টেবিল ফ্যানের সামনের দিকে বরফ রাখুন

টেবিল ফ্যানের  ঠিক সামনের দিকে একটি গামলায় আইস কিউব অথবা ফ্রিজে রাখা  ঠান্ডা পানি রেখে দিন তারপর  ফ্যান ছাড়ুন। এটি বরফ অথবা ঠান্ডা পানি ফ্যানের আশেপাশে ঠান্ডা তৈরি করে এবং তা ফ্যানের বাতাস পুরো ঘরে ছড়িয়ে দেয়। এর কারনে কিছুসময়ের মধ্যেই  ঘর শীতল হয়ে পড়ে। রাতে একটা  ভালো ঘুম দেওয়ার  জন্য ঘুমানোর ঠিক আগ মূহুর্তে  এই কাজটি করুন।  তবে সবথেকে ভালো ফলাফল পাবেন যদি  আগে ঘরের  জানালা দরজা বন্ধ করলে।

 রোদের তাপ বেশি হলে জানালা বন্ধ রাখুন

দিনে  সাধারণত  জানালা দিয়ে ঘরে  তাপ  প্রবেশকরে। এইজন্য দিনের বেলা সরাসরি যে জানালা দিয়ে সূর্যের তাপ ঘরে প্রবেশ করে সেটি বন্ধ রাখুন।

ঘরের মেঝেতে বিছানা বানান

খুব বেশি  গরম পড়লে মেঝেতেই বিছানা করতে পারেন মেঝে সিলিং থেকে  পর্যাপ্ত পরিমাণ দূরে হওয়ায়  বিছানার চেয়ে মেঝেতে  গরম গরম কম অনুভূত হবে। আবার ঘুমানোর আগে  ঠান্ডা পানি দিয়ে  মেঝে মুছে নিতে পারেন এতে গরম অনেকটায় কম লাগবে।

ভেজা কাপড় ঘরে রাখুন

ভেজা তোয়ালে বা মোটা কোন কাপড় ভিজিয়ে ঘরে টানিয়ে রাখুন এতে ঘর ঠান্ডা হবে।

বেডশীট  ঘুমানোর আগে ফ্রীজে রাখুন

যদি শুনতে  একটু আজব মনে হলেও এই প্রচন্ড  গরমে একটু শান্তির  জন্য  এটি খুব কার্যকর একটি  উপায়। বিছানার চাদর  ভাজ করে একটি  জিপার প্লাস্টিক ব্যাগে ভিতর ভোরে নরমাল ফ্রিযে ঘন্টা বা ৩০ মিনিট রেখে দিন পরে ঘুমানোর আগে বের করে নিন।  আরেকটা দিক অবশ্যই খেয়াল রাখবেন বিছানার  জন্য সর্বদা সুতি চাদর ব্যাবহার করুন সুতি চাদরে  বাতাস চলাচল করতে পারে এই জন্য  গরমেকালে সুতি চাদর আরামদায়ক হয়।

বিদ্যুৎ যন্ত্রপাতি কম ব্যবহার করূন

ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলা কাজ করার  সাথে তাপ উৎপন্ন করে থাকে। সাধারণত অন্যান্য যন্ত্রপাতি যদিও সবসময় ব্যবহার না করেন   লাইট কিন্তু  সবসময়ই  জ্বালানো হয়।এইজন্য অন্যান্য বাল্বের পরিবর্তে  ব্যাবহার করুন এলইডি বাল্ব এলইডি বাল্ব  যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়তেমনি খুব কম তাপ উৎপন্ন করে থাকে।

জানালার দিকে টেবিল ফ্যান  ঘুরিয়ে রাখুন

আপনার রুমের গরম বাতাসকে বের করে দিতে এবং ঘরকে ঠান্ডা করতে স্ট্যান্ড ফ্যান বা টেবিল ফ্যান জানালার দিকে ঘুরিয়ে দিন এতে  করে ফ্যানের বাতাসের কারনে রুমের গরম বাতাস বের হয়ে যাবে।

রাতের বেলা সব জানালা খোলে দিন

সাধারণত রাতের বাতাস  দিনের তুলনায় সবসময় একটু বেশি ঠান্ডা হয় তাই সূর্যের তাপ কমার সাথে সাথেই  জানালা-দরজা খুলে রাখুব যাতে রাতের ঠান্ডা   বাসায় বাতাস  আপনার ঘরে প্রবাহিত হতে পারে।

 বাতাস চলাচল বৃদ্ধি:

  • সিলিং ফ্যান ব্যবহার করুন: এটি ঘরের গরম বাতাস উপরে তুলে ঠান্ডা বাতাস নীচে নামিয়ে আনে।
  • ক্রস ভেন্টিলেশন তৈরি করুন: বিপরীত দিকের দুটি জানালা খুলে দিলে বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি হয়।
  • এক্সজস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন: রান্নাঘর ও বাথরুমের গরম বাতাস বের করে দিতে এটি ব্যবহার করুন।

 

         অতিরিক্ত টিপস:

  • ঘরের ভেতর ভেজা কাপড় মেঝেতে ঝুলিয়ে রাখুন: এতে মেঝে ঠান্ডা থাকবে এবং ঘরের তাপমাত্রাও কমবে।
  • ইলেকট্রনিক জিনিসপত্রের প্লাগ বন্ধ রাখুন: যখন ব্যবহার না করা হচ্ছে তখন টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদির প্লাগ বন্ধ রাখুন।
  • গরমের দিনে রান্না কম করুন: রান্না করলে ঘর গরম হয়। বাইরে খাওয়া বা ঠান্ডা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করুন: ধুলোবালি ঘরকে গরম করে তোলে। তাই নিয়মিত ঘর পরিষ্কার রাখুন।

এই অভিনব কৌশলগুলো ব্যবহার করে আপনি এসি ছাড়াইও আপনার ঘরকে ঠান্ডা রাখতে পারবেন। 

       

Post a Comment

Previous Next