শিশুর ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঝাঁকুনি কেন হয় এবং কী করবেন?
প্রায় প্রতিটি বাবা-মা একসময় না একসময় তাদের শিশুকে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চমকে ওঠতে দেখেছেন। এই দৃশ্যটি অনেকের মনেই চিন্তা বা উদ্বেগ সৃষ্টি করে। আজকের এই ব্লগপোস্টে আমরা এই ঘটনার পেছনের বিজ্ঞানসম্মত কারণগুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।
ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনির কারণ:
- হিপনিক জার্ক: বিজ্ঞানীদের মতে, ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঝাঁকুনি দেওয়াকে হিপনিক জার্ক বলে। ঘুমের একটি পর্যায়ে মস্তিষ্ক শরীরকে আরামদায়ক অবস্থায় রাখার জন্য সংকেত পাঠায়। কিন্তু কখনও কখনও এই সংকেতগুলো ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে এবং মস্তিষ্ক মনে করে যে শরীর পড়ে যাচ্ছে। ফলে শরীর স্বাভাবিকভাবেই ঝাঁকুনি খায়।
- অন্যান্য কারণ: কখনও কখনও অতিরিক্ত ক্যাফিন, তামাক, অথবা কিছু ওষুধের প্রভাবেও ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে। আবার, দিনের বেলায় অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়লে বা মানসিক চাপ থাকলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে:
শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি দেখা দেওয়ার কারণ আরও কিছু হতে পারে:
- বৃদ্ধি: শিশুরা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তাদের স্নায়ুতন্ত্রও পরিবর্তনশীল থাকে। এই পরিবর্তনগুলি ঘুমের প্যাটার্নে প্রভাব ফেলতে পারে।
- স্বপ্ন: শিশুরা স্বপ্ন দেখার সময়ও ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি খেতে পারে।
কখন চিন্তিত হওয়া উচিত ?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি খাওয়া কোনো গুরুতর সমস্যার লক্ষণ নয়। তবে, যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- ঝাঁকুনির সাথে জ্বর, মাথা ঘোরা, অথবা শ্বাসকষ্ট হওয়া
- দিনের বেলায় অতিরিক্ত তন্দ্রা
- ঘুমের সময় অন্য কোনো অস্বাভাবিক আচরণ
কী করবেন ?
- শান্ত থাকুন: ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি খাওয়া স্বাভাবিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি আপনার শিশুর ঘুমের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হন, তাহলে অবশ্যই একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
শিশুরা ঘুমের মধ্যে কান্না করে কেন
বাচ্চা ঘুমের মধ্যে কান্না করার অনেক কারণ থাকতে পারে। এটা একদম স্বাভাবিক এবং বাবা-মায়েরা প্রায়ই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। কেন বাচ্চা ঘুমের মধ্যে কাঁদতে পারে তার কিছু সাধারণ কারণ হল:
- খারাপ স্বপ্ন: বড়রা যেমন খারাপ স্বপ্ন দেখে কাঁদে, ছোট বাচ্চারাও দেখতে পারে। বিশেষ করে যখন তারা কোন নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে বা কোন নতুন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
- শারীরিক অস্বস্তি: কোন শারীরিক সমস্যা যেমন দাঁত গজানো, পেট ফোলা, কানের সংক্রমণ ইত্যাদির কারণে বাচ্চা ঘুমের মধ্যে অস্বস্তি বোধ করে এবং কাঁদতে পারে।
- ঘুমের ব্যাঘাত: ঘুমের চক্রে কোন ব্যাঘাত ঘটলে বাচ্চা ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে পারে।
- ভয়: অন্ধকার বা একা থাকার ভয় বা কোন অন্য ভয়ের কারণে বাচ্চা ঘুমের মধ্যে কাঁদতে পারে।
- ক্ষুধা: কখনো কখনো বাচ্চা খুব ক্ষুধার্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে পারে।
বাচ্চাকে শান্ত করার জন্য আপনি কিছু কাজ করতে পারেন
- শান্ত পরিবেশ: ঘুমের আগে বাচ্চাকে শান্ত পরিবেশ দিন। কোমল সঙ্গীত, গল্প শোনানো বা হালকা ম্যাসাজ দিতে পারেন।
- আরামদায়ক পরিবেশ: বাচ্চার ঘুমের জায়গাটি আরামদায়ক এবং নিরাপদ নিশ্চিত করুন।
- নিয়মিত ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে এবং উঠতে শেখানো বাচ্চার জন্য ভালো।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি বাচ্চার কান্না অতিরিক্ত হয় বা অন্য কোন লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন:
- বাচ্চার কান্নাকে অবহেলা করা উচিত নয়।
- বাচ্চার কান্নার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
- ধৈর্য ধরে বাচ্চাকে সান্ত্বনা দিন
উপসংহার:
শিশুর ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি খাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার পেছনের বিভিন্ন কারণ খুঁজে পেয়েছেন। যদি আপনার শিশুর ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি খাওয়া আপনাকে চিন্তিত করে, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।