রমজানে গর্ভবতী মায়েদের যা করা উচিত

রমজানে গর্ভবতী মায়েদের যা করা উচিত বিস্তারিত জেনে নিন-

রমজানে গর্ভবতী মায়েদের যা করা উচিত


রমজানে অনেক গর্ভবতী মায়েরা চিন্তিত থাকেন কারণ রমজানে রোজা থাকা নিয়ে অনেকের মধ্যেই জড়তা থাকে।  অনেক গর্ভবতী মায়েদের মধ্যেই রমজান মাসে রোজা রাখার সঠিক ধারনা থাকে না। শারীরিক কোনো জটিলতা ছাড়া গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখতে পারে। গর্ভবতী মায়েরা রমজানে রোজা রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন শারীরিক  নানা জটিলতার কারণে। রমজানে গর্ভবতী মায়েরা বাড়তি কিছু সচেতনতা অবলম্বন করে রোজা রাখতে পারেন। গর্ভাবস্থায় কিভাবে রোজা রাখার পাশাপাশি গর্ভকালীন শারীরিক  সুস্থতা বজায় রাখা যায় চলুন জেনে নেই।

গর্ভবতী মায়েরা কখন  রোজা রাখতে পারবেন ?

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস মায়ের গর্ভে অনাগত শিশুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়।তাই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন, পুষ্টি, ক্যালসিয়াম, পানি ইত্যাদির সরবরাহের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও সময় গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। যেমন - মাথা ঘুরানো,বমি বমি ভাব,খেতে কষ্ট হওয়া, ওজন হ্রস পাওয়া ইত্যাদি রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা ।

 প্রয়োজনে পড়ুন :

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন যেসব খাবার

গর্ভধারণে মানসিক চাপ যেসব প্রভাব ফেলতে পারে

গর্ভকালীন পরের তিন মাস বা মধ্যবর্তী তিন মাস গর্ভবতী মায়েরা কিছুটা শারীরিক ভাবে রোজা রাখার জন্য সক্ষম হয়। কারন পরের তিন মাসে বাচ্চার শারীরিক গঠন তৈরি হয়ে যায়।তাই সময় মায়েরা ইচ্ছা করলে রোজা রাখতে পারে। কিন্তু্ অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সময় রোজা রাখতে হবে। কারন গর্ভাবস্থায় অনেকের ডায়াবেটিস থাকতে পারে। আর গর্ভাবস্থায় যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের রোজা না রাখাই  উত্তম। 

 

গর্ভাবস্থার  শেষের তিন মাস গর্ভবতী মায়ের পেটে বাচ্চা দ্রুত বাড়তে থাকে। তাই শেষের তিন মাস মায়ের সাবধানে চলতে হবে। সময় গর্ভবতী মা তার সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য মায়ের খুব সতর্ক হতে হবে। সময় গর্ভবতী মাকে বাচ্চার সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।এছাড়াও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বভাবিকের চেয়ে গর্ভাকালীন সময়ে দ্বিগুন পুষ্টির প্রয়োজন।এ সময়ে গর্ভবতী মাকে ঘন ঘন খাবার খেতে হয়। গর্ভবতী মায়ের   দিনে ছয়  বার বা তারচেয়ে বেশি খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও রোজা থাকার কারণে গর্ভবতী মাকে দীর্ঘ সময় পানি পান না করে থাকতে হয়।যা গরমের ঋতুতে খুবই কষ্টকর। এছাড়াও রোজা রাখার ফলে গর্ভবতী মায়ের পানি শুন্যতা জনিত সমস্যার  সৃষ্টি হতে পারে। আর পানি শূন্যতা থেকে প্রসাবে ইনফেকশন, পিটারম লেবার, বাচ্চা নড়াচড়া কমে যাওয়া সহ নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া অনেক গর্ভবতী মায়েদের  রক্তশূন্যতা, প্রেসারের সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যার করনে ঔষধ সেবন করত হয়। তাই শেষে তিন মাস গর্ভবতী মায়ের রোজা না রাখাই ভালো।

গর্ভাবস্থায় রমজানে  যেসব খাবার গ্রহন করা প্রয়োজন

গর্ভবতী মায়ের রমজানে রোজা রাখার জন্য খাবার গ্রহনের  সঠিক  ধারনা নিতে হবে যেন মা বাচ্চার কোন সমস্যা না হয়। সেহেরি ইফতারে অবশ্যই বেশি বেশি  পানি খেতে হবে।গর্ভাবস্থায় আঁশযুক্ত, প্রটিন বেশী ফ্যাট সম্পন্ন খাবার গ্রহন করতে হবে। এসব খাবার গ্রহনে পরিপাক ভালো হয়।এছাড়াও ক্ষুধা কমানোর ক্ষেত্রে এই খাবার গ্রহন অনেক বেশি কার্যকরী। রোজা থাকা অবস্থায় ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া,  বাশি খাবার পরিহার করতে হবে। বেশি বেশি ফল খেতে হবে। এছাড়াও সেহেরিতে না খেয়ে রোজা রাখা যাবে না।এতে গর্ভবতী মা বাচ্চা উভয়ের জন্যই ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েরা রমজানে চিনি খাবার খেতে পারে। গর্ভবতী মাকে অবশ্যই খাবার গ্রহনের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে হাঁটা চলা করতে হবে।

গর্ভবতী মায়েরা সেহেরীতে যে সকল খাবার গ্রহণ করবে 

গর্ভবতী মায়েদের সেহরীতে দুধ এবং দুধের তৈরি খাদ্য গ্রহণ করা ভালো। যেমন- ফালুদা, দই,লাচ্ছি, পুডিং, টক দই,সেমাই ইত্যাদি খাবার গর্ভবতী মা শিশুর জন্য ভালো। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য চিনিযুক্ত খাবার কম খাওয়া ভালো।

গর্ভবতী মায়েদের প্রোটিন ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন -বাদাম, ডিম, মাছ,মাংস ইত্যাদি রকমের খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে  সেহেরিতে গ্রহন করতে হবে।

সেহেরিতে গর্ভবতী মায়েদের আঁশযুক্ত খাবার যেমন -মটর,  লাল আটার রুটি, ওটস, ডাল ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে। আঁশযুক্ত খাবারের জন্য

পুইশাক, কচুর শাক ইত্যাদি খাবার খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও ঢেরস,সজিনা, মোচা ইত্যাদি সবজিতেও আঁশ থাকে।

ভাজা খাবার সেহেরিতে পরিহার করতে হবে। এতে গ্যাস অথবা এসিডিটি দেখা দিতে পারে।

প্রচুর পরিমাণে আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবে।

গর্ভবতী মায়েরা ইফতারে যে সকল খাবার গ্রহণ করবে

গর্ভবতী মায়েদের ইফতারে পানি খাওয়ার পাশাপাশি পানির বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন রকম ফলের রস খেতে হবে। এছাড়াও ডাবের পানি গ্লুকোসও গর্ভবতী মায়েরা ইফতারে রাখতে পারে  

ইফতারে বিভিন্ন রকমের দেশীয় ফল যেমন -আপেল, কলা, তরমুজ ইত্যাদি ফল খাওয়া গর্ভবতি মায়ের জন্য ভালো।

নানা রকম দেশীয় সবজি খেতে হবে।তবে সবজির চপ করে এবং মাংসের সাথে সুপ করেও খাওয়া যায়।

ইফতারে প্রোটিনের চাহিদা পুরণ করতে মাছ, মাংস,ডিম ইত্যাদি খাবার চপ অথবা কাটলেট করে খেতে হবে। এতে ইফতারে গর্ভবতী মায়ের প্রোটিন এর চাহিদা পুরনে সাহায্য করবে।

বিপাক জনিত সমস্যার কারণে গর্ভবস্থায় আনারস পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে খাদ্য পরিপাকে সমস্যা হতে পারে।

গর্ভবতী মায়েদের ইফতারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করা যাবে না। এতে শরীরিক সুস্থতার থেকে বেশি শরীর অসুস্থ হতে পারে। কারন অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে অনেক সময় বমি হতে পারে।

গর্ভবতী মায়েরা  সন্ধ্যারাতে  যেসকল খাবার গ্রহন করবে 

গর্ভবতী মায়ের সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ গ্লাস পানি খাওয়া প্রয়োজন।

সন্ধ্যায় চিড়া, মুড়ি,রুটি ইত্যাদি খাবার গর্ভবতী মায়েরা গ্রহণ করতে পারে।

গর্ভবতী মায়েরা রাতের খাবারে ঢেঁকিছাঁটা চালের  ভাত, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস অল্প পরিমাণে খেতে পারে।

সন্ধ্যা রাতের খাবারের পর গর্ভবতী মায়েরা একগ্লাস দুধ পান করতে পারে। গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়া বাচ্চা মায়ের জন্য ভালো।

গর্ভবতী মায়ের চা বা কফি না খাওয়াই ভালো। কারন চা কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে পানির ঘাটতি এনে দেয়।

অতিরিক্ত মসলাদার খাবার পরিহার করতে হবে।

রমজানে গর্ভবতী মায়ের সতর্কতাঃ

) গর্ভবতী মায়েদের সেহেরী, ইফতার এবং রাতে খাদ্যতালিকায় সুষম খাবার প্রয়োজন।

)গর্ভবতী মাকে অবশ্যই শিশুর মুভমেন্টের দিকে খেয়াল রাখতে হবে কোন ধরনের জটিলতা দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারে।

)গর্ভবতী মাকে সবসময় গরম থেকে দূরে থাকতে হবে। সব সময় ঠাণ্ডা শীতল পরিবেশে থাকতে হবে।

)এ সময় মায়ের গর্ভবতী মায়ের উচিত কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া

)গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

)অনেক গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ

নিতে হবে।

)যে সকল গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি রয়েছে তাদের জন্য রোজা না রাখাই উত্তম। আর ক্ষেত্রে  নিয়ম করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

) রমজানে পানি কম খেলে রোজা রাখার কারনে অনেক সময় প্রসাবে ইনফেকশন জনিত সমস্যা দেখা যায়।এ সময় ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে।

 

               

Post a Comment

Previous Next