গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না ?

গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না? বিস্তারিত জেনে নিন-

গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না ?


রমজানে গর্ভবতী মায়েদের মনে যে প্রশ্নগুলো আসে তার মধ্যে প্রথম প্রশ্নই হল গর্ভাবস্থায় রোজা রাখতে পারবে কিনা?  দ্বিতীয়ত, গর্ভাবতী  মা সন্তানের কোন ক্ষতি হবে কিনা?  তৃতীয়ত,গর্ভবতী মা যদি রোজা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে কি কি নিয়ম মেনে চলবেন?  রমজানে গর্ভবতী মায়েদের এমন  অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

গর্ভ অবস্থায় রোজা রাখার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়ত কি বলে ?

ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক রোযা রাখা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ।তাই গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা নিয়ে চিন্তিত হতে হয়।ইসলামে বিভিন্ন আলোচনা থেকে জানা যায় যে গর্ভকালীন অবস্থায় রোজাকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। যদি গর্ভবতী মা নিজের শারীরিক সুস্থতা বোধ করে এবং কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে রোজা রাখতে পারে। আর যদি কোনো কারণে গর্ভবতী মা অসুস্থ বোধ করেন তাহলে তার রোযা রাখার প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে যে কোন সময়ে  সে  তার এই রোজাগুলো করে দিতে পারবে।

গর্ভকালীন রোজা রাখলে মা এবং বাচ্চার উপর কি প্রভাব পড়তে পারে ?

রোজা রাখার অর্থ বলতে আমরা বুঝি অনেক লম্বা সময় খাবার না খেয়ে থাকা। আর গর্ভবতী মায়ের রোজা থাকার ফলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। আমরা সকলেই হয়ত জানি যে গর্ভকালীন সময়ে  মায়ের  অতিরিক্ত পুষ্টির  প্রয়োজন  রয়েছে। অর্থাৎ বাচ্চা যেহেতু মায়ের থেকে কিছু পুষ্টি উপাদান নিয়ে নেয় তাই গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টির ঘাটতি থেকে যায় এবং এই ঘাটতিগুলোকে আমরা  পুষ্টি দিয়ে পূরন করে

থাকি।গর্ভাবস্থায় মা যদি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ থাকে এবং ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা অথবা কোনো প্রেসারের সমস্যা না থাকে তাহলে রোজা থাকলে   গর্ভবতী মা বাচ্চার ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।

 রোজা রাখার ক্ষেত্রে  গর্ভবতী মাকে কি কি বিষয় জানতে হবে ?

প্রথমেই আপনাকে যেটা করতে হবে তা হচ্ছে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে


ডাক্তার যদি আপনাকে টেস্ট করে বলে যে তার দিক থেকে কোন সমস্যা মনে হচ্ছে না তাহলে আপনি রোজা রাখতে পারেন।


রোজা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এমন যদি কোনো অসুখ না থেকে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে আপনি রোজা থাকতে পারেন।

এছাড়াও যদি আপনার এমন কোনো অসুখ না থাকে যেগুলোর জন্য আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম করে ওষুধ খেতে হয় তাহলে রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই।


যেমন ডায়াবেটিস থাকতে পারে সেক্ষেত্রে আপনার রোজা রাখতে সমস্যা হবে এবং দুপুরে যদি কোনো ঔষধ খাওয়ার নিয়ম থাকে সেক্ষেত্রে রোজা থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে ।

গর্ভাবস্থার কোন সময় রোজা রাখার জন্য উপযোগী ?

প্রথমেই আপনাকে দেখতে হবে আপনি গর্ভাবস্থার কোন সময়ে  আছেন। আমরা গর্ভকালীন সময় কে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করে থাকি।

১। প্রথম তিন মাস :

এ সময় মায়ের শরীরে  কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সময় গর্ভবতী মায়েদের মাথা ঘোরানো,  বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময়ে গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখাটা কষ্টকর হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রথম ৩ মাস যদি শারীরিক সমস্যা হয় তাহলে রোজা না রাখাই ভালো।

২।দ্বিতীয় তিন মাস :

এই সময়ে গর্ভবতী মেয়েরা সাধারণত একটু ভালো অনুভব করে কারণ তাদের বমি করার হার বা বমি বমি ভাব কমে যায় ।যেহেতুরোজা রাখা সাধারণত গর্ভবতী মায়ের শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে যসুতাং এ সময় যদি তার শরীরে কোন ধরনের সমস্যা না থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখতে পারেন ।আপনার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে কিনা সেটা জানার জন্য অবশ্যই একজন ডাক্তারকে দেখিয়ে তার পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখবেন ।

৩।তৃতীয় তিন মাস অথাৎ শেষ তিন মাস :

গর্ভ অবস্থায় শেষের তিন মাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং ঝুঁকিপূর্ণ সময় বলা যেতে পারে কারণ এই সময়ে বাচ্চার গঠন বৃদ্ধি পেতে থাকে তাই এ সময়ে মায়ের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা খুবই দরকার সুতরাং এই সময়টাতে রোজা না রাখাই ভালো । তবে একান্ত পক্ষে যদি কেউ রোজা রাখতে চায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে হয়

গর্ভবতী মায়েরা গরমের ঋতুতে কি রোজা রাখতে পারবেন ? 

গর্ভবতী মায়েদের গরমের ঋতুতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে বলা হয়। রোজা থাকার ফলে পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরমে গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের যদি প্রসাবে ইনফেকশন জনিত সমস্যা হয় তাহলে রোজা না রাখাই ভালো হব। যথাসম্ভব শীতল ঠান্ডা পরিবেশে থাকতে হবে। একান্ত পক্ষে যদি, কেউ রোজা রাখতে চায় তাহলে সেহেরি ইফতারে অবশ্যই প্রচুর পানি খেতে হবে।

রমজানে গর্ভবতী মা ইফতার এবং সেহেরীতে কি খাবে ?

গর্ভবতী মায়ের ইফতার :

রমজানে খাবারের বিষয়ে আমরা সাধারণত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার যেমন পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা ইত্যাদি বেশি পরিমাণে থাকি। কিন্তু গর্ভবতী মা কি এই খাবারগুলো  খাবেন?

গর্ভবতী মায়ের  অবশ্যই  এসকল খাবারগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। গর্ভবতী মা ইফতারে টক দই,বিভিন্ন রকমে ফল, শরবত,ফলের জুস ইত্যাদি খাবার খেতে হবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে। তবে চিনিযুক্ত শরবত না খাওয়াই ভালো। কারন হঠাৎ সুগার বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের সেহেরী :

সেহরিতে গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার গুলো খেতে হবে। প্রোটিন আঁশযুক্ত খাবার বেশি পরিমানে খেতে হবে। আয়রনের চাহিদা পূরনে লাল আটার রুটি খেতে হবে। এছাড়াও সেহেরিতে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। মা বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিকর খাদ্যই  ইফতার সেহরিতে রাখতে হবে।

গর্ভাবস্থায় না খেয়ে রোজা রাখলে কি হয় ?

গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়মিত প্রোটিন ফ্যাট যুক্ত খাবার খেতে হবে। এতে বাচ্চা এবং মা সঠিক পুষ্টি পাবে। কিন্তু কোনভাবে যদি মায়ের শরীরে পুষ্টি ঘাটতি থেকে যায় তাহলে মা বাচ্চা উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। রোজা রাখার কারনে যদি খাবারে অরুচিজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে রোজা না রাখাই ভালো। তাই রোজায় গর্ভবতী মাকে অবশ্যই সেহরি, ইফতারে এবং সন্ধ্যা রাতের খাবার ঠিক মতো  খেতে হবে।

রমজানে গর্ভবতী মাকে কি কি বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে ?

  • গর্ভ অবস্থায় রোজা রাখতে হলে অবশ্যই ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার একদম এড়িয়ে চলতে হবে ।
  • গর্ভাবস্থায় কোনো কারণে যদি  বাচ্চার নড়াচড়া কম মনে হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে। 
  • এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। তাই রোজা রাখার অবস্থায় বিশ্রাম নিতে হবে। 
  • গর্ভাবস্থায় যেহেতু গ্যাস পরিপাকে সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই অবশ্যই প্রোটিন সমৃদ্ধ আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। 
  • এছাড়াও  প্রসাবের সমস্যা জনিত কারন গুলো এড়াতে ইফতার থেকে সেহেরী পর্যন্ত অন্তত পক্ষে ১৫ থেকে ২০ গ্লাস পানি খেতে হবে।

আরও পড়ুন:

শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে বুঝবেন কিভাবে ?

গর্ভাবস্থায় জ্বালাপোড়া দূর করার উপায়

যে কোনো রকমের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই রোজা থাকা বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে  ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

               

Post a Comment

Previous Next