নিয়মিত ব্যায়াম করুন ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন


    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

                                                                         নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে

আমরা কি দিন দিন অলস এবং অক্ষম লোক হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে যাচ্ছি? শারীরিক পরিশ্রম বা  নিয়মিত ব্যাম  আমাদের দেহের জন্য কতটা জরুরী তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? আমরা কি জানি নিয়মিত ব্যায়াম  ডায়াবেটিস  নিয়ন্ত্রণ করে? কখনো কি ভেবে দেখেছি ডায়াবেটিস রোগটি কেন পৃথিবী জুড়ে হু হু করে বেড়েই চলছে? আসুন আমরা এই বিষয়ে আজকে কিছু আলোচনা করি।

গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান বিশ্বে  প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা ডায়াবেটিস রোগের কারণ হিসেবে মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কে দায়ী করেছেন। এবং তারা আরও বলেছেন, ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।  

আমাদের শারীরিক পরিশ্রম এবং হাঁটার প্রবণতা অনেক কমে যাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম একটি রোগ। এই কারণে চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত  ব্যাম বা শারীরিক পরিশ্রম  করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ডায়াবেটিস কী? What is diabetes?

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস হল এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। সব মানুষের শরীরে ইনসুলিন আছে এই ইনসুলিন যখন ঠিকমত কাজ করতে পারে না অথবা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা যখন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। এরকম লক্ষণ যখন দেখা দেয় তখন সাধারণত চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধারণা করে থাকেন।

ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে অন্য একটি লেখায়। বিস্তারিত জানার জন্য “ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি? ডায়াবেটিস এবং তার প্রতিরোধ কিভাবে করবেন?” লেখাটি পড়তে পারেন।

ব্যায়াম বা শরীর চর্চা কী?

ব্যায়াম বা শরীর চর্চা হল  যে কোন ধরনের শারীরিক কার্যক্রম। ব্যায়াম শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং এর ফলে শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইপ - ডায়াবেটিস এর রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

আরো পড়ুন .....

ওজন বাড়ার ফলে শরীরের কি কি ক্ষতি হতে পারে ?

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস হলে আপনার শরীরের যে সব অঙ্গ-প্রতঙ্গের ক্ষতি হতে পারে ?

হার্ট অ্যাটাক কেন হয় এবং এর লক্ষণ গুলো কি কি ?


দেহের জন্য শরীর চর্চা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এক কথায় যদি বলি যে, কেন শরীরের জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ তাহলে বলতে হবে- দেহকে সুস্থ্য, সবল এবং সচল রাখতে শারীরিক ব্যায়াম অপরিহার্য ।আমার প্রতিদিন যে খাবার গ্রহণ করি তা শরীরে শক্তি উৎপন্ন করে। যখন আমরা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করি তখন এই শক্তি ব্যায় হতে পারে না। ফলে দেহে তা প্রভাব বিস্তার করে। আর যখন আমরা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করি তখন দেহে উৎপন্ন শক্তি ব্যায় হয়ে শরীরকে রাখে সুস্থ, সবল এবং চাঙ্গা করে। ফলে মনও থাকে উৎফুল্ল এবং দেহে রোগ সহজেই বাসা বাঁধতে পারেন না ।

সপ্তাহে কয় দিন এবং কতক্ষণ করে ব্যায়াম করা প্রয়োজন?


চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং সপ্তাহের প্রায় অধিকাংশ দিনই ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।

যদি একবারেই ৩০ মিনিট ব্যায়াম না করা যায়  তাহলে ১০ মিনিট করে দিনে তিনবার ব্যায়াম করতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তিনবার খাওয়ার পূর্বে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট করে ব্যায়াম করা যেতে পারে। শারীরিক ব্যায়াম প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৩০ মিনিট করে করার কথা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। তবে আপনার হাতে যদি সময় থাকে তাহলে আরো বেশি সময় ব্যায়াম করবেন।

কখন ব্যায়াম করা উচিৎ নয়?

আমাদের ব্যায়াম করার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানা উচিত, নিয়ম কানুন না মেনে ব্যায়াম করলে উল্টে শরীর খারাপ হতে পারে। 

এছাড়াও চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, 

ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনন্দিন কাজখাদ্য গ্রহণের সময়রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ব্যায়াম করার সময় নির্ভর করে থাকে। তারা কখন ব্যায়াম করতে নিষেধ করেন, তা নিচে দেওয়া হলো। খাওয়ার পরপরই ব্যায়াম করা উচিত নয়।

খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ৩০০ মিলি গ্রাম বা খালি পেটে ২৫০ মিলি গ্রামের ওপর যদি থাকে তাহলে ব্যায়াম করা যাবে না।

তাপমাত্রা যখন বেশি থাকে অর্থাৎ যখন প্রচণ্ড রোদ থাকে তখন  ব্যায়াম করা উচিত নয়।কারণ হল রোদে ব্যায়াম করলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যেতে পারে এর ফলে  পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। 

কোন কোন সময় ব্যায়াম করতে হয়?


কোন কোন সময় ব্যায়াম করতে হয়?
                                  
 দিনে কিংবা রাতে যে কোন সময় শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করতে পারেন। অনেকেই ঘুম থেকে উঠে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

অনেকে আবার সকালে অথবা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করা ভালো মনে করে থাকেন। আপনার সুবিধা মতো আপনি যেকোন সময় ব্যায়াম করতে পারেন।

মনে রাখবেন, ব্যায়াম করার জন্য আপনার শরীর ঠিক আছে কিনা তা একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চেক করবেন।


ডায়াবেটিস রোগিদের শরীর চর্চা কেন জরুরী?

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতেডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম ওষুধের থেকে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

গবেষণায় দেখা গেছেডায়াবেটিসের যে সব ওষুধ তার থেকে ব্যায়াম রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।তাই, ডায়াবেটিস রোগিদের শরীর চর্চা ব্যায়াম অত্যান্ত জরুরী।

ডায়াবেটিস হলে ব্যায়াম করার সময় কি কি লক্ষ রাখতে হয়?

 ব্যায়াম স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালোকিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে কোনো বিশেষ জটিলতা আছে কি না তা দেখার জন্য ডাক্তার দেখিয়ে তার পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম শুরু করা উচিত। 

 চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ দের মতে, শুরুতে অল্প ব্যায়াম অল্প করে শুরু করা উচিতএরপর ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে।

 প্রতিদিন অন্তত পাঁচ মিনিট করে বাড়াতে হবে এবং সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০ মিনিট ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের জন্য ভাল  ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যত বেশি ব্যায়াম করবেনতত বেশি তাদের শরীরে  শক্তি ক্ষয় হতে থাকবে এবং এর ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক  সহজ হবে শুরুতে ব্যায়ম করার সময় কিছুক্ষণ অল্প ব্যায়াম করে নিতে হবে এবংব্যায়াম শেষ করার সময়  হঠাৎ করে থেমে যাওয়া যাবে না ব্যায়ামের শেষের পাঁচ মিনিট আস্তে আস্তে কম করে ব্যায়াম করতে হবে তারপর থেমে যেতে হবে একে  ‘কুল ডাউন’ বলা হয়ে থাকে।

নিয়মিত ব্যায়াম করার সুবিধাগুলো কি কি?


চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস সহ অনেক জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম করলে নিম্নের সমস্যা গুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

 নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

 নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা কমাতে সাহায্য করে।

 নিয়মিত ব্যায়াম করলে শক্তি খরচ হতে থাকে এর ফলে শরীরের ওজন কমতে থাকে এবং শরীরে চর্বির পরিমাণ অনেক কমে যায়।

 ব্যায়াম করার ফলে প্যানক্রিয়াসের বেটা সেল থেকে উৎপন্ন ইনসুলিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

 ব্যায়াম ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ফলে শরীরে অল্প যা ইনসুলিন তৈরি হয়, তাতেই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এতে করে বাড়তি ওষুধের দরকার নাও পড়তে পারে।

 নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের  উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

 ব্যায়াম করার ফলে রক্তের HDL বা ভালো কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং LDL বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়

 নিয়মিত ব্যায়াম করলে ঘুম ভালো হয়।

 নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর হয় এবং শরীর মন সতেজ প্রফুল্ল থাকে।

 ব্যায়াম হাড় হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং হাড়ের জোড়াগুলো সচল রাখতেও ব্যায়াম অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

 নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

 যে সব ব্যক্তিরা নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন, সে সব ব্যক্তিদের তাঁদের একই বয়সের লোকদের থেকে বয়স কম দেখায়।

 নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে যৌনক্ষমতা ঠিক থাকে।

 
কি কি ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে?


যে সব ব্যায়াম করলে শরীর থেকে ঘাম ঝরে ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ধরনের ব্যায়াম করতে হবে তাহলে ডায়াবেটিস রোগের জন্য অনেক উপকার হবে।চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা সাধারণত সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করার কথা বলে থাকেন। 

তার মানে হল সপ্তাহে প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে হবে। কিন্তু ডায়াবেটিসের প্রকার এবং রক্তের  সুগারের পরিমাণের উপরে ব্যায়াম করার সময় বিভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত যেসব ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে উপকার হয় তা নিম্নে দেয়া হলো-

কার্ডিয়ো ব্যায়াম

কার্ডিয়ো ব্যায়ামের ক্ষেত্রে যে সব ব্যায়াম রয়েছে সেগুলো হল-

সাঁতার:

কারও বাড়িতে যদি পুকুর থাকে বা সাঁতার  কাটার ব্যাবস্থা থাকে তাহলে প্রতিদিন অন্তত  দিনে আধ ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারেন। এটা শরীরের পক্ষে ভালো।

দৌড়:

বাড়ির আশে পাশে যদি কোন খালি মাঠ থাকে সেখানে দৌড়ালে উপকৃত হতে পারেন। অথবা বাড়ির খোলা ছাদে বিশ মিনিটের মত দৌড়াতে পারেন।

খেলার মাধ্যমে:

ব্যায়াম করতে যদি ভাল না লাগে তাহলে ক্রিকেট, টেনিস বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলা আছে ওগুলো খেলা যেতে পারে।  এসব খেলায় ভালই ঘাম ঝরে। এই জন্য ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী।

লাইট জগিং:

যদি বাড়ির সামনে কোন মাঠ থাকে সেখানে অথবা বাড়ির ছাদে কম গতিতে অনেক ক্ষণ ধরে লাইট জগিং করা যেতে পারে।

স্পট জগিং:

বাসা থেকে বের হওয়ার কোন উপায় না থাকলে বাসার মধ্যে স্পট জগ করা যেতে পারে।

যোগব্যায়াম

আমাদের শরীরে যে স্ট্রেস হরমোন থাকে সেটিও ডায়াবেটিস রোগের জন্য সমান ভাবে দায়ী। জন্য ক্লান্তি এবং হতাশা দূর করতে মন শান্ত রাখা খুব প্রয়োজন। 

সকালে ঘুম থেকে উঠে যোগব্যায়াম করা যেতে পারে।  কপালভাতি এবং  প্রাণায়াম ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের স্ট্রেস অনেকটাই কেটে যেতে পারে। সূর্যপ্রণাম এবং মেডিটেশন করলেও উপকৃত হতে পারেন।

 

ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও নিয়মিত ব্যায়াম করে  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন :

নিয়মিত ব্যায়াম করে  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন

           ছাব :সংগৃহিত

যখন বয়স পঞ্চাশের দিকে বা এর উপরে যায় তখন দৈনন্দিন  ব্যায়াম এবং খাবারে পরিবর্তন আনতে হবে। এই বয়সে সাধারণত হাঁটুর সমস্যা দেখা দেয়। এবং এর সাথে  বয়সের কারণে অনেকেরই শরীরের কাজ করার ক্ষমতা ক্রমেই লোপ পেতে থাকে। 

এই শারীরিক কাজ করার ক্ষমতা না থাকার কারণে, অনেকেই ঠিকমত দৌড়াতে, জগিং ইত্যাদি ভারী কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ করতে পারেন না হাঁটুর ব্যথার জন্য সময় খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের আশ্রয় নিতে হবে। 

তবুও নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং  হাঁটাচলা করতে পারলে শরীর মন শান্ত থাকে ফলে শরীরের  স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণ থাকে এর ফলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে কি ক্ষতি হতে পারে?

যদি কোন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী ইনসুলিন নেন, এবং তার সাথে ডায়াবেটিসের ওষুধ নিয়মিত খেয়ে থাকেন, তাহলে এই অতিরিক্ত ব্যায়াম করার প্রভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ  মারাত্নক ভাবে কমে যেতে পারে। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ দের মতে এই রোগকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়ে থাকে।

 

হাইপোগ্লাইসেমিয়া কি ও কিভাবে বুঝবেন আপনার হয়েছে কিনা?

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ দের মতে, কোন ব্যক্তির হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে সাধারণত ক্ষুধা লেগে থাকে, মাথা ঘোরে, নাড়ির গতি বেড়ে যায়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচন্ড ক্লান্তি অনুভব করেন, শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে, মাথা ধরে এই সব লক্ষণ গুলো দেখা দেয়।

রক্তে সুগারের পরিমাণ খুব বেশি কমে গেলে রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। যাদের আগে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পুনরায় এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে তারা খুব সহজেই বুঝতে পারেন।

 

 হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে রক্ষা পাবেন কিভাবে?

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

 যদি কোন ব্যক্তি ইনসুলিন নেন তাহলে ব্যয়াম করার পূর্বে অব্যশই তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যায়াম করার সময় তার সাথে অল্প পরিমাণ গ্লুকোজ, চিনি অথবা মিষ্টি জাতীয় ফলের রস রাখতে হবে। যখন শরীর খারাপ লাগবে তখন সাথে সাথেই খেয়ে নিতে হবে।

 ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে বায়াম শুরু করার পূর্বে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দেখে নিয়ে তারপর ব্যায়াম শুরু করতে হবে। যদি রক্তে সুগারের পরিমাণ ১০০ মিলিগ্রামের নিচে হয় তখন অল্প কিছু খাবার খেয়ে তারপর ব্যায়াম শুরু করতে হবে।

 কোন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি অনেকক্ষণ ধরে ব্যায়াম করতে হয় তাহলে সে ব্যায়াম শেষ করার পূর্বেও কিছু খাবার খেয়ে নিতে পারেন।

 ব্যায়াম শেষ করার পর পুনরায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে।  এর ফলে আপনার শরীরে কি পরিমাণ গ্লুকোজ কমে গেছে সেই সম্পর্কেও ধারণা পেতে পারেন।

ব্যায়াম শুরু করার আগে অথবা ব্যায়াম করার সময় কিংবা পরে একটু বেশি করে পানি খেয়ে নিতে হবে।

 রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করার যন্ত্র কিনে নিতে পারেন, এর ফলে আপনার শরীরে প্রতিদিন কি পরিমাণ সুগার বাড়ছে বা কমছে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। 


রোগ প্রতিরোধে ব্যায়াম বা শরীরর চর্চার কি ভুমিকা রাখে? 

শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধে অন্যতম কার্যকর ভুমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত আপনি যদি শরীর চর্চা করেন তাহলে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতা ঠিক থাকবে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা কেন প্রয়োজন? দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বৃদ্ধি পায় বা কি করলে বৃদ্ধি পায়? সেই বিষয়ে অন্য একটি লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

প্রয়োজনে জেনে নিন....

ব্রেন স্ট্রোক( Brain Stroke) কী কারণে হয়? ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ বা উপসর্গ কি ক?

ব্রেন ক্যান্সার (Brain Cancer) কী ? দেহে কোন ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় ?


শেষকথাঃ

ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ এবং এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে এবং এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরবর্তীতে আরও জটিল রোগ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করার মাধ্যমে রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আশাকরি, এই লেখাটি পড়ে শররি চর্চা বা ব্যায়াম করা গরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। লেখাটি ভাল লাগলে কিংবা আপনার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেখে দিন। প্রয়োজনের সময় যাতে সহজেই খুঁজে নিতে পারেন।


Post a Comment

Previous Next