শিশু তথা বাচ্চারা খেতে না চাইলে করনীয় ?

কম বেশি আমরা সবাই জানি যে,শিশুর শারীরিক বা মানষিক বেড়ে ওটার পেছনে খাবার খুবই বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।খাবারের বিভিন্ন পুষ্টিগুন শিশুর বিকাশে সাহায্য করে। আর এই জন্য শিশুর সাথে খাবারের  সম্পর্ক ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে।

শিশু তথা বাচ্চারা খেতে না চাইলে করনীয় ?


শিশুর যত্নের সাথে সাথে প্রত্যেক মায়েরা খাবারের বিষয়ে অনেক  সচেতন। আজকাল  দেখা যায় শিশুদের বিরুদ্ধে তাদের মায়েদের প্রথম   প্রধান  অভিযোগ হচ্ছে, তারা খায় না বা  খেতে চায় না। আর শিশুর এই  কম খাওয়া নিয়ে তো  মায়েদের চিন্তার  আর কোন শেষই থাকে না মায়েরা যদি  পারতেন তাহলে হয়তো সারাদিনই তার  শিশুকে খাওয়াতেই থাকতেন। সাধারণত দেখা যায় যে দুই থেকে তিন বছরের বয়সের  শিশুদের  মধ্যে এই কম খাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

ইদানীং দেখা যায় প্রায় বাচ্চায় খাবার খেতে চায়না।তাই বাচ্চাদের খাবার না খেলে করনীয় জানতে হলে তার আগে প্রত্যেক মায়ে এটা জানা উচিত যে তার বাচ্চা কেন খেতে চায় না। এটা জানতে পারলে হয়তো খাবার নিয়ে আর কোন চিন্তা থাকবে না।

শিশুর খাবার না খাওয়ার কারন কি ?

বিভিন্ন চিকিৎসকগন  বলেন, শিশুদের খাবার কম  খাওয়ার ফলে বাবা -মায়েদের যে  চিন্তা  রয়েছে তা একেবারেই অমূলক নয়। কিন্তু যে কারনে শিশুদের খাবারের প্রতি অনিহা আসতে পারে সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে শিশুকে খাওয়াতে হবে , তা হচ্ছে:

শিশুর বয়স অনুযায়ী খাবারের চাহিদা:

ছোট শিশু ধরেরন একটি দুই বছরের শিশুর শরীর কতটুকু হতে পারে যে, সে  অনেকটা খাবার একবারেই খেয়ে নিতে  পারবে , আবার তার শারীরিক অ্যাক্টিভিটিই বা কেমন? এগুলো বিচার বিবেচনা করেই শিশুর খাবার এর পরিমাণ ঠিক রাখতে  হবে।  ধরেন শিশুর বয়স এক বছর আপনি তাকে এক প্লেট ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করছে,এটা কি সম্ভব কখনো?এই জন্য শিশুর বয়স অনুযায়ী তাকে খাবার দিতে হবে।এতে করে শিশু খেয়ে নেবে অন্যদিকে তার অতিরিক্ত খাবারের চাপও হবেনা।

 হজমশক্তি ব্যহত হওয়া :

অনেক  সময় দেখা যায় শিশুকে আপনি যে খাবারটি দিচ্ছেন তা যথাযথ হজম হচ্ছে না। , যেমন দুধকে আমরা সকলেই পুষ্টিকর খাবার ভেবেই  শিশুকে খাইয়ে থাকিআবার খিচুড়িতে বিভিন্ন  ধরনের ডাল,সবজি, মাংস দিয়ে রান্না করে থাকি,শিশুকে  নিয়মিত ডিম খাওয়াচ্ছেন, বিভিন্ন ধরনের  ফল বা ফলের জুস এই ধরনের  খাবারের থেকে শিশুর মাঝে মাঝে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।আর শিশুর হজমে সমস্যা হলে তার  খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়।

সময় :

ঘড়ির সময় ধরে ধরে শিশুকে  খাবার বেশি  খাওয়াতে চান এমন অনেক মা- আছেন। তবে মনে রাখতে হবে শিশুটির যদি তখন ক্ষুধা না থাকে, তবে সে খেতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। 

জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা:

শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন না এমন কোন মা নেই, এটা খুবই কমন বিষয় সকল মায়েদের কাছে।  অনেক সময় শিশু খেতে না চাইলেই শুরু হয় তাকে  একপ্রকার জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা ।এতে করে খাবার খাওয়া ব্যাপারে  শিশুর ভিতর একপ্রকার  ভয় কাজ করতে থাকে। ক্ষুধা না লাগার পরে তাকে আগে আগে  খাবার খাওয়ানোর কারনে সে নিজে থেকে আর ক্ষুধা অনুভব করতে পারে না। 

আরও পড়ুন:

নবজাতকের যত্নের কি কি ভুল আপনার করা উচিত নয়?

শিশুকে বুকের দুধ ছাড়াতে করনীয়

খাবারের বিরতি:

শিশুদেরকে  প্রতিবার খাওয়ানোর ভিতর পর্যাপ্ত পরিমাণ  সময়ের ব্যবধান রাখতে হয়। কেননা  আপনার শিশুর গঠন এবং পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে তার  খাবারের চাহিদা শিশুদের  খাওয়ানোর সময় অবশ্যই শিশুর ক্ষুধার উপর নির্ভর করে তা  ঠিক করতে হবে, কখনোই বড়দের সাথে  ঘড়ি ধরে তুলনা করা যাবে না  

বাইরের মুখরোচক খাবার :

শিশুদের বাইরের সকল প্রকার মুখরোচক খাবারের উপর আকর্ষণ থাকে। অতিরিক্ত পরিমানে  তেল-মশলা দিয়ে তৈরি এসকল খাবার এর ফলে  অনেক সময় স্বাদ নিয়ন্ত্রণেরযে অনুভূতি থাকে তা  দুর্বল করে তোলে আর তাই  খাবারের স্বাদ না পাওয়ার ফলে অনেক শিশু  খাবার খেতে চায় না।

শিশুদের একই মেন্যু :

আমরা বড়রা যে এত সচেতন শিশুদের প্রতি , কিন্তু একটা বিষয় আমরা খেয়াল করিনা যে, একই খাবার আমাদের যেমন প্রতিদিন খেতে ভালো লাগে না তেমনি শিশুদের অবশ্যই ভালো লাগবেনা একই খাবার বারবার বা প্রতিদিন খেতে। তাতে সে যতই পুষ্টিকর খাবার  হোক না কেন।

শারীরিক অসুস্থতা :

শিশুর শারীরিক অসুস্থতা থাকলে খাবারের প্রতি অনিহা জন্মায়।অনেক শিশুর জন্মের পর পর বা অসুস্থতার কারনে দীর্ঘ সময় ধরে  নাকের  ভেতর নল দিয়ে খাবার দেওয়া হয় অথবা মুখে খাবার বন্ধ হলে, কৃত্রিম শ্বাসের কারনে  গলার ভেতর  নল দেওয়া থাকে। এতে করে  মুখে এবং গলায় ঘা হয়ে যায়। বিশেষ করে নবজাতকের খাবার গেলার অথবা চোষার মত  ক্ষমতা কমে যায়।

এছাড়াও খাবার কিনবা অন্যকিছু শ্বাসনালীতে যদি আটকে  গিয়ে বিষম খায় বা শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে পরবর্তীতে ভয়  থেকে  শিশুর খাদ্যের প্রতি অনীহা তৈরি হয়ে যায়। কখনো কখনো আবার মুখের ভেতর  বা জিভে তে ঘা হলে কিনবা আঘাত পেলে, অনেক সময় যাবত  অসুস্থ থাকলে এমনকি কড়া এন্টিবায়োটিক খাওয়ালে, কেমো পেলে, শিশুর জিভে সাদা ময়লা  বা ফাংগাস জমে থাকা। এসকল ক্ষেত্রে শিশু আগের মত খাবারের স্বাদ পায় না ফলে খাদ্যে অনীহা জন্মাতে থাকে।কখনো কখনো  খেলে ব্যথা পাওয়া  অথবা  খাবার গিলতে কষ্ট হলেও শিশু অল্প খেয়ে আর খায় না।

বাড়তি খাবারের চাপ :

অনেক সময় দেখা যায়  মায়েরা শিশুকে তিনবেলা বাড়তি খাবার  খাওয়ান, ওনারা ভাবেন  হিসেবে তো   শিশুকে  কমই খাওয়াচ্ছেন। তবে  এর বাইরে শিশুকে  যে বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে তা  অনেকে খাবার বলে  মনে করেন না। এতে করে  বুকের দুধ খাওয়ার পর  শিশুর যে পেট ভরে থাকে, তারপর  বাড়তি খাবার দিলে  শিশু খেতে না- চাইতে পারে, এটা মায়েরা  বুঝতে পারেন না তখন  কিন্তু  খাদ্যে অনীহা বলে ধরা যাবে না। এছাড়াও  সবার খাবারের চাহিদা  তুলনামূলক এক রকম হয় না কারো কারো তিন চামচ খাওয়াতে পেট ভরে যায়, আবার কারো  কারো এক প্লেটেও পেট ভরবে না এমনো হয়।

বাচ্চারা খেতে না চাইলে করনীয় ---

.ছোট শিশুর ক্ষেত্রে ঘুম থেকে  উঠেলেই খিচুড়ি অথবা অন্য  কোন খাবার খেতে না দিয়ে আগে তাকে বুকের দুধ খেতে দিন। আগে বুকের দুধখাওয়ান তারপর  দুই-তিন ঘণ্টা পরে অন্য খাবার খেতে দিন।

.যে খাবার  শিশুকে খাওয়াবেন তা অবশ্যই তার পছন্দসই খাবার খাবার হতে হবে চেষ্টা করবেন তার পছন্দের খাবার দিতে

.খাবার নিয়ে কখনোই জোর করবেন না।যতটুকু খেতে চায় ততটুকুই দিন।

. বয়সভেদে  প্রত্যেক শিশুর খিদের  সময় পার্থক্য হতে পারে তাই আপনার শিশুকে নিয়ম কিনবা সময়সূচি অনুযায়ী  খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। তাকে কি খাওয়াচ্ছেন, এর থেকে বড় কথা হচ্ছে তাকে  কখন খাওয়াচ্ছেন!

. সাধারণত বাচ্চার বয়স - বছর হলে  তাকে - ঘন্টা বিরতি রেখে খাওয়ানো উচিত।আর - বছর বয়স হলে  - ঘন্টা বিরতি দিন।

.খাবার নিয়ে জোর করা যাবে না।

. শিশুকে বাইরের খাবার থেকে দূরে রাখুন।তবে  একেবারেই  যে দেবেন না,তেমন কিন্তু নয়। যখন সে বড়দের সাথে বাইরে যায় তখন বাইরের খাবার খেতে পারে তবে খেয়াল রাখতে হবে  শিশুর জেদ পূরন করতে আলাদা ভাবে প্রতিদিন তার জন্য বাইরের খাবার কখনোই আনবেন না।

 . শিশুদের খাবার সময়ে টিভি অথবা মোবাইলে কার্টুন,গান ইত্যাদি দেখানো বন্ধ করুন। এতে করে সে অভ্যস্ত হয়ে যায। তাছাড়া অনেক সময় টিভি দেখা  শিশুর স্বাস্থ্যকর জন্য ক্ষতিকর

 .শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের দুজনেই মনোযোগী হন।কেননা বাবা-মায়ের মনোযোগ  কমে গেলেই শিশুরা খাওয়া কমিয়ে দিতে থাকে।

ব্যস্ততার কারণে অনেক মা হয়তো তার শিশুকে ঠিকমত সময় দেয় না বা দিতে পারেন না। মায়েদের এই  ব্যস্ততা শিশুর উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। সে ভাবে হয়তো শুধু খাওয়ানোর  সময়টাতেই মা কাছে থাকবে। তাই শিশু খেতে বেশি সময় নেয় বা বিভিন্ন বায়না ধরে সময় পার করে

১০. শিশুকে নিয়ম করে কৃমির ওষুধ খাওয়ান।

 ১১. শিশুকে একই  খাবার প্রতিদিন  দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যেমন ধরেন প্রতিদিন ডিম সিদ্ধই না দিয়ে ডিম দিয়ে তৈরি  বিভিন্ন ধরনের খাবার  ডিম পোস, ডিমের, পুডিং ইত্যাদি দিতে পারেন। অন্যদিকে দুধ না দিয়ে দুধের তৈরী  সেমাইপায়েস ইত্যাদি দিতে পারেন। যদি সে ফল খেতে না চায় তবে তাকে ফল দিয়ে  কাস্টার্ড করে করে দিতে পারেন।

 ১২. খাবার পরিবেশনের ভিন্নতা অনেক সময় কাযে দিতে পারে।  তাই রঙিন  পাত্রে  খাবার দিয়ে বিভিন্ন ভাবে সাজিয়ে দিন।

 ১৩.শিশুকে   খেলাধুলার পর্যাপ্ত সময় দিন।এতে করে বাচ্চার ক্ষিদে বাড়ে।

 ১৪. শিশুকে পরিবারের সকলের সাথে খেতে বসান। তাতে সে সকলের খাওয়া দেখে উৎসাহ পাবে এবং নিজে খাবে।

আমাদের মন্তব্য :

উপরিউক্ত বিষয়গুলো মানার পরেও যদি শিশু খেতে না চায় তাহলে তাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিন।কেননা না খেয়ে থাকলে শরীরে পুষ্টির অভাব হবে এতে করে শিশুর শারীরিক মানষিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।

                

Post a Comment

Previous Next