যে অভ্যাস গুলোর কারণে আপনার ভুড়ি জমতে পারে ?

 

কোন অভ্যাস গুলোর কারণে আপনার ভুড়ি জমতে পারে ? সম্পর্কে জানতে হলে লেখাটি বিস্তারিত পড়ুন

                                যে অভ্যাস গুলোর কারণে আপনার ভুড়ি জমতে পারে



পেটে অতিরিক্ত মেদ বা ভুঁড়ি জমা আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনে মারাত্মক ভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। একবার যদি ভুঁড়ি বাড়তে শুরু করে তাহলে সেটা পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ মেদ কমানোর জন্য অনেক বেশি ধৈর্য্য এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। আর যার জন্য সবাই পক্ষে পেটের চর্বি কমানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে আমরা যদি ভুঁড়ি বাড়ার কারণ গুলো সম্পর্কে আগে জেনে নেই তাহলে বিষয় গুলোকে আগে থেকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যাবে। এতে করে সহজে আমাদের পেটে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারবে না।  কিন্তু পেটে চর্বি জমার আসল কারণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। যার জন্য প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত স্থুলতায় ভুগা ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য আগে আমাদেরকে ভুঁড়ি জমার কারণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখতে হবে।

এখন আসুন আমরা পেটের মেদ জমার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই,

 

কোন অভ্যাস গুলোর কারণে আপনার ভুঁড়ি জমতে পারে ?

যে সব অভ্যাসের কারণে আপনার পেটে ভুঁড়ি জমতে পারে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার খেলে :

কিছু কিছু ফ্যাট আছে যা আপনার শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম অস্বাস্থ্যকর একটি ফ্যাট হল ট্রান্স ফ্যাট। ট্রান্স ফ্যাটের ভিতরে হাইড্রোকার্বন চেনের ডাবল বন্ড থাকে। যা আমাদের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে আমাদের গ্রহণ করা খাদ্যবস্তুকে ভাঙ্গার জন্য যে এনজাইম গুলো কাজ করে তা এই ডাবল বন্ড হাইড্রোকার্বনকে ভাঙতে পারে না। এর ফলে এই হাইড্রোকার্বন রক্তে থেকে যাবে এবং আপনার পেটের মেদ জমাতে সাহায্য করবে। আর ট্রান্স ফ্যাট শুধুমাত্র আপনার পেটের চর্বিকেই বাড়াবে না, এর সাথে ওজন মারাত্মক ভাবে বেড়ে যাবে।  আর ওজন বেড়ে গেলে পরবর্তীতে আপনি বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যেমন : ডায়াবেটিস,  ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

বাজারের প্যাকেটজাত পণ্য, বেকারির খাবার, বাইরের ভাজাপোড়া প্রভৃতিতে ট্রান্স ফ্যাট অনেক বেশি থাকে। তাই আপনাকে এসব খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এর বদলে ঘরের তৈরী স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

আরও পড়ুন-

রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে গেলে করণীয় কি 

ব্যায়াম বা শরীরচর্চা না করলে :

আপনি যদি ঠিক মত এক্সারসাইজ বা শরীরচর্চা না করেন তাহলে আপনার শরীরের যে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমা থাকে তা শরীরের ভিতরেই থেকে যায়। এর ফলে আপনার ওজন অনেক বেশি যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই ভুঁড়ি কমানোর জন্য আরাম অলসতার জীবন থেকে আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাহলে দেহে জমা সব অতিরিক্ত ফ্যাট ঘামের মাধ্যমে আপনার শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। এর ফলে আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। আর যদি আপনার শরীরচর্চা করতে ইচ্ছা না করে তাহলে আপনি নিয়মিত হাঁটা-চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এতে সমান উপাকার পাবেন। তাই ভুঁড়ি কমানোর জন্য আরাম অলসতার জীবন থেকে আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং শরীরচর্চা হাঁটা-চলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে :

অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করার ফলে আপনার ভুঁড়ি বেড়ে যেতে পারে। কারণ অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় গুলোতে কোন প্রকার পুষ্টি গুণ থাকে না কিন্তু উচ্চ মাত্রার ক্যালোরি থাকে যা বেশি গ্রহণ করার ফলে আপনার ভুঁড়ি ওজন দুটোই বেড়ে যেতে পারে। জন্য পেটের মেদ কমাতে কিংবা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হলে আপনাকে অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য যেমন : মদ, কোল্ড ড্রিংস প্রভৃতি গ্রহণ করা বন্ধ করে দিতে হবে। এর বদলে বেশি বেশি করে পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটি আপনার পেটের মেদ কমিয়ে শরীরের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং এর পাশাপাশি আপনাকে সতেজ রাখতে সহায়তা করবে।

আরও জানুন:

ওজন বাড়ার ফলে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে ? 

কিভাবে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী দেখে নিন লক্ষন সমূহ

মানসিক চাপ বেড়ে গেলে :

আপনার ভিতরে যখন মানসিক চাপ বা স্ট্রেস এবং উদ্বেগ বেড়ে যাবে তখন আপনার  শরীরে কর্টিসল হরমোন তৈরি হতে পারে। এর ফলে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাবে। আর যখনই আপনার বিপাক প্রক্রিয়া ঠিক মত কাজ করবে না বা বিপাক কমে যাবে তখনই আপনার মেদ বা ভুঁড়ি জমার সম্ভাবনা মারাত্মক ভাবে বেড়ে যেতে পারে। যার জন্য আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। আর মানসিক চাপ শুধুমাত্র আপনার ওজনকেই বাড়ায় না, এর জন্য আপনার শরীরে অন্যান্য জটিল রোগ যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন প্রভৃতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই আপনি যদি নিজেকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে অবশ্যই নিজেকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে হবে।  

পড়ুন:  Insomnia বা নিদ্রাহীনতা আপনার শরীরে মারাত্নক প্রভাব ফেলতে পারে 

চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে :

চিনির যেমন উপকারী দিক আছে তেমন ক্ষতিকর দিক আছে। আপনি যদি মাত্রা অতিরিক্ত চিনি খান তাহলে আপনার মেদ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। কারণ চিনিযুক্ত খাবার এবং চিনির পানীয় গ্রহণ করার ফলে এর ভিতরে যে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থাকে। আর এই কার্বোহাইড্রেট গুলো কঠিন অবস্থায় থাকে বলে এগুলোকে সহজে ভাঙতে যায় না। এর ফলে আপনার দেহে চর্বি জমতে থাকে। যার জন্য আপনার ভুঁড়ি বাড়বে এবং সেই সাথে ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

তাই আপনাকে চিনি খেতে হলে পরিমাণে কম অথবা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় খেতে হবে। তাই পেটের মেদ কমানোর জন্য আপনাকে সব সময় স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। এতে করে আপনার মেদ কমবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে

ফাইবার  জাতীয় খাবার  কম খেলে :

আমাদের দেহে চর্বি জমার অন্যতম প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে একটি হল ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার কম খাওয়া। বর্তমান সময়ে আমরা ফাইবার জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে জাঙ্ক ফুড বেশি খাই। কিন্তু এই জাঙ্ক ফুড অস্বাস্থ্যকর খাবার। এই খাবার খেলে আপনার শরীরে কোন ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে না। এর ফলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগতে পারে তখন আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলতে পারেন। আর এই সব খাবার উচ্চ ক্যালরি যুক্ত হওয়ার কারণে বেশি খেলে আপনার শরীরে মেদ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আপনার শরীরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকে তাহলে আপনার পাচনতন্ত্রে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

তাই আপনি যদি ভুঁড়ি দূর করতে চান তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। উচ্চ আঁশ যুক্ত খাবারের মধ্যে সবুজ শাকসবজি, মটরশুটি, মসুর ডাল, আস্ত শস্য, বাদাম, ওটস এবং হাইড্রেটিং ফল প্রভৃতি খাবার গুলো আপনাকে বেশি করে খেতে হবে। এই সব খাবার খেলে আপনার দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকবে। এর ফলে আপনার ক্ষুধা কম লাগবে এবং শরীরে মেদ জমতে পারবে না।

 পর্যাপ্ত ঘুম না হলে :

নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের অভাব বর্তমান সময়ে একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে। নিদ্রাহীনতার সাথে পেটের মেদ জমার সম্পর্ক রয়েছে। আপনার ঘুম যখন কম হবে তখন এই কম ঘুমের প্রভাব আপনার কর্টিসল হরমোনের মাত্রাকে অনেক কমিয়ে দিতে পারে। আর যখন রকম হবে তখন আপনার ক্ষুধা বেশি লাগবে এবং উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাবে। এর ফলে আপনার পেটে ভুঁড়ি জমবে এবং ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে।

জিনগত ত্রুটির কারণে :

অনেক সময় শরীরের জিনগত কোন ত্রুটির কারণে আপনার শরীরে মেদ জমতে পারে। আপনার দেহের ওজন এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন কাজ করে যার নাম হল লেপটিন। গবেষণায় বলা হয়েছে যে, আমাদের দেহে কিছু স্পেসিফিক জিন আছে যে গুলো এই লেপটিন হরমোনের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে আর হরমোনের কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটলে তখন এটি আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এমতাবস্থায় আপনি বেশি খেয়ে ফেলেন এবং আপনার পেটের ভুঁড়ি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে।

খাবার খাওয়ায় অনিয়ম করলে :

আমরা অনেকেই ওজন ঠিক রাখার জন্য সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে এক বারে দুপুরে খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকি। আবার অনেকে রাতের খাবার বাদ দেয়। রকম খাবারে অনিয়ম করলে অর্থাৎ এক বেলার খাবার বাদ দিয়ে যদি আপনি অপর বেলায় খাবার খান তখন আপনার ক্ষুধা বেশি লাগে। তখন একবারে আপনি অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলেন। এতে করে আপনার খাওয়া খাবার গুলো ঠিক মত হজম হয় না। আর খাদ্যবস্তু ঠিক মত হজম না হলে আপনার পেটে মেদ জমার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাই ভুঁড়ি কমানোর জন্য  আপনাকে কোন বেলায় খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না।

সাদা চাল, সাদা আটা খেলে :

আমরা সবাই না জেনেই সাদা চাল, সাদা আটা খেয়ে থাকি। কিন্তু এই চাল আটা খাওয়ার সাথে আমাদের পেট ভুঁড়ি জমার সম্পর্কে রয়েছে। কারণ সাদা চাল, সাদা আটা তৈরি করার সময় ফাইবার বা আঁশসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ফেলে দেয়া হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাদা চাল সাদা আটায় প্রক্রিয়াজাত শস্যদানা বেশি দেয়া থাকে। জন্য এই খাবার গুলো দ্রুত হজম হবে। এর ফলে আমাদের রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। পেটের ভুঁড়ি কমানোর জন্য আপনি লাল চাল বা ঢেঁকীছাঁটা চাল, লাল আটা খেতে পারেন। এটি আপনার পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করবে।

রাতের খাবার খাওয়ার পরপর ঘুমিয়ে পড়লে

আপনি যদি দেরি করে রাতের খাবার খান এবং খাওয়ার পরপরই যদি আপনার শুয়ে পড়ার অভ্যাস থাকে তাহলে আপনার হজমে গন্ডগোল হতে পারে। আর খাদ্যবস্তু হজম না হলে আপনার পেটে চর্বি জমার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। 

তাই পেটের মেদ ঠিক রাখার জন্য আপনাকে রাতের খাবারটা তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলতে হবে। খাবার খাওয়ার পর অন্তত আধা ঘন্টা পর্যন্ত আপনি হাঁটাহাঁটি করবেন। এতে করে আপনার খাদ্যবস্তু হজম হয়ে যাবে এবং পেটে ভুঁড়ি জমতে পারবে না।

 

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,

পেটে অতিরিক্ত ভুঁড়ি বা মেদ জমা খুবই অস্বস্তিকর একটি বিষয়। পেটে মেদ জমলে শুধু চেহারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয় না, এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আপনি যদি পেটের ভুঁড়ি জমার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে উপরিউক্ত খারাপ অভ্যাস গুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে এবং সব সময় সচেতনতা বজায় রেখে জীবনযাপন করতে হবে

Post a Comment

Previous Next