গর্ভধারণে মানসিক চাপ যেসব প্রভাব ফেলতে পারে

 

গর্ভধারণে মানসিক চাপ যেসব প্রভাব ফেলতে তা বিস্তারিত জেনে নিন-

গর্ভধারণে মানসিক চাপ যেসব প্রভাব ফেলতে পারে


বর্তমান সময়ে পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীরা কর্মব্যস্ততার সাথে জড়িত। তাই প্রত্যাহিক জীবনের বেশিভাগ সময়ই বিভিন্ন রকম চাপের মধ্যে কাটাতে হয়। এছাড়াও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণেও অনেকে মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। প্রতিদিনই এখন অনেক কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। মানসিক চাপের কারনে নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। যার মধ্যে একটা  হলো প্রজনন বা গর্ভধারনে  জটিলতার সৃষ্টি। বেশি ভাগ মানুষের  মধ্যেই মানসিক চাপ জনিত কারণে গর্ভধারনে জটিলতা দেখা যায়। যা দাম্পত্য কলহের সুচনা ঘটায়  এবং সন্তান জন্ম দিতে বাধা সৃষ্টি করে।

মানসিক চাপের ফলে গর্ভধারনে  কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে ? 

শরীর মনের জন্য হুমকি সরূপ অবস্থাই মানসিক চাপ। মানসিক চাপ শরীরে মনের  ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম রোগের সূচনা হয়। মানসিক চাপ আপনার শরীরের সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। যা থেকে মাথা ব্যাথা, উচ্চ রক্ত চাপ, অস্বভাবিক হৃদস্পন্দন, ঘুমের সমস্যা,দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার মতো নানান জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও প্রজনন জনিত সমস্যার ক্ষেত্রেও মানসিক চাপ ক্ষতিকর  প্রভাব ফেলে।

গর্ভধারনে মানসিক চাপ যে প্রভাব ফেলে ?

 যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পাওয়া:

 বেশি ভাগ সময় দম্পতিদের মধ্যে মানসিক চাপের ফলে পারিবারিক, সামাজিক, ব্যাক্তিগত,যৌন জীবন সহ সাধারণ শান্তি হারিয়ে যায়।এর ফলে পুরুষ নারীর মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা কমতে থাকে। ফলে গর্ভধারনের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমে যায়।এছাড়াও অনেক দম্পতি কর্মজীবনে নিজেদের ব্যস্ত রাখার ফলে মানসিক অবসাদ তথা চাপের সৃষ্টি হয়। একে অন্যকে সময় দিতে না পারার কারনে যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পায়।

 অনিয়মিত ঋতুচক্র :

মানসিক চাপের ফলে অনেক মেয়েদের ঋতু চক্রে অনিয়ম দেখা দেয়। ফলে সন্তান ধারনের সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া  ভ্যাজাইনার সংক্রামনও বেড়ে যায়।

হরমোন নিঃসরণ কমে যাওয়া :

মেয়েদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে ফিল গুড ডোপামিন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। ফলে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে প্রোল্যাকটিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রোল্যাকটিন হরমোন যৌন হরমোনকে না বাড়িয়ে আরও কমাতে থাকে।যার ফলে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে তা গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে 

শুক্রানু মান সংখ্যায় কমে যাওয়া :

পুরুষদের মধ্যে অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে শারীরিক অবসাদের সৃষ্টি হয়। ফলে পুরুষ শরীরে টেস্টোস্ট্রোন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। ডিম্বাণুর সাথে নিষিক্ত হওয়ার জন্য গুনগত মানের যে শুক্রানুর প্রয়োজন তা বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়াও শুক্রানুর সংখ্যাও কমে যায়।

 আরও জানুন :

শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে বুঝবেন কিভাবে ?

কিভাবে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী দেখে নিন লক্ষন সমূহ

ডিম্বানু নিঃসরণে বাধা :

মস্তিষ্কে থাকা হাইপোথ্যালামাস যৌন হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যা ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু নিঃসরনে সাহায্য করে। মানসিক চাপের ফলে যৌন হরমোনের কার্য ক্ষমতা হ্রাস পায়, এতে ডিম্বাশয় থেকে পরিপক্ব ডিম্বানু নিঃসরনে বাধা পায়  ফলস্বরূপ গর্ভধারনে সমস্যা হয়।

স্বাভাবিক সম্পর্কের অনুপস্থিতি :

অনেক দম্পতির মধ্যে একে অপরের প্রতি উদাসীনতা, বিরক্তি ভাব,ক্ষিপ্ততা ইত্যাদি আচার-আচরণ  প্রকাশ পায়। ফলে একে অপরের মধ্যে মানসিক  হতাশার সৃষ্টি হয়। যা স্বামী- স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ককে বাধা প্রদান করে এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ফলে গর্ভধারনে অনেক বড় নেতিবাচক সমস্যার দেখা দেয়।

গর্ভধারনে ক্ষতিকারক  মানসিক চাপ  থেকে বাঁচার উপায় ?

.পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম

প্রতিদিন অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। যদি স্বামী স্ত্রী উভয়ই কোনো কর্মের  সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে অবশ্যই উভয়ের সুবিধা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন। বিশ্রামের ফলে কাজে এক ঘেয়েমিতা দুর হয় এবং মন মেজাজ প্রফুল্ল থাকে। ফলে দাম্পত্য জীবনের নানা সমস্যা খুব সহজেই দূর করা যায়।

.বাইরে ঘুরতে যাওয়া

অনেক দম্পতি অতিরিক্ত কাজের চাপে একে অপরকে সময় দিতে পারে না। তাই সপ্তাহে অন্তত পক্ষে একদিন  দুজনে একত্রে বাইরে ঘুরতে যান। বাইরে ঘোড়ার ফলে একাকিত্বতা দুর হবে।এছাড়াও প্রতিদিন সকালে বা বিকালে অবসর সময়ে স্বামী স্ত্রী একত্রে হাঁটুন। এতে শরীর মন উভয়ই ভালো থাকে এবং মানসিক চাপ খুব সহজেই দূর করা যায়।

.বিভিন্ন সমস্যা শেয়ার করা

অনেক সময় স্বামী অথবা স্ত্রী যেকোনো জটিল সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। ফলে একে অপরের সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা দেখা যায়। তাই যদি কোনো কারনে মানসিক হতাশা বা চাপের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয় তাহলে একে অপরের সাথে সমস্যাটি শেয়ার করুন। এতে অতিরিক্ত চাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও একে অপরের পরামর্শ অনুযায়ী মানসিক চাপের  সমাধান করা যায়।

. আনন্দ করুন

মাঝে মধ্যে স্বামী স্ত্রী অথবা পরিবারের সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যান, রাতের খাবারের আয়োজন করুন, শপিং করতে যান।ফলে মানসিক চাপ দূর হবে। এছাড়াও পারিবারিক দাম্পত্যিক কলহ দূর করা সম্ভব হবে।

.পরমতসহিষ্ণুতা

স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে একে অপরের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।অনেক সময় একে অন্যের মতকে জোর পূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয়। বেশিভাগ সময় আমাদের সমাজের মেয়েদের ক্ষেত্রে ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। ফলে মেয়েরা দাম্পত্য জীবনে মানসিক চাপে ভোগেন। ফলে তাদর মধ্যে গর্ভধারনে অনীহা বা অনিচ্ছার সৃষ্টি হয়। তাই অবশ্যই একে অপরের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।

.নিজেকে সময় দেওয়া

পারিবারিক বিভিন্ন কারনে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। তাই সব সময় নিজেকে অন্যের প্রয়োজনে ব্যস্ত না রেখে নিজের জন্য আলাদা সময় বের করুন। নিজের সঙ্গে নিজের অনুভূতি সম্পর্কে খোলামেলা হওয়ার চেষ্টা করুন এতে চাপ কমে।

.নিয়মিত ব্যায়াম করা

শরীর মনকে প্রফুল্ল করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন হাঁটা, সাঁতার কাটা, যোগ ব্যায়াম,শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে মন ভালো থাকে। ফলে মানসিক চাপ থেকে খুব সহজেই নিজেকে দুরে সড়িয়ে রাখা যায়। এছাড়াও গর্ভধারনের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূরীকরণে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

.সঠিক খাবার খাওয়া

মানসিক চাপ থেকে রক্ষা করে এমন কিছু খাবার রয়েছে। যেমন- চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার মানসিক চাপ কিছুটা কমায়। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খান। কারন সঠিক খাবারের অভাবে শরীর দূর্বল হয়ে গেলে মানসিক চাপ আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই মানসিক চাপ গর্ভধারনের জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খান।

.একে অপরকে সময় দেওয়া:

স্বামী স্ত্রী একে অপরেকে পর্যাপ্ত সময় দিন। একে অপরের সাথে বিভিন্ন সুন্দর মূহুর্ত উপভোগ করুন। এতে মানসিক চাপ থেকে দুরে থাকা যায়। এছাড়াও গর্ভধারনে মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব  থেকে দুরে থাকা যায়। 

১০. পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান। এতে মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দুরে রাখা যায়। ঘুমের কারণে শারীরিক মানসিক অবসাদ দুর হয়। ফলে কাজের স্পৃহা বৃদ্ধি পায় সহজেই চাপ কমে যায়।

আমাদের মন্তব্য :

খুব সহজেই মানসিক চাপ থেকে  রক্ষা পাওয়া যায়।  গর্ভধারণের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই শারীরিক মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে তাই সব সময়  মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ, কাজ অভ্যাস থেকে দুরে থাকতে হবে। স্বামী- স্ত্রীর একে অপরের ইচ্ছা মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।ফলে দাম্পত্য জীবনের অশান্তি দূর হবে। এছাড়াও গর্ভধারনে সমস্যা সৃষ্টি করায় মানসিক চাপের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিমানে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে হবে।এছাড়াও যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে মানসিক ভারসাম্য জনিত সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই মানসিক ডাক্তারের পরামর্শে  চিকিৎসা  নিতে হবে।

               

Post a Comment

Previous Next