গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করনীয় কি?

 গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য   

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে করণীয়


গর্ভাবস্থা এখন একটি অবস্থা যা প্রত্যেক মায়ের জন্য খুবই মূলবান সময়। সময়ে নারীদের বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়গর্ভাবস্থার সমস্যা গুলোর মধ্যে কারও হয়ত বুকে জ্বালা করা,প্রসাবে জ্বালা,এলার্জি  জাতীয় সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা, চোখে ঝাপসা,ডায়রিয়া ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা  দেখা যায়। কিন্তু গর্ভবতী  মায়েদের পরিপাক জনিত সমস্যা সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায় কারো পরিপাক স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন ঘন হয়ে থাকে আবার কারো ক্ষেত্রে এর বিপরীত হয়ে থাকে। তবে সময়ে পরিপাকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটি হয় তা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য।বেশি ভাগ গর্ভবতী মায়েরা সাধারণত এই সমস্যাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি শরণাপন্ন হয়।এই কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য গর্ভাবস্থায় এবং গর্ভপরবর্তী  অবস্থায় নারীদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারনগুলো কি কি?

চলুন জেনে নেওয়া যাক-

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার বেশ কিছু কারন রয়েছে। কারন গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

*প্রথমত,গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের শরীরে এক ধরনের নতুন হরমোনের আধিক্য হয়। এই হরমোনটি 

প্রজেসস্টন হরমোন নামে পরিচিত ।এই হরমোনের কাজ হলো পরিপাক তন্তের সংকোচন প্রসারনের যে গতি আছে সেটাকে ধীর গতি সম্পন্ন করে দেওয়া তাই গর্ভাবস্থায় এই হরমোনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।

 * দ্বিতীয়ত, গর্ভাবস্থায় অনেক গর্ভবতী মায়ের বমি ভাব গন্ধ অনুভূত হয়।এ সময়ে খাবারে রুচি জনিত সমস্যার কারনে সামান্য পানি খেতেও অনীহা হয়ে থাকে একজন গর্ভবতী  নারীর  প্রতিদিন যে পরিমান পানি খাওয়ার কথা সেই পরিমাণে পানি না খাওয়ার কারনে গর্ভাবস্থায়  কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেখা যায়।

*তৃতীয়,আঁশযুক্ত খাবার পরিপাকের জন্য খুবই কার্যকরী।গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীদের অনেকেরই খাবার খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা যায়।তাই সঠিক পরিমান মতো আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

* গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীরা দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ থেকে দুরে থাকেন। তারা দিনের বেশি ভাগ সময় বসে অথবা শুয়ে কাটাতে পছন্দ করেন। ছাড়াও সময়ে চিকিৎসকেরা গর্ভবতী নারীদেকে একটু বেশি সময় বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই গর্ভবস্থায় গর্ভবতী মায়েরা হাঁটা চলা ভারি কাজ একটু কম করে থাকেন। গর্ভবস্থায় বেশি বিশ্রামের কারনেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। 

গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে করনীয় কি?

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েরা  বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারে   গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পাওয়ার  উপায়গুলো জেনে নিন-

()কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে প্রথমেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে খাদ্য তালিকার দিকে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি খেতে হবে।এটি নির্ভর করবে রোগীর শারীরিক গঠন কোন ঋতু চলছে তার ওপর। তবে সাধারণত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি অর্থাৎ আট থেকে দশ গ্লাস পানি রোগীকে প্রতিদিন খেতে হবে। তবে প্রচুর পরিমানে পানি না খেতে পারলে তরল খাবার যেমন সুপ,শরবত,ডাবের পানি ইত্যাদিও শরীরের জন্য উপকারে আসবে।

()কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর জন্য আরেকটি উল্লেখ যোগ্য খাবার হলো দুধ দুধ্যজাতীয় পন্য। গরম দুধ প্রতিদিন রাতে যদি কোনো কোষ্ঠকাঠিন্য রোগী খেতে পারে তাহলে দেখা যাবে ধীরে ধীরে পরিপাক স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে অনেকেই আছেন যারা গর্ভাবস্থায় গরম দুধ খেতে পারেন না সেক্ষেত্রে দুধের তৈরি বিভিন্ন খাবার যেমন- পায়েস, সেমাই, ফালুদা, সাবু দানা, দই, সানা তৈরি খাবার ইত্যাদি খেতে পারেন। দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য যেমন দুর হবে তেমনি গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হাড়ের গঠনে ক্যালসিয়ামের যে চাহিদা তৈরি হয় তা পূরন করতে সাহায্য  করবে।

()আঁশজাতীয় খাবার  কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আঁশ জাতীয় খাবার বলতে আমরা বুঝি বিভিন্ন রকম শাক সবজি যেমন - লাল শাক,ডাটা শাক,সজনে পাতা,সজনে  ডাটা, বিভিন্ন রকম ডাল, পালং শাক, পুঁই শাক ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন অবশ্যই রাখতে হবে বেশি পরিমানে আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে তাহলেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দুর করা যাবে।

() গর্ভাবস্থায় সব ধরনের ফল খাওয়া  যাবে তবে কিছু ফল খোসা সহ খাওয়া ভালো।কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর বিভিন্ন রকম ফল খোসা সহ খেতে হবে। তবে যদি চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হয় তাহলে জুস করে খেতে হবে যেমন - খোসা সহ আপেল,পেয়ারা ইত্যাদি। খোসা যুক্ত ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সাহায্য করে।

()পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন অন্তত পক্ষে দুটি পাকা কলা গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরি পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করার পাশাপাশি বাচ্চার জন্যও উপকারী।

() কিছু কিছু দানাদার খাদ্য আছে যেমন - বাদাম। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন অল্প পরিমানে বাদাম খাওয়া ভালো। বাদাম খাওয়া পরিপাকের জন্য উপকারী। কখনো কখনো বাদাম খোসাসহ চিবিয়ে  খাওয়া ভালো। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

() গর্ভাবস্থায় সাধারণত ব্যায়াম করার প্রয়োজন হয় না। সময়  ভারী  ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু্ু  প্রতিদিন হালকা কিছু ব্যায়াম করা ভালো। বিশেষ কিছু ব্যায়াম রয়েছে  যেমন  ইয়োগা বা যোগ ব্যায়াম যেগুলো গর্ভাবস্থার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত করা যায় সারাদিন শুয়ে বসে না থেকে যদি ঘরের হালকা কিছু কাজ এবং নিয়মিত ইয়োগা করা যায় তাহলে অবশ্যই কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করা সম্ভব।

() গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ইউসুফগুল ভুষি ভালো কাজ করে। এটি গ্যাস্টিক পরিপাকের বিভিন্ন সমস্যা দুর করতে সাহায্য করে থাকে। তাই এক গ্লাস পানিতে এক বা দুই চামচ পরিমাণ ইউসুব গুল ভুষি ভিজিয়ে না রেখে খাওয়া ভালো।কারন এটি পেটের মধ্যে গিয়ে ফুলে যাবে এবং পরিপাকের সময় মলাকারে বেড়িয়ে যাবে। ইউসুব গুলের ভুষি যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করা সম্ভব হবে। 

()লেবু পানি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে কাজ করে। হালকা কুসুম গরম পানিতে যদি দুই চামচ  লেবু মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে এটি খুব ভালো কাজ করবে তবে লেবু পানি খাওয়ার ফলে কারো কারো ক্ষেত্রে এ্যাসিডিটি বা গ্যাস্টিকের সমস্যা সৃষ্টি  হয় ।সেক্ষেত্রে লেবু পানিটা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

(১০)গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মসলা তেলযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য এসিডিটি জনিত সমস্যা হতে পারে। তাই  গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই কম তেল মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেতে হবে।এতে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং এসিডিটি হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।

আরো জানুন:




সতর্কতা

অনেক গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যে খুব জটিল সমস্যায় পরিনত হতে পারে। অনেক সময় পরিপাক ঠিক মতো না হওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।  কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে মলাশয় দিয়ে  রক্তপাত হতে দেখা যায়। এছাড়াও   কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে পাইলসের সমস্যা হতে পারে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই ভয়ানক হয়ে থাকে।

এর ফলে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত হওয়া সহ বাচ্চার ওপরে নানা ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ঔষধ সেবন করতে হবে। তাহলেই গর্ভাবস্থায় মা বাচ্চা উভয়ই সুস্থ থাকবে তাই যারা গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

                

Post a Comment

Previous Next